আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর ১১ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো চালু করা যায়নি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের নতুন এনজিওগ্রাম মেশিন। ফলে সেবাগ্রহীতাদের সারি বাড়ছে। হৃদরোগ বিভাগের চিকিৎসকরা বলছেন, মেশিনটি স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। ঢাকা থেকে টিমের সদস্যরা এই কাজ তদারকি করছেন। মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে আনা মেশিনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ এখনো এসে পৌঁছায়নি। এছাড়া মেশিনের সাথে থাকা ১০টি রেডিয়েশন প্রটেক্টিভ অ্যাপ্রনও দেয়নি মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে মেশিনটি কবে নাগাদ চালু হবে এ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রয়োজন না থাকা সত্তে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার নিজ এলাকা মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একসঙ্গে দুটি এনজিওগ্রাম মেশিন বরাদ্দ দেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে পর্যন্ত মেশিন দুটি বাক্সবন্দি ছিল। তবে পরবর্তীতে রোগীর চাপ বিবেচনায় এর মধ্যে একটি মেশিন চমেক হাসপাতালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে মেশিনটি আসার পর পুরোপুুরি স্থাপন করার আগেই গত ১২ ডিসেম্বর উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম।
চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচ বছর ধরে জাপানের শিমার্জু ব্র্যান্ডের একটি মেশিন দিয়ে টিপিএম, পিপিএম, এনজিওগ্রাম, পেরিপাইরাল এনজিওগ্রাম ও রক্তনালীতে রিং স্থাপনের কাজ চলছে। অতিরিক্ত চাপের কারণে গত সেপ্টেম্বরে মেশিনটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। ফলে কাজ বন্ধ থাকে পাঁচ দিন। এছাড়া ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে একইভাবে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্রায় দুই সপ্তাহ মেশিনটি বন্ধ থাকে। পরবর্তীতে মেশিনটির সরবরাহকারী কোম্পানির প্রতিনিধিরা পিকচার টিউব স্থাপন করে সচল করেন। এছাড়া ২০২১ সালের শেষের দিকে অপর একটি এনজিওগ্রাম মেশিনের পিকচার টিউব নষ্ট হয়ে যায়। মেশিনটির সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান জানায়, এটি মেরামত করতে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা প্রয়োজন হতে পারে। সেটি আর মেরামত করা হয়নি। সেটি এখনো বিকল অবস্থায় পড়ে আছে।
হৃদরোগ বিভাগের চিকিৎসকরা জানান, হৃদরোগ বিভাগে এনজিওগ্রাম মেশিন সংকটের সমাধান হলে কাজের গতি দ্বিগুণ হবে। দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় চট্টগ্রামে হৃদরোগের প্রকোপ বেশি। হৃদরোগের চিকিৎসায় উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ প্রতিবেশী দেশ ভারত, সিঙ্গাপুর ও ব্যাংককসহ বিশ্বের উন্নত দেশে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। তবে এক্ষেত্রে গরিব ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের একমাত্র ভরসা চমেক হাসপাতাল। চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা এবং বৃহত্তর চট্টগ্রামের কয়েক কোটি মানুষ এই হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল।
চমেক হাসপাতাল হৃদরোগ বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. নূর উদ্দিন তারেক আজাদীকে বলেন, এনজিওগ্রাম মেশিন স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। তবে কিছু টেকনিক্যাল কারণে মেশিন চালু করতে একটু বিলম্ব হচ্ছে। বিশেষ করে যন্ত্রাংশ এবং অ্যাপ্রন এখনো এসে পৌঁছায়নি। এসব বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।












