দ্বীন বা ইসলামের শিক্ষা, আদর্শ ও নবী মোহাম্মদ মোস্তফা (দ🙂 এর সুন্নাহ ও শিক্ষার ধারক–বাহক হিসেবে মানবজাতির হেদায়েতের কাজ করার জন্য যুগে যুগে অনেক পীর মুর্শিদগণ পৃথিবীতে শুভাগমন করেছিলেন। তাঁদেরই একজন ছিলেন শতাব্দীর বরেণ্য ইসলাম প্রচারক, উম্মতের সঠিক পথের আলোকবর্তিকা, অসংখ্য আলেম, হাফেজ, মুফতি, মুহাদ্দিস, অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষের পরম শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষাগুরু, আওলাদে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আল্লামা অধ্যক্ষ সৈয়দ শামসুল হুদা (রহঃ)। যিনি আধ্যাত্মিকর উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা ছিলেন, ছিলেন খাঁটি আওলাদে রাসুল (দ.)। যুগের পর যুগ তাদের বসতবাড়ি সৈয়দ বাড়ি দরবার হিসেবে পরিচিত। তাদের প্রজন্ম থেকে অসংখ্য পীর–দরবেশ জন্ম নিয়েছেন। সব শ্রেণির মানুষ তাদেরকে সৈয়দ সাহেব হিসেবে সম্বোধন করতেন। তিনি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার তেলপারই গ্রামে ১০ই জমাদিউল আখের ১৩৩৫ হিজরি, ৪ঠা মার্চ ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ বুধবার সুবহে সাদিকের সময় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা আল্লামা সৈয়দ আবদুল কাহের (রহঃ) ছিলেন তৎকালীন সময়ে অতুলনীয় মুফতি এবং মাতা সৈয়দা হাকিমুন্নেছা (রাঃ) ছিলেন যমানার রাবেয়া বসরী এবং অতুলনীয় মহীয়সী নারী। মুফতি হযরতুলহাজ্ব আল্লামা সৈয়দ আবদুল হাই কাদেরী (রহঃ) এর পবিত্র আদরে আরবি শিক্ষার প্রথম সবক গ্রহণ করেন আল্লামা অধ্যক্ষ সৈয়দ শামসুল হুদা (রহঃ)। পর্যায়ক্রমে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় দেশের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান সমূহে অধ্যয়ন শেষে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের উদ্দেশ্যে কলকাতা আলিয়া মাদরাসা থেকে কামিল ফজিলতে দস্তারবন্দী কবুল করে দেশে ফিরেন। হুজুর কিবলা (রহঃ) পর্যায়ক্রমে ৯ বার হজ পালন করেন। ৭ম বার হজ পালন শেষে মদিনা শরীফের বাবে মজিদিতে অবস্থিত হযরত আবদুল গফুর মোহাজেরে মাদানি (রহঃ) এর খানকাহ শরীফে নকশবন্দিয়া ত্বরিকার খেলাফত গ্রহণ করেন। আল্লামা অধ্যক্ষ সৈয়দ শামসুল হুদা রহঃ যেমন আলেম ছিলেন, তেমনি ছিলেন যুগশ্রেষ্ঠ অলিয়ে কামেল। তাঁর অসংখ্য কারামত রয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, তিনি শরীয়তের উপর পরিপূর্ণ পাবন্দ ছিলেন। সারাদিন মাদরাসায় ইলমে দ্বীনের দরস প্রদান করতেন, সন্ধ্যার পর থেকে বিভিন্ন মাহফিলে ওয়াজ নছিহত করতেন। একবার বর্ষার মৌসুমে প্রচণ্ড রৌদ্রতাপে মাটি ফেটে চৌচির। এমতাবস্থায় এলাকাবাসী সকলে হুজুরের কাছে সমাধান চাইতে আসেন। তখন হুজুর কিবলা (রহঃ) প্রচণ্ড রোদের তাপে খোলা ময়দানে সালাতুল ইস্তিসকা তথা বৃষ্টির নামাজ পড়েন। নামাজ শেষে মোনাজাত করতে হাত তুলেন। মোনাজাত শেষ না হতেই হঠাৎ এক টুকরো মেঘ এসে এমনভাবে বৃষ্টি আরম্ভ হয় উপস্থিত সকলেই ভিজে গেলেন। চট্টগ্রাম ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার সাবেক উপাধ্যক্ষ আল্লামা ছগির আহমদ উসমানী বলেন, একবার চট্টগ্রাম শহরে একটি দোয়া মাহফিল শেষে আয়োজকের বাসায় যাওয়ার সময় ঘরের মালিক দরজার তালার চাবি নিতে ভুলে গেলেন। তখনকার সময়ে শহর থেকে গ্রামের বাড়ি এসে চাবি নিয়ে শহরে পৌঁছা অনেক সময়ের ব্যাপার। উপস্থিত আলেমগণের মধ্যে একজন আরজ করলেন, হুজুর, আপনি যদি সত্যিকার আওলাদে রাসুল (দঃ) হয়ে থাকেন, তাহলে যেকোনো চাবি দিয়েই তালা খুলে যাবে। সকলের অনুরোধে হুজুর কিবলা (রহঃ) অন্য একটি চাবি নিয়ে বিসমিল্লাহ বলে তালায় লাগানোর সাথে সাথেই আল্লাহ পাকের রহমতে তালা খুলে যায়। সেদিন থেকে হুজুর কিবলা (রহঃ) কে সবাই একনামে ‘সৈয়দ ছাহেব হুজুর’ হিসেবেই সম্বোধন করেন। এভাবে অসংখ্য কারামত ও ইলমের জাহাজ নিয়ে অগণিত মুরিদ, ভক্তদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে ১৮ ডিসেম্বর ১৯৯৫ সালে সোমবার দিবাগত রাত ৮টায় পৃথিবী থেকে বিদায় নেন (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)। ১৪ ও ১৫ ডিসেম্বর তাঁর ৩০তম বার্ষিক ওরশ শরীফ। আল্লাহ পাক যেনো এই দরবারের তাসাউফের আলোয় আমাদের হৃদয় আলোকিত করেন।










