উদ্বোধনী দিনেই বইপ্রেমীদের আনন্দমুখর পদচারণা

 বই হয়ে উঠুক মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের অস্ত্র : মেয়র

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৮:৪১ পূর্বাহ্ণ

তখনো আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় নি। পরিপূর্ণভাবে গুছানো হয় নি সবগুলো স্টলও। বেশ কয়েকটি স্টল সম্পূর্ণ খালি। অথচ উচ্ছ্বসিত বইপ্রেমীদের আনন্দমুখর পদচারণায় ভিড় বেড়েই চলছিল মেলা প্রাঙ্গণে। নতুন বইয়ের ঘ্রাণে ছুটে আসা পাঠকের এ সরব উপস্থিতি হাসির ঝিলিক এনে দেয় প্রকাশকের মুখে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আয়োজকও।

সবমিলিয়ে নগরে স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম মাঠে শুরু হওয়া ‘অমর একুশে বইমেলা২০২৩’ এর প্রথম দিনে যেন বার্তা দিয়েছে, ‘মর্নিং শোজ দ্যা ডে’, জমজমাট হবে এবারের বইমেলা। গতকাল বুধবার বিকেলে প্রধান অতিথি হিসেবে বইমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এতে প্রধান বক্তা ছিলেন চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেয়র বলেন, বইমেলার প্রতিটি বই হয়ে উঠুক মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের অস্ত্র। চট্টগ্রামবাসীকে আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা মেলায় আসুন, নতুন প্রজন্মের হাতে মোবাইল নয়, বরং বই তুলে দিন। তিনি বলেন, একাত্তরে যে চেতনার ভিত্তিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে পুরো জাতি এক হয়ে লড়েছিল সে চেতনার ধারা আজ দুর্বল হয়ে গেছে।

বঙ্গবন্ধুর অকাল প্রয়াণের পর স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি ক্ষমতা দখল করে জনগণ বিশেষ করে শিশুদের মগজধোলাই করে তাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। মিথ্যার প্রাসাদ ভেঙে জনগণের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুনর্জাগরিত করতে এই বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে। চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার বলেন, রাষ্ট্রের উন্নয়নে চাই শিক্ষার উন্নয়ন। আর, ভালো মানের বই ছাড়া ভালো শিক্ষা ব্যবস্থা গড়া সম্ভব নয়।

এই বইমেলা চট্টগ্রামের হাজারো বইপ্রেমীর পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে, যা আমাদের একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লড়াইয়ে সাহস যোগাবে। মেলার আয়োজক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। তবে চট্টগ্রামের সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ, নাগরিক সমাজ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাহিত্যিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী এবং অন্যান্য শিল্পসাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরাই সম্মিলিতভাবে এ মেলা বাস্তবায়ন করবেন।

সম্মিলিত উদ্যোগে এবারের মেলাটি চতুর্থ আয়োজন। মেলা প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা ও ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। মেলায় ১০৮ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ১৪০টি স্টল রয়েছে। এর মধ্যে ডাবল স্টল ৩২টি এবং সিঙ্গেল স্টল ৭৬টি। মেলা প্রাঙ্গণের আয়তন এক লক্ষ দুই হাজার ৩০০ বর্গফুট।

গতকাল মেলা ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতা দর্শনার্থীরা স্টলেস্টলে ঘুরে মলাট উল্টিয়ে দেখছিলেন নতুন বই। সংগ্রহ করছেন নতুন বইয়ের তালিকা। সাথে খবর নিচ্ছিলেন, প্রিয় লেখকের বই কবে আসবে। অনেকে কেনাকাটাও করছিলেন। মেলা প্রাঙ্গণে ইটের পরিবর্তে ত্রিপল দেয়ায় কেউ কেউ সমালোচনাও করছিলেন।

আপন আলো প্রকাশনের শামসুদ্দীন শিশির বলেন, ইট দিলে ভালো হত। ত্রিপলে কতটা সুফল মিলবে বুঝা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, এবার অনেক নতুন নতুন বই এসেছে।

