দীর্ঘদিন ধরে চিনির বাজার উত্তপ্ত। এবার সেই উত্তপ্ত বাজারে আরেক দফা উত্তাপ ছড়াল এস আলম রিফাইন্ড সুগার মিলের অগ্নিকাণ্ড। অগ্নিকাণ্ডের জেরে ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার চাক্তাই–খাতুনগঞ্জে একদিনের ব্যবধানে মণপ্রতি (৩৭.৩২ কেজি) চিনির দাম বেড়েছে ১০০ টাকা পর্যন্ত। শুধুমাত্র অগ্নিকাণ্ডকে অজুহাত বানিয়ে দাম বাড়ানোর বিষয়টিকে বিস্ময়কর বলছেন ভোক্তারা। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এস আলম সুগার মিলে আগুনের ঘটনায় বাজারে সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। দাম আরো বাড়তে পারে এমন আশঙ্কায় কিছু চিনি ব্যবসায়ী চিনি বিক্রি করছেন না। যারা বিক্রি করছেন তারা প্রতিষ্ঠান থেকে বিক্রয় রশিদ দিচ্ছেন না। সাদা কাগজে চিনির পরিমাণ ও দাম লিখে বিক্রি করছেন।
গতকাল খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাইকারিতে প্রতি মণ চিনি বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৫০ টাকায়। একদিন আগে গত সোমবার সেই চিনি বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৯৫০ টাকায়। তবে দামপাড়ার খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়েছে ১৪৫ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, খাতুনগঞ্জের বাজারে পণ্য বেচাকেনা ও লেনদেনে যুগ যুগ ধরে কিছু প্রথা চালু আছে। নিজেদের সুবিধার জন্য অনেক প্রথা আছে যেগুলো আইনগতভাবে স্বীকৃত নয়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) স্লিপ। চিনি কিংবা অন্য কোনো পণ্য কেনাবেচায় ডিও বেচাকেনার মাধ্যমে আগাম লেনদেন হচ্ছে। দেখা যায়, পণ্য হাতে না পেলেও ওই স্লিপটিই বেচাকেনা হচ্ছে। কোনো কোম্পানি বাজারে আসার আগে নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যের ডিও বিক্রি করে। যে দরে ডিও বিক্রি হয় তার বাজার দর যদি বেড়ে যায়, তখন পণ্য ডেলিভারি দিতে তারা গড়িমসি করে। আবার দেখা যায়, কোম্পানির পণ্যের তুলনায় ডিও বিক্রি হয় বেশি। এর ফলেও কোম্পানি বাজারে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে না। ফলে এসব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকে না।
চাক্তাই–খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন আজাদীকে বলেন, চিনির সরবরাহ কিছুটা কম। তাই দাম বাড়তি।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, চিনির বাজার নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। দেশে হাতেগোনা কয়েকটি গ্রুপ চিনির পরিশোধন ও বিপণনের সাথে জড়িত। সরকার চাইলে এসব কোম্পানিকে নজরদারির মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সেসবের কিছুই হচ্ছে না। প্রশাসনের নজরদারির অভাবেই ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করার সুযোগ পাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার কর্ণফুলী থানার ইছানগর এলাকায় এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজের গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনে কোম্পানির ১ লাখ টন অপরিশোধিত চিনি পুড়ে যায় বলে দাবি করা হয়।











