অব্যাহত উত্তেজনা এবং পুলিশের নিষেধাজ্ঞার পর ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাবেক জোটসঙ্গী জাতীয় পার্টি রাজধানীর কাকরাইলে তাদের সমাবেশ স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাতে এক বার্তায় দলের চেয়ারম্যানের প্রেস সচিব খন্দকার দেলোয়ার জালালী এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন।
এতে লেখা হয়, শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪ বেলা ২টায় জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কার্যালয় কাকরাইল চত্বরে অনুষ্ঠেয় জাতীয় পার্টির সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। কেন এই সিদ্ধান্ত, তাও জানিয়ে দেওয়া হয় বিজ্ঞপ্তিতে। “ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স ২৯ ধারার ক্ষমতা বলে (সভাস্থল) পাইওনিয়ার রোডস্থ ৬৬ নং ভবন, কাকরাইলসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় যে কোনো প্রকার সভা, সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা, বিক্ষোভ প্রদর্শন ইত্যাদি নিষিদ্ধ করায় জাতীয় পার্টি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” পরবর্তী কর্মসূচি আনুষ্ঠানিক ভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে, লেখেন দেলোয়ার জালালী। খবর বিডিনিউজের।
দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চন্নু বলেন, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আগামীকালের কর্মসূচি স্থগিত করেছি। পরবর্তীতে আমাদের কর্মসূচি কী হবে সেটা চূড়ান্ত হয়নি। আমরা সামনে আবার মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেব যে কী কী কর্মসূচি নেওয়া যায়।
যা ঘটেছিল : জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবসহ দলের নেতাদের নামে মামলা প্রত্যাহার ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের দাবিতে আজ শনিবার ঢাকায় সমাবেশ এবং বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছিল দলটি। গত বৃহস্পতিবার এই কর্মসূচি ঘোষণার কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে রাজধানীর কাকরাইলে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা করে একদল মানুষ। তারা সেখানে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এর কিছুক্ষণের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে লেখেন, জাতীয় বেইমান এই জাতীয় পার্টি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিজয়নগরে আমাদের ভাইদের পিটিয়েছে, অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। এবার এই জাতীয় বেইমানদের উৎখাত নিশ্চিত।
এরপর গতকাল শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন ডেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, ওই কার্যালয়ের সামনে আজ শনিবার তাদের যে সমাবেশের কর্মসূচি রয়েছে, তা চালু থাকবে।
কিন্তু ওই সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে পরে হুঁশিয়ারি দেয় বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ। শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র, শ্রমিক, জনতা’র ব্যানারে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা জাতীয় পার্টির নেতাদের গ্রেপ্তারের দাবিও তোলেন।
দুই পক্ষের এই পাল্টাপাল্টি অবস্থানের মধ্যে শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগর পুলিশ–ডিএমপিও কমিশনার মো. মাইনুল হাসান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে শনিবার বিজয়নগরের পাইওনিয়ার রোডের ৬৬ নম্বর ভবন, পাইওনিয়ার রোড, কাকরাইলসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় যে কোনো প্রকার সভা, সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা, বিক্ষোভ প্রদর্শন ইত্যাদি নিষিদ্ধ থাকবে।
২০০৮ সাল থেকে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বা সমঝোতা করে মোট চারটি নির্বাচন করেছে। দলটির নেতারা কখনও মন্ত্রিত্ব নিয়ে সরকারের অংশীদার হয়েছেন, কখনও সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জাতীয় পার্টি সমর্থন দিলেও সরকার পতনের পর জাতীয় পার্টি তার অতীতের কারণে হোঁচট খাচ্ছে। শেখ হাসিনার পতনের পর ইউনূস সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করে। নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিভিন্ন দলের সঙ্গে আয়োজিত প্রধান উপদেষ্টার তিনটি সংলাপেও যান দলটির নেতারা। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের আপত্তির পর ১৯ অক্টোবরের চতুর্থ দফার সংলাপে ডাক পায়নি দলটি।
জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ায় হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমকে রংপুরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে জাতীয় পার্টি। এই ঘোষণার মধ্যেও সারজিস অবশ্য রংপুরে এক আয়োজনে অংশ নিয়েছেন।