নন্দন প্রকাশনের সঞ্জয় সূত্র ধর বলেন, মেলা শুরু হয়ে গেছে, এখনো অনেক স্টল তৈরি হয়নি। এখনো ঝাড়ু দেয়া হচ্ছে, এতে ধুলোবালি উড়ছে, কর্পোরেশনের উচিত ছিল পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম আরো আগে করা। গতবার ভ্রাম্যমাণ টয়লেটে পানির কল নষ্ট ছিল, এবার তা যেন না হয় খেয়াল রাখতে হবে।

এবারের বারের বইমেলায় প্র প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে মাইনুল এইচ সিরাজীর কিশোর থ্রিলার ‘বাসার স্যারের বাকি রহস্য’। তিনি বলেন, ছোট পরিসরে হলেও চট্টগ্রামের বইমেলা স্বস্তির। কারণ আগে অপেক্ষায় থাকতে হত কখন ঢাকার বইমেলা শুরু হবে। কখন সেখানে যাব সেটি নিয়ে অস্থিরতা কাজ করত। আবার সেখানে যেতে অনেক ঝক্কিঝামেলা। এখন আর তা নেই।

চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন থেকে বেরিয়েছে আ ফ ম মোদাচ্ছের আলীর ‘জয় বাংলা’। তিনি বলেন, প্রথম দিনেই পাঠক, লেখক ও প্রকাশকের উপস্থিতিতে জমে উঠেছে মেলা। সামনে আরো জমজমাট হবে।

প্রথমা প্রকাশনের কর্মী ইব্রাহীম তানভীর বলেন, এবার মেলার ব্যবস্থাপনা সিস্টেমের মধ্যে আসছে, তবে ফ্যাসিলিটি কম দিচ্ছে। অন্যবার প্রথম দিনে যে রকম উপস্থিতি এবার তেমন নাই। তবে তার সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করে স্বাধীন প্রকাশনের হৃদয় হাসান বাবু বলেন, গতবারের চেয়ে প্রথমদিনে উপস্থিতি বেশি। মনে হচ্ছে সামনে আরো জমবে। প্রথমদিন বিকিকিনি মোটামুটি হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে স্টল গুছাতে দেখা গেছে অনিনন্দ প্রকাশনের। প্রকাশনাটির মার্কেটিং ম্যানেজার গোলাম কিবরিয়া আজাদীকে বলেন, উপকরণ আসতে দেরি হওয়ায় গুছাতে সময় লাগছে। তিনি বলেন, কাগজের দাম বেশি, প্রকাশকরা বই ছাপতে হিমশিম খাচ্ছে। তারপরও আশাবাদী মানুষ বই কিনবে।

এদিকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকতা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেনবীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি সালাহ্‌উদ্দিন মো. রেজা, বইমেলার আহ্বায়ক কাউন্সিলর নিছার উদ্দিন আহমেদ (মঞ্জু), কাউন্সিলর গাজী মো. শফিউল আজিম, হাসান মুরাদ বিপ্লব, নাজমুল হক ডিউক, আবদুস সালাম মাসুম, মো. শেখ জাফরুল হায়দার চৌধুরী, মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, সংরক্ষিত কাউন্সিলর তছলিমা বেগম নুরজাহান, রুমকি সেনগুপ্ত চসিক সচিব খালেদ মাহমুদ, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, রাজস্ব কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ, শিক্ষা কর্মকর্তা উজালা রানী চাকমা, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম, স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট মনীষা মহাজন, উপসচিব আশেক রসুল চৌধুরী (টিপু), জনসংযোগ ও প্রটোকল কর্মকর্তা আজিজ আহমদ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিমেন্ট ক্লিংকারসহ জাহাজ ডুবি
পরবর্তী নিবন্ধসেচের পানির অভাবে পুড়ছে ফসল