বাংলা চলচ্চিত্র অঙ্গনে উত্তম কুমার এক অবিস্মরণীয় নাম। একাধারে তিনি ছিলেন অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক। কিছু কিছু চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালক ও কণ্ঠশিল্পী হিসেবেও তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি ছিল। রোমান্টিক নায়ক হিসেবে দীর্ঘ তিন দশক উত্তম কুমার ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। নায়কের ভূমিকা ছাড়াও নানা ধরনের চরিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন দক্ষতার সাথে। আজ তাঁর ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী।
উত্তম কুমারের প্রকৃত নাম অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায়। নায়ক হিসেবে প্রথম আত্মপ্রকাশ ১৯৪৯ সালে অরূপ কুমার নামে ‘কামনা’ ছবিতে। পরবর্তীকালে ‘সঞ্জীবনী’ ছবিতে উত্তম কুমার নামে আত্মপ্রকাশ করেন এবং এ নামেই প্রতিষ্ঠিত হন। ছেলেবেলা থেকেই অভিনয়ে আগ্রহী ছিলেন তিনি। অভিনয় করেছেন মঞ্চে। উচ্চাঙ্গ সংগীতে তালিম নিয়েছেন কিছুকাল। উত্তম কুমার অভিনীত প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘দৃষ্টিদান’। তাঁর অভিনীত ছবির সংখ্যা শতাধিক। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ‘বসু পরিবার’, ‘সাড়ে চুয়াত্তর’, ‘হারানো সুর’, ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’, ‘নায়ক’, ‘সপ্তপদী’, ‘বন পলাশীর পদাবলী’, ‘পৃথিবী আমারে চায়’, ‘অমানুষ’, ‘চৌরঙ্গী’, ‘সবার উপরে’, ‘আলো আমার আলো’, ‘চিড়িয়াখানা’, ‘খেলাঘর’ ইত্যাদি। ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিতে সুচিত্রা সেনের বিপরীতে অভিনয়ের পর উত্তম–সুচিত্রা জুটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এরপর ষাট ও সত্তরের দশকে প্রচুর ছবিতে এই জুটি একসাথে কাজ করেছেন। হাল আমলেও উত্তম–সুচিত্রা জুটির আবেদন কোনো অংশেই ম্লান হয় নি। কয়েকটি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করলেও বোম্বের জমকালো ছবি থেকে বাঙালি দর্শকদের বাংলা ছবির স্নিগ্ধতায় ফিরিয়ে আনতে, বাংলা ছবির জনপ্রিয়তা রক্ষা করতে উত্তম কুমারের ভূমিকা ছিল অনবদ্য। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে ও শ্যামল মিত্রের গানে সবচেয়ে বেশি ঠোঁট মিলিয়েছেন তিনি। ‘কাল তুমি আলেয়’ ছবির সবগুলো গানেই সুরারোপ করেন উত্তম কুমার। ছবি প্রযোজনা, পরিচালনা এবং সংগীত পরিচালনায়ও তাঁর নিপুণ দক্ষতার পরিচয় মেলে।
‘বনপলাশীর পদাবলী’ ছবিটিতে উত্তম কুমার একই সাথে চিত্র পরিচালনা, সংগীত পরিচালনা ও অভিনয় করেছেন। তাঁর অনুজ তরুণ কুমার ছিলেন একজন শক্তিশালী অভিনেতা। দু ভাই একসাথে বেশ কিছু ছবিতে অভিনয় করেছেন। ১৯৮০ সালের ২৪শে জুলাই কলকাতায় উত্তম কুমার প্রয়াত হন। কিন্তু বাংলা চলচ্চিত্রের আকাশে চির উজ্জ্বল ধ্রুবতারার মতো আজও তিনি দীপ্যমান, অনবদ্য তাঁর জনপ্রিয়তা।