নগরের পশ্চিম বাকলিয়ায় একই প্রকল্পের আওতায় দুটো ব্রিজ নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছিল গত ২৩ জুলাই। সৈয়দ শাহ রোডের পিডিবি অফিস সংলগ্ন বির্জা খালে এবং রসুলবাগ আবাসিক এলাকা সংলগ্ন ডাইভার্শন খালে এ দুটো ব্রিজ নির্মাণের কথা। উদ্বোধনের পর রসুলবাগের ব্রিজের কাজ শুরু হয় এবং বর্তমানে কাজও চলমান আছে। কিন্তু সৈয়দ শাহ রোডের কাজ শুরুই করেনি ঠিকদারি প্রতিষ্ঠান।
কাজ শুরু না করার কারণ হিসেবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলরা বলছেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন জায়গা বুঝিয়ে না দেয়ায় কাজ শুরু করতে পারছেন না তারা। তবে সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বশীলরা বলছেন, ‘একটি পক্ষ চাচ্ছে না ব্রিজ হোক। পক্ষটি সেখানে নিজেদের জায়গা রয়েছে দাবি করছেন। তাই বিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।’ স্থানীয়রা জানিয়েছেন, একসময় বাশের সাঁকো ছিল সেখানে। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় কর্পোরেশন। দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে ঠিকদারও নিয়োগ করে। কিন্তু কাজ শুরু না হওয়ায় হতাশ তারা। তাদের প্রশ্ন বিরোধ থাকলে ঠিকাদার নিয়োগ হয়েছে কিভাবে?
চসিকের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ব্রিজ দুটো নির্মাণে ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর দরপত্র আহ্বান করে চসিকের প্রকৌশল বিভাগ। চলতি বছরের ১৫ মে চার কোটি ৭০ লাখ ৩৪ হাজার টাকায় মেসার্স কাশেম কনস্ট্রাকশনকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। ডাইভার্শন খালের উপর ব্রিজটি ১১ দশমিক ৫০ মিটার ও সৈয়দশাহ রোড বিদ্যুৎ অফিস সংলগ্ন বীর্জা খালের উপর ব্রিজটির দৈর্ঘ্য হবে ১২ মিটার। দুটোই হবে আরসিসি গার্ডার ব্রিজ। গত ২৩ জুলাই তৎকালীন সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন ব্রিজটির উদ্বোধন করেন। এসময় পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ কে এম আরিফুল ইসলাম ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফারহানা পারভীন উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, ব্রিজ নির্মাণ সিটি কর্পোরেশন উদ্যোগ নেয়ার পর ২২ জুন রাতে বিদ্যুৎ অফিস সংলগ্ন ব্রিজের জায়গার পূর্ব পাশে অজ্ঞাত লোকজন দেয়াল তুলে দেয় বলে সিএমপি কমিশনারকে লিখিত অভিযোগ দেন স্থানীয়রা। ২৭ জুলাই ভ্রাম্যমাণ আদালতে পরিচালনা করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী দেয়াল অপসারণ করে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় সিটি কর্পোরেশন। এর ব্রিজের কাজ করার জন্য সেখানে মালামালও নিয়ে আসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কাজ শুরুই করেনি তারা। গতকাল সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, সেখানে একটি বেড়া দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। একটি ভাঙা টেবিলও পড়ে আছে সেখানে। একপাশে ইট ও পাথর পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
শাহীন নামে এক পথচারী জানান, এটি মূলত রসুলবাগ ও সৈয়দ শাহ রোডের সংযোগ সড়ক। সড়কটি এলাকার লোকজনের চলাচলের অন্যতম রাস্তা। সড়কে একটি বাশের সাঁকো ছিল। এলাকার মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে সিটি কর্পোরেশন ব্রিজ নির্মাণে টেন্ডার করেছে। সাবেক মেয়র উদ্বোধন করলেও কেন কাজ করছে না বুঝতে পারছি না।
এ বিষয়ে ঠিকাদার শাহেদ সাকি দৈনিক আজাদীকে বলেন, রসুলবাগ আবাসিকের ব্রিজটির কাজ চলমান আছে। সেখানে শীট ফাইল করেছি এবং কয়েকদিনের মধ্যে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হবে। জায়গা বুঝে না পাওয়ায় বিদ্যুৎ অফিস সংলগ্ন অপর ব্রিজটির কাজ শুরু করতে পারিনি। সেখানে জায়গা নিয়ে বিরোধ চলছে এবং সিটি কর্পোরেশনই সেটা দেখভাল করছে। মাঝখানে অবশ্যই আমরা জিনিসপত্রও নিয়ে গিয়েছিলাম। জায়গা বুঝিয়ে দিলে আমরা কাজ শুরু করব।’
এ বিষয়ে চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘ব্রিজের জায়গা অন্য লোক দাবি করছে। সে তার ব্যক্তিগত প্রপার্টি বলছে। তাকে আমরা ডেকেছি। দুইপক্ষ থেকে কাগজপত্র নিয়ে আইন কর্মকর্তাকে দিয়েছি পর্যালোচনা করার জন্য। আইন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘দুই পক্ষে বিএস নিয়ে ঘাপলা আছে।’ এখন দুই পক্ষ থেকে দুইজন সার্ভেয়ার দিতে বলেছি এবং সেখানে আমাদের কর্পোরেশনের লোকও থাকবে। তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিব।’
এক প্রশ্নের জবাবে প্রশাসক বলেন, ব্রিজটার জন্য আমাদের পুরো কাজটা আটকে আছে। আবার আমাদেরও এত লোকবল নাই প্রতিদিন গিয়ে পিটাপিটি করে কাজ করে ফেলব। তাছাড়া স্থানীয় কোনো সমস্যার সাথেও আমরা যুক্ত হতে পারব না। যার সুবিধা আছে সে তদবির করে পাগল বানায় ফেলে। যার নাই সে করতে পারে না। তিনি বলেন, ব্রিজটা হওয়া উচিত। আমিও চাই হোক। আমাদের ফান্ডও আছে। ঠিকাদারও নিয়োগ করা আছে। শুধু ঘাপলার জন্য আটকে আছে। দ্রুত সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাপার পর হয়ে যাবে, যদি অন্য কোনো আইনগত জটিলতা সৃষ্টি না হয়। আগামী সপ্তাহের মধ্যে মাপার কাজটি হওয়ার কথা।
পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এ কে এম আরিফুল ইসলাম ডিউক দৈনিক আজাদীকে বলেন, দায়িত্বে থাকার সময় কর্পোরেশন থেকে ম্যজিস্ট্রেটসহ গিয়ে উচ্ছেদ করে কাজ করার উপযুক্ত করা হয়েছিল। আমরা উদ্বোধনও করলাম। এখন তো আমরা দায়িত্বে নাই। এখন শুনছি কাজটা হচ্ছে না। তিনি বলেন, ব্রিজটা হলে এলাকার জন্য ভালো হতো। এলাকাবাসীর কিন্তু অনেক আগের চাহিদা ছিল দুটি ব্রিজ করার। সে চাহিদার কারণেই ব্রিজ করার উদ্যোগও নিয়েছি। ব্রিজটা হলে সাধারণ মানুষের সুবিধা বাড়বে। এখন কর্পোরেশনের নীতিনির্ধারক খোরশেদ আলম সুজন ভাই। ব্রিজ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা এখন ওনার আন্ডারে চলে গেছে। ওনি ইয়েস বললেই কাজটা হয়ে যেত।