কাট্টলীর উত্তর চট্টগ্রাম তোরণের পশ্চিম পাশে ১৯৯৪ সালের ২৭ মে বিশিষ্ট শিল্পপতি ও শিক্ষানুরাগী দুই ভাই দানবীর আলহাজ্ব মো: আবু তাহের ও আলহাজ্ব মোঃ মনজুর আলম–এর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ও অর্থায়নে তাঁদেরই পিতা মরহুম হযরত খাজা আবদুল হাকিম শাহ্্ আল মাইজভান্ডারী (রহঃ) ও মাতা মরহুমা আলহাজ্ব মোস্তফা খাতুন এর নামে উত্তর কাট্টলী আলহ্জ্বা মোস্তফা–হাকিম মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ আবদুল মজিদ এর ভিত্তি প্রস্তর করেন। বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ এ.এ. রেজাউল করিম চৌধুরীর হস্তে ও সুদক্ষ পরিচালনায় অত্র এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়ে। ৪ নভেম্বর ১৯৯৪ খ্রি. মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক মোঃ ইউনুছ মিয়ার হস্তে একাডেমিক ভরনের শুভ উদ্বোধনের মাধ্যমে মহাবিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রায় ও উন্নয়নে আরো একধাপ এগিয়ে যায়। ১৯৯৬ সালের ১৮ অক্টোবর চট্টগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক কে.এম হাবিবুল্লাহ ডিগ্রি ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের মাধ্যমে এ মহাবিদ্যালয় ডিগ্রি কলেজে রূপান্তরিত হয়। এরপর উত্তর কাট্টলী আলহাজ্ব মোস্তফা–হাকিম ডিগ্রী কলেজ নামে পরিচিতি লাভ করে ।
সুযোগ্য কলেজ পরিচালনা পর্ষদ, এলাকাবাসীর সুহৃদ সহযোগিতা, স্থানীয় প্রশাসন ও বিদ্যোৎসাহী সুধীজনের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় বিশেষ করে প্রতিষ্ঠাতা মহোদয় আলহাজ্ব এম. মনজুর আলম–এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ও নিরলস প্রচেষ্টায় অতি অল্প সময়ের মধ্যে একটি অরাজনৈতিক ও সন্ত্রাস মুক্ত সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশ সমৃদ্ধ সুশৃঙ্খল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে বৃহত্তর চট্টগ্রামে সুনামের সাথে বেসরকারী কলেজের মধ্যে অন্যতম স্থান অধিকার করে।
২০০১ সালের ৯ এপ্রিল অধ্যক্ষ এ.এ রেজাউল করিম চৌধুরী পরলোকগমন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মরহুম প্রফেসর ফজলুল কাদের চৌধুরী অধ্যক্ষ পদে আসীন হন। শিক্ষার গুনগত মান, ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি, চুড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফলে সাফল্যের ঊর্ধ্বগতি, উচ্চ মাধ্যমিক ও স্মাতক পর্যায়ে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল বিশেষ করে কলেজর মান ও উন্নয়নের গতি ক্রমান্নয়ে দ্রুততর হয়।
আলহাজ্ব মোস্তফা–হাকিম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন কর্তৃক অত্র কলেজের ছাত্রদের এবং এলাকার জনসাধারণের সুবিধার্থে এবাদতের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় হযরত তৈয়ব শাহ (রঃ) জামে মসজিদ, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে এলাকার চাহিদা মোতাবেক কলেজ ক্যাম্পাসে প্রতিষ্ঠিত হয় আলহাজ্ব মোস্তফা–হাকিম কেজি এন্ড হাই স্কুল। জনসেবা ও মানবতার লক্ষে স্থাপিত হয় আলহাজ্ব মোস্তফা–হাকিম মাতৃসদন। ধর্মীয় শিক্ষা বিস্তারের স্বার্থে তাহেরিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা, আলহাজ্ব তাহের–মনজুর ইসলামিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসা স্থাপিত হয়। তাই বর্তমানে অত্র এলাকার সার্বিক পরিবেশ পরিস্থিতির অবস্থার উন্নয়ন, জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি, সাধারণ শিক্ষা ও উচ্চ শিক্ষা হারের দ্রুত উর্ধগতি আলহাজ্ব মোস্তফা–হাকিম পরিবারের অন্যতম অবদান।
