উত্তম কুমার(১৯২৬–১৯৮০)। বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়ক। তাঁর প্রকৃত নাম অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়। তিনি ছিলেন একজন ভারতীয়–বাঙালি চলচ্চিত্র অভিনেতা, চিত্র প্রযোজক এবং পরিচালক। বাংলা চলচ্চিত্র জগতে তাকে ‘মহানায়ক‘ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। কালের এই মহানায়ক ১৯২৬ সনের ৩ সেপ্টেম্বর কলকাতার জোড়াসাঁকোর সম্ভ্রান্ত সিংহ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পিতার নাম সাতকড়ি চট্টোপাধ্যায় এবং মায়ের নাম চপলা দেবী। উত্তম কুমারের প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ছিল ‘দৃষ্টিদান’। যদিও ‘মায়াডোর’ নামে একটি চলচ্চিত্রে কাজ করেছিলেন কিন্তু সেটি মুক্তিলাভ করেনি। বসু পরিবার চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এরপর ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ মুক্তি পাবার পরে তিনি চলচ্চিত্র জগতে স্থায়ী আসন লাভ করেন। এই ছবির মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্র জগতের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সফল উত্তম–সুচিত্রা জুটির সূত্রপাত হয়। উত্তমকুমার এবং সুচিত্রা সেন বাংলা চলচ্চিত্রে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে অনেকগুলি ব্যবসায়িকভাবে সফল এবং একই সাথে প্রশংসিত চলচ্চিত্রে মুখ্য ভূমিকায় একসাথে অভিনয় করেছিলেন। এগুলির মধ্যে প্রধান হল– ’হারানো সুর’, ‘পথে হল দেরী’, ‘সপ্তপদী’, ‘চাওয়া পাওয়া’, ‘বিপাশা’, ‘জীবন তৃষ্ণা’ এবং ‘সাগরিকা’। উত্তম কুমার বাংলা চলচ্চিত্রের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি হিন্দি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছিলেন। তার অভিনীত হিন্দি চলচ্চিত্রের মধ্যে ‘ছোটিসি মুলাকাত’, ‘অমানুষ’ এবং ‘আনন্দ আশ্রম’ অন্যতম। ১৯৬৭ সালে ‘এ্যান্টনি ফিরিঙ্গি‘ ও ‘চিড়িয়াখানা‘ ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কার ‘ভরত‘ পেয়েছিলেন। অবশ্য এর আগে ১৯৫৭ সালে অজয় কর পরিচালিত হারানো সুর ছবিতে অভিনয় করে পেয়েছিলেন রাষ্ট্রপতির ‘সার্টিফিকেট অফ মেরিট’। প্রযোজক ছিলেন উত্তম কুমার নিজেই। সঙ্গীতের প্রতিও ছিল তার অসীম ভালোবাসা ও আগ্রহ। উচ্চাঙ্গ সংগীতেও তালিম নিয়েছিলেন কিছুদিন। সঙ্গীতপ্রেমী উত্তম ‘কাল তুমি আলেয়া’ ছবির সবগুলো গানের সুরারোপ করেন। ছবিটি ১৯৬৬ সালে মুক্তি পায়। অভিনেতা, প্রযোজক এবং পরিচালক– সব মাধ্যমেই তিনি ছিলেন সফল। ১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।