উদ্বোধনের দুই বছরের মধ্যে হস্তান্তর হতে যাচ্ছে কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের কাজ

সবদিক খতিয়ে দেখতে আসছেন মহাপরিচালক

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৯ অক্টোবর, ২০২৫ at ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ

উদ্বোধনের দুই বছরের মাথায় অবশেষ দোহাজারীকক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের কাজ (কক্সবাজার রেল লাইন ও আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর আইকনিক স্টেশন ভবন) রেলওয়ের কাছে হস্তান্তর করতে যাচ্ছেন প্রকল্প পরিচালক। বাংলাদেশ রেলওয়ের বহুল গুরুত্বপূর্ণ দোহাজারীকক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের মার্চে। এর আগেই প্রকল্পের সকল কাজ রেলওয়ের কাছে হন্তান্তর করা হচ্ছে। তবে প্রকল্পের কাজ হস্তান্তরের আগে বিশেষ করে আধুনিক দৃষ্টি নন্দন স্থাপত্যে নির্মিত কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশন, দোহাজারীকক্সবাজার ১০২ কিলোমিটার আধুনিক রেল লাইন এবং দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত অপর ৯টি আধুনিক রেল স্টেশন ভবনসহ যাবতীয় কাজ সরেজমিনে দেখতে আসছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি)। আগামী শনি ও রোববার (১১ ও ১২ অক্টোবর) রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন কক্সবাজার আইকনিক স্টেশন ভবনসহ প্রকল্পের সকল কাজ দেখার জন্য আসছেন বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বহুল প্রতীক্ষিত ১০২ কিলোমিটার দীর্ঘ দোহাজারীকক্সবাজার রেললাইনটি উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পর ওই বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে বাণিজ্যিকভাবে ঢাকাকক্সবাজার ট্রেন চলাচল শুরু হয়। তার এক মাস পর ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে চালু হয় পর্যটক এক্সপ্রেস। গত বছর চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রুটে চালু হয়েছে প্রবাল ও সৈকত এক্সপ্রেস। এরপর থেকেই দেশের মানুষের কাছে ট্রেনে করে দেশের প্রধান পর্যটন নগরী কক্সবাজার ভ্রমণের আকর্ষণ দিনদিন বাড়তে থাকে। বর্তমানে রেলওয়ের সবচেয়ে লাভজনক রুট হচ্ছে কক্সবাজার রেলপথ।

রেলওয়ের মহাপরিচালকের দেখতে আসার ব্যাপারে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) এবং দোহাজারীকক্সবাজার রেল লাইনের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. সবুক্তগীন আজাদীকে বলেন, দোহাজারীকক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্পের মেয়াদ আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ায় আমরা রেলওয়ের কাছে হস্তান্তর করব। হস্তান্তরের আগে কাজের সবদিক দেখার জন্য আগামী শনি ও রোববার ডিজি মহোদয় আসবেন। উনি কাজের সবদিক দেখার পর আমরা রেলওয়ের কাছে হস্তান্তর করব। আধুনিক দৃষ্টি নন্দন স্থাপত্যে নির্মিত কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনকে ঘিরে দেশের রেলযাত্রীদের অনেক স্বপ্ন। সারাদেশ থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক কঙবাজার বেড়াতে যান। তাদের স্বপ্ন থাকে দেশের একমাত্র পাঁচতলা বিশিষ্ট আইকনিক ভবনকে ঘিরে। এই ভবনের সৌন্দর্য অবলোকন করা, ঘুরে বেড়ানো, এই স্টেশন ভবনে যাত্রীদের যে সব সুযোগ সুবিধা থাকার কথা সে সব উপভোগ করা। কিন্তু পর্যটন নগরী কঙবাজারে ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ার ২ বছরেও দৃষ্টিনন্দন আইকনিক ভবনের নিচতলায়ও পুরোদমে অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। বারবার সময় নেয়ার পরও আইকনিক ভবনের কাজ শেষ করতে পারেনি প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বিশ্বমানের পাঁচতলা বিশিষ্ট এই স্টেশন ভবনটি চালু হলে এখানে যাত্রীদের জন্য থাকবেথাকাখাওয়ার তারকা মানের হোটেল, রেস্টুরেন্ট, শপিংমল, কমিউনিটি সেন্টার, যাত্রীদের মালামাল রাখার লকার, শিশু যত্ন কেন্দ্র, মসজিদসহ অত্যাধুনিক সব ধরনের সুযোগসুবিধা। যদি কেউ চায়রাতের ট্রেন ধরে সকালে কঙবাজার পৌঁছে মালামাল স্টেশনে রেখে সারাদিন সমুদ্রসৈকত বা পর্যটন স্পট ঘুরে রাতে আবার ফিরে যেতে পারবেন। কিন্তু কঙবাজারে ট্রেন চালু হওয়ার ২ বছরেও আইকনিক স্টেশন বিল্ডিংটি চালু করতে না পারায় পর্যটন নগরী কঙবাজারে ট্রেন যাত্রীরা এই স্টেশনের অনেক সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দেশের দূরদূরান্ত থেকে শত শত পর্যন্ত এই স্টেশন দেখতে এসে হতাশ হয়ে আবার ফিরে যাচ্ছেন।

অবশেষে আগামী ডিসেম্বরে প্রকল্প কর্মকর্তারা রেলওয়ের কাছে বহুল আলোচিত কঙবাজার রেল লাইন, আইকনিক স্টেশন বিল্ডিং ভবনসহ সকল হস্তান্তর করতে যাচ্ছে। কঙবাজার আইকনিক ষ্টেশন ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২১৫ কোটি টাকা। রেল ভবনের এক কমর্ককর্তা জানান, কাজ শেষ হলে আইকনিক স্টেশনের নিচতলা এবং দ্বিতীয় তলায় রেলওয়ের অপারেশনাল কাজ চলবে। উপরে তৃতীয় তলায় শপিংমল, ৪র্থ তলায় তারকা মানের হোটেল, ৫ম তলায় কমিউনিটি সেন্টার পরিচালনার জন্য প্রাইভেট খাতে লিজ দেয়ার চিন্তা ভাবনা চলছে। কারণ হোটেল, শপিংমল এবং কমিউনিটি সেন্টারের আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে হবে। তারকা মানের হোটেল, শপিংমল এবং কমিউনিটি সেন্টার পরিচালনার মত আমাদের রেলের এত স্টাফ নেই। আন্তর্জাতিক মান যাতে বজায় থাকে এই কারণে প্রাইভেট খাতে লিজ দেয়ার ব্যাপারে উর্ধ্বতন মহলে চিন্তা ভাবনা চলছে। লিজ দেয়া হলে এর মান বজায় থাকবে। এই ভবনের আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে কঙবাজার আইকনিক রেল স্টেশন ভবনের হোটেল, শপিংমল এবং কমিউনিটি সেন্টার বেসরকরিভাবে টেন্ডারে পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদের ইন্তেকাল, আজ জানাযা
পরবর্তী নিবন্ধজিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করলেন খালেদা জিয়া