এ কলেজে বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতির মাধ্যমে আর্ন্তজাতিক মানের নিয়মিত পাঠদান ছাড়াও লেখাপড়ার পাশাপাশি ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাটমিন্টন, ভলিবল ইত্যাদি খেলাধুলার নিয়মিত চর্চা ও প্রতিযোগিতা, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, আন্তঃকক্ষ ক্রীড়া চর্চা ও প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক পর্বের অনুশীলণ ও অনুষ্ঠান, বি.এন.সি.সি., রোভার স্কাউট ও যুব রেড ক্রিসেন্ট এর নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও বাৎসরিক ক্যাম্পিং, উচ্চ মাধ্যমিক ও স্মাতক পর্যায়ে নবীন বরণ ও বিদায়ী ছাত্রদের সংবর্ধনা, নবাগতদের ওরিয়েন্টেশন ক্লাস, বার্ষিক মিলাদ মাহফিল, ঈদ–ই–মিলাদুন্নবী (স🙂 মাহফিল, কলেজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, প্রতিষ্ঠাতা মহোদয়ের মরহুম পিতামাতার মৃত্যু বার্ষিকী, বার্ষিক স্মরণসভা, ইত্যাদি ছাত্র–ছাত্রীদের দৈহিক ও মানসিক উৎকর্ষ সাধন ও সৃজনশীল মননশীলতার পরিচায়ক। উল্লেখ্য যে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে সমুদ্র পাড়ে কলেজের নিজস্ব অর্থায়নে স্টেডিয়াম “শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম ”নির্মান করা হয় যেখানে নিয়মিত খেলাধুলা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং অনুশীলন চলছে ।
বিগত ২০১২–১৩ শিক্ষাবর্ষে হিসাব বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স কোর্সের স্বীকৃতি প্রাপ্তির মাধ্যমে উত্তর কাট্টলী আলহাজ্ব মোস্তফা–হাকিম ডিগ্রী কলেজ পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রূপান্তর এক যুগান্তকারী সফলতা ও উল্লেখযোগ্য অর্জন। বর্তমান সময়ে ইংরেজি, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, বাংলা ও দর্শন বিষয়ে অনার্স কোর্স বিদ্যমান এবং হিসাব বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স (স্নাতকোত্তর শ্রেণি ) চালু রয়েছে। অন্যান্য চলমান বিষয়গুলোর অনার্স কোর্স খোলার প্রচেষ্টা ও পরিকল্পনা প্রক্রিয়াধীন। বর্তমানে অভিজ্ঞ, ধৈর্যশীল ও একনিষ্ঠ প্রায় ৭৪ জন শিক্ষক ও ৩৩ জন কর্মকর্তা–কর্মচারী বিভিন্ন বিষয়ে ও কর্মে আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। জনাব মোহাম্মদ আলমগীর অধ্যক্ষ পদে আসীন হয়ে কলেজ পরিচালনা করছেন। বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি, স্নাতক (পাশ), স্নাতক (সম্মান) শ্রেণি ও স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) শ্রেণিতে নিয়মিত প্রায় ৮ হাজার ছাত্রছাত্রী অধ্যয়নরত আছে।
আলহাজ্ব মোস্তফা–হাকিম পরিবার শুধু শিক্ষার প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করেই ক্ষান্ত হয়নি; দেশের আর্ত মানবতার সেবায় জন কল্যাণে, জনস্বার্থে, সমাজসেবায় ও সার্বিক অবস্থার উন্নয়নে আলহাজ্ব মোস্তফা–হাকিম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন ও আলহাজ্ব হোসনে আরা–মনজুর ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সহযোগিতার দক্ষিণ হস্ত প্রসারিত। বর্তমানে ফাউন্ডেশন ও ট্রাস্ট কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ১০৫টি প্রতিষ্ঠান আলহাজ্ব মোস্তফা–হাকিম পরিবারের অর্থানুকুল্যে ও নির্দেশনায় নিয়মিতভাবে পরিচালিত।
আলহাজ্ব মোস্তফা–হাকিম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আলহাজ্ব এম.এ. তাহের ও আলহাজ্ব এম. মনজুর আলম শুধু যে মানব সেবায় নিয়োজিত তাই নয় বরং এই আর্তমানবতার সেবার পরিধি বৃদ্ধির লক্ষে তাঁদেরই সন্তানদের হাতে সেবামূলক কর্মকান্ড সচল রাখার দায়িত্ব প্রদান করেছেন।
আলহাজ্ব এম. মনজুর আলম চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত মেয়র হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। চট্টগ্রাম মহানগরের মানবসেবা, জনকল্যাণ ও সার্বিক উন্নয়নে নিরলস প্রচেষ্টায় ও পরিশ্রমে, মেধা ও বুদ্ধিতে, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতায় নিপুণ হস্তে প্রশাসন পরিচালনা ও জন সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে এক নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছেন। তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র ও আলহাজ্ব এম. এ তাহের–এর তনয় আলহাজ্ব এম. দিদারুল আলম চট্টগ্রাম নির্বাচনী এলাকা– ৪ এর দুইবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি জনসাধারণের আশা আকাঙক্ষা ও দাবী পূরণ ও সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে তাঁর এলাকায় বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
লেখক: সাবেক উপাধ্যক্ষ