উত্তর কাট্টলীতে বহুতল ভবনে আগুন

দুই পরিবারের ৯ জন দগ্ধ, ১ জনের মৃত্যু

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১০ নভেম্বর, ২০২০ at ৪:২২ পূর্বাহ্ণ

উত্তর কাট্টলীতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দ্বগ্ধ ৯ জনের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পেয়ারা বেগম নামের এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। গত রোববার দিবাগত রাত পৌনে ১০ টায় নগরীর আকবর শাহ থানাধীন উত্তর কাট্টলীর মুরাদ চৌধুরী বাড়ি এলাকায় এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তবে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতের বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য পাওয়া গেছে। অগ্নিকাণ্ডের সুনির্দিষ্ট কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিসও। মরিয়ম ভবন নামের ছয়তলা একটি ভবনের ৫ম তলায় সংগঠিত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অগ্নিদ্বগ্ধ ৬ জনকে মুমূর্ষু অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। ঘটনায় অন্য দুইজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীর রয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ অন্যরা হলেন- সুমাইয়া (১৮), মিজানুর রহমান (৪২), সাইফুর রহমান (১৮), মাহের (৮), বিবি সুলতানা (৩৫), মানহা (২), রিয়াদ (২২) ও সালমা জাহান (২১)। দগ্ধদের মধ্যে রিয়াদ ও সালমা জাহান ছাড়া বাকিদের ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
চমেক হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. আলী জামান আল-সোলায়মান জানান, দগ্ধদের মধ্যে সুমাইয়ার দেহের ১৫ শতাংশ, মিজানুরের ৪৮ শতাংশ, সাইফুরের ২২ শতাংশ, মাহেরের ৫ শতাংশ, বিবি সুলতানার ২০ শতাংশ, মানহার ২০ শতাংশ, রিয়াদের ১৮ শতাংশ এবং সালমা জাহানের ১২ শতাংশ পুড়ে গেছে। তন্মধ্যে মাহের, মানহা ও সালমা জাহান ছাড়া সবার শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। সাইফুরের শরীর তুলনামূলক কম দগ্ধ হলেও তার অবস্থা বেশি আশঙ্কাজনক।
চমেক হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দগ্ধ পেয়ারা বেগমকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আইসিইউতে পাঠানো হয়েছে। সেখানেই ওনার মৃত্যু হয়। আরো ৬ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।’
আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কন্ট্রোল রুম অপারেটর পংকজ পাল জানান, ‘উত্তর কাট্টলী অগ্নিকাণ্ডের খবর পাই ৯টা ৫৫ মিনিটে। ওখানে মমতাজ মিয়ার মালিকানাধীন মরিয়ম ভবনের ৬ষ্ট তলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের দল ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই আগুন নিভে যায়। আগুন লাগার কারণ হিসেবে রেজিস্ট্রারে ‘বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট’ লেখা রয়েছে।’
আকবর শাহ থানার ওসি জহির হোসেন জানান, ছয় তলা ভবনের উপরের তলায় ওই বাসায় আগুন লাগার ঘটনাটি ঘটেছে। এতে এক পরিবারের ৭ জন, আরেক পরিবারের দুজন দ্বগ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন মহিলা হাসপাতালে মারা গেছেন। আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে নিশ্চিত করা যায়নি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরপর হয়তো বলা যাবে।’
জেলা প্রশাসকের ঘটনাস্থল পরিদর্শন : উত্তর কাট্টলীতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রথমে আহতদের দেখতে তিনি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান। এসময় তিনি কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। দগ্ধ ব্যক্তিদের শারীরিক অবস্থার খবর নেন। এরপর ঘটনাস্থল উত্তর কাট্টলী এলাকার মরিয়ম ভবনে পরিদর্শনে যান তিনি। সেখানে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় অগ্নিকাণ্ডের কারণ খুঁজে বের করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানান। এসময় তাঁর সাথে ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ড. বদিউল আলম, কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তৌহিদুল ইসলামসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৭ দিনের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এ অগ্নিকাণ্ডের পেছনে কারও দায় থাকলে- তদন্তে সেটা উঠে আসবে। তদন্তে কারও গাফেলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঘরের সবাই দগ্ধ, রক্ষা পেল নবজাতক
পরবর্তী নিবন্ধর‌্যাব দেখে জানালা দিয়ে ফেলে দিচ্ছিল ১ কোটি ১৭ লাখ টাকা