বিদেশি সিনেমা এবং টিভিতে নাটক দেখা বা কারও সঙ্গে তা শেয়ার করার অপরাধে আরও বেশি মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করছে উত্তর কোরিয়া। জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়ের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে একথা। বিশ্ব থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন উত্তর কোরিয়ার একনায়কতান্ত্রিক সরকার মানুষজনকে বাধ্যতামূলক শ্রমে নিয়োজিত করাসহ তাদের স্বাধীনতায় আরও কড়াকড়ি করছে বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে। জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় তাদের অনুসন্ধানে দেখতে পেয়েছে যে, গত এক দশকে উত্তর কোরিয়া তাদের দেশের নাগরিকদের জীবনের সবকিছুর ওপরই কড়া নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। আজকের দুনিয়ায় আর কোনও দেশের মানুষই এতটা কড়াকড়ির মধ্যে নেই। আধুনিক প্রযুক্তির বদৌলতে নজরদারিও ব্যাপকমাত্রায় বেড়েছে, বলা হয় প্রতিবেদনে। খবর বিডিনিউজের।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার ভলকার তুর্ক বলেছেন, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে উত্তর কোরীয়রা আগের চেয়ে আরও বেশি দুর্ভোগ, নির্মম নিপীড়ন এবং আতঙ্কের শিকার হবে। গত ১০ বছরে উত্তর কোরিয়া ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া ৩০০ জনের বেশি মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছে জাতিসংঘ। তাদের কাছ থেকেই জানা গেছে যে, উত্তর কোরিয়ায় এখন প্রায়ই মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হচ্ছে। ২০১৫ সাল থেকে অন্তত ৬টি নতুন আইন চালু হয়েছে উত্তর কোরিয়ায়। এই আইনবলেই সাজা কার্যকর করা হচ্ছে। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে যেসব অপরাধের সাজা দেওয়া হচ্ছে তার মধ্যে একটি হল: বিদেশি সিনেমা এবং টিভি নাটক দেখা কিংবা এর ভিডিও কাউকে শেয়ার করা। মানুষকে তথ্য জানতে দেওয়া থেকে বিরত রাখতেই উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের এমন পদক্ষেপ। উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে যাওয়া মানুষেরা জাতিসংঘের গবেষকদেরকে জানিয়েছেন, ২০২০ সাল থেকে পরবর্তী সময়ে বিদেশি ছবি, ভিডিও বা অডিও বিতরণের ঘটনায় জনসম্মুখে ফায়ারিং স্কোয়াডে বেশি সংখ্যক মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। মানুষজনকে আতঙ্কিত করে নিয়ম না ভাঙার ব্যাপারে হুঁশিয়ার করে দিতে এভাবে জনসম্মুখে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ২০২৩ সালে উত্তর কোরিয়া থেকে পালানো কাং গিউরি বিবিসি–কে বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়ার কনটেন্টসহ ধরা পড়ায় তার তিন বন্ধুর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল। মাদক কারবারীদের সঙ্গে এক কাতারে তার এক বন্ধুর বিচার করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় এবং ২০২০ সাল থেকেই উত্তর কোরিয়ার মানুষ অনেক বেশি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে বলে জানান কাং। জাতিসংঘ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম যুক্তরাষ্ট্র ও অ্যান্যান্য পশ্চিমা দেশের সঙ্গে কূটনীতি পরিহার করে নিজ দেশের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর মনোনিবেশ করার পর থেকে দেশটিতে মানুষের জীবনযাত্রা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
        











