চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আকবরশাহ থানাধীন ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ও ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডের ৫ লাখ জনগণ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম–৪ সীতাকুণ্ড আসনের সাথে থাকতে চায় না। এই দুই ওয়ার্ডের বাসিন্দারা আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম–১০ (পাহাড়তলী–হালিশহর–খুলশী পাঁচলাইশ) সংসদীয় আসনে যুক্ত হতে চায়। এই দুই আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারনের জন্য দুই ওয়ার্ডের স্থানীয় জনগণের পক্ষ থেকে ৭ জন নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছিলেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশের ৭৯টি আসন থেকে ছয় শতাধিক আবেদন জমা পড়েছে। সেগুলো থেকে যাচাই–বাছাই শেষে সারাদেশের সংসদীয় আসনগুলোর মধ্যে ৩৯টির আসনের সীমানায় পরিবর্তন এনে খসড়া চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। সীমানা পুনঃনির্ধারণের খসড়ায় নগরীর ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ও ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডকে চট্টগ্রাম–৪ সীতাকুন্ড আসন থেকে কেটে চট্টগ্রাম–১০ (পাহাড়তলী–হালিশহর–খুলশী পাঁচলাইশ) আসনের সাথে যুক্ত না করায় স্থানীয় বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে পুনরায় আপিল আপত্তি দাখিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আবেদনকারীরা। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে আগামী ১০ আগস্ট পর্যন্ত সংক্ষুব্ধরা এই খসড়ার বিরুদ্ধে আবেদন করতে পারবেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ৬৮ হাজার এবং ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ৩৮ হাজার। এই দুই ওয়ার্ডে মোট জনসংখ্যা ৫ লাখ। চট্টগ্রাম–৪ সীতাকুণ্ড ও চট্টগ্রাম–১০ (পাহাড়তলী–হালিশহর–খুলশী পাঁচলাইশ) আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারনের জন্য স্থানীয়দের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছেন চৌধুরী মোহাম্মদ আবু হেনা মঞ্জু, এডভোকেট এ এইচ এম জাহিদ হোসেন, ডা. শাহাদাত হোসেন, নগর যুবদলের সাবেক সহ সভাপতি মোহাম্মদ শাহেদ আকবর, মো. ইউসুফ চৌধুরী, মোহাম্মদ হাসেম আলী ও চৌধুরী শরাফত করিম।
নির্বাচন কমিশন আপিল আপত্তি দাখিল ও রিটসহ আইনগত সমন্বয় করতে ইতোমধ্যে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে মোহাম্মদ হাসেম আলীকে, সদস্য সচিব করা হয় মোহাম্মদ শাহেদ আকবরকে। এই ব্যাপারে কমিটির সদস্য সচিব ও মহানগর যুবদলের সাবেক সহ–সভাপতি মোহাম্মদ শাহেদ আকবর বলেন, নগরীর অত্যন্ত জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ও ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড দুটি ২০০৮ সাল পর্যন্ত তৎকালীন চট্টগ্রাম–৮ (বন্দর–পতেঙ্গা) আসনের (বর্তমানে চট্টগ্রাম–১১ বন্দর–পতেঙ্গা) সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। ২০০৯ সালে একটি মহল নিজেদের স্বার্থে ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ও ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলীকে চট্টগ্রাম–৪ সীতাকুণ্ড সংসদীয় আসনে যুক্ত করে। অথচ আমরা এই দুই ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের কাছ থেকে কোনো ধরনের মতামত নেয়া হয়নি। আমরা চট্টগ্রাম সিটির বাসিন্দা। কখনো সীতাকুণ্ডের মত একটি মফস্বল উপজেলার সাথে যুক্ত হতে চাইনি। অথচ তৎকালীন চট্টগ্রাম–৮ (বন্দর–পতেঙ্গা) আসন (বর্তমানে চট্টগ্রাম–১১ বন্দর–পতেঙ্গা আসন) থেকে নির্বাচন করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওয়ান ইলেভেনের সময় চট্টগ্রাম–৮ আসনকে (বর্তমানে চট্টগ্রাম–১১ বন্দর–পতেঙ্গা) বিভক্ত করে চট্টগ্রাম–১০ (পাহাড়তলী–হালিশহর–খুলশী পাঁচলাইশ) সংসদীয় আসন করা হয়। ওই সময় বন্দর–পতেঙ্গা আসন থেকে আমাদের দুটি ওয়ার্ডকে (৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ও ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী) কেটে চট্টগ্রাম–৪ সীতাকুণ্ড সংসদীয় আসনে যুক্ত করা হয়েছে।
আগামী নির্বাচনে চট্টগ্রাম–৪ সীতাকুণ্ড সংসদীয় আসন থেকে বেরিয়ে আসার জন্য নির্বাচন কমিশনে আপিল আবেদনকারীর মধ্যে শাহেদ আকবর বলেন, আমরা আকরশাহ থানার ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ও ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী এলাকার ৫ লাখ অধিবাসী এবং ১ লাখ ৬ হাজারের মত ভোটারের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছিলাম। আবেদনে আমরা বলেছি, আমাদের এই দুই ওয়ার্ডকে চট্টগ্রাম–১০ (পাহাড়তলী–হালিশহর–খুলশী পাঁচলাইশ) সংসদীয় আসনে যুক্ত করার জন্য। আমরা এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ৭ জন আবেদন করেছিলাম। নির্বাচন কমিশন দেশের সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারনের খসড়ায় আমাদের আবেদনগুলো যুক্ত না করায় আমরা আবারো গত ৬ আগস্ট আপত্তি জমা দিয়েছি নির্বাচন কমিশনে।
মোহাম্মদ শাহেদ আকবর বলেন, ২০০৯ সালে আমাদেরকে সীতাকুণ্ডের সাথে যুক্ত করার পর থেকে আমাদের এই দুই ওয়ার্ড (৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ও ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী) উন্নয়নের সব দিক থেকে পিছিয়ে পড়েছে। এখানে নেই সিটি কর্পোরেশনের কোনো উন্নয়ন, নেই উপজেলা চেয়ারম্যান কিংবা উপজেলা প্রশাসনের কোনো উন্নয়ন। আমাদের এই দুই ওয়ার্ডে শুধুমাত্র ভোটের সময় ভোট নিতে আসেন প্রার্থীরা। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর আর কখনো দেখা যায় না। আমাদের ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ৬৮ হাজার এবং ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ৩৮ হাজার। এই দুই ওয়ার্ডে মোট জনসংখ্যা ৫ লাখ।