উচ্ছেদের পর পুনরায় উঠছে ইটভাটা

পরিবেশের কর্মকর্তাদের যোগসাজশের অভিযোগ

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ৩১ মার্চ, ২০২১ at ৪:৪৬ পূর্বাহ্ণ

উচ্চ আদালতের নির্দেশে উচ্ছেদের পর পুনরায় উঠছে একের পর এক ইটভাটা। সাতকানিয়ায় এ ধরনের বেশ কয়েকটি ইটভাটার খোঁজ মিলেছে। অভিযোগ উঠেছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তার পরামর্শ ও যোগসাজশে উচ্ছেদকৃত স্থানে নতুন চিমনি নির্মাণ করে ইটভাটার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মুফিদুল আলম আজাদীকে বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর একা নয়, আদালত থেকে আরও কয়েকটি সরকারি দপ্তরকে বিবাদী করা হয়েছে। তারপরও স্বল্প জনবল দিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে। এছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালাতে গেলে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের সহযোগিতা দিয়ে করতে হয়। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন চাইলে অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ কার্যক্রম আরও সহজ হয়। তিনি বলেন, অবৈধ ইটভাটাগুলোতে যদি পরিবেশ অধিদপ্তরের কারও যোগসাজশের প্রমাণ পাওয়া যায়, সংশ্লিষ্ট যেই হোক, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আদালতের আদেশ থাকা সত্ত্বেও চট্টগ্রামের সব ইটভাটা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উচ্ছেদ না করায় গত ১৮ মার্চ চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের পরিচালক এবং উপপরিচালককে আদালত অবমাননার রুল জারি করেন বিচারপতি মজিবর রহমান মিয়া এবং বিচারপতি মো. কামরুল হোসেনের দ্বৈত বেঞ্চ। ১০ দিনের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
জানা গেছে, সাতকানিয়া রাস্তার মাথা এলাকার ৭বিএম ব্রিকস (সেভেন স্টার ব্রিকস ম্যানুফ্যাকচারিং) নামের ইটভাটাটি গত ৫ জানুয়ারি উচ্ছেদ করে প্রশাসন। এক সপ্তাহ না যেতেই ওই স্থানে নতুন করে চিমনি নির্মাণ করে পুরোদমে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে ইটভাটাটি। নতুন করে প্রায় দুই মাস কার্যক্রম চালানোর পর গত ২২ মার্চ ইটভাটাটি উচ্চ আদালত থেকে স্টে অর্ডার নেওয়ারও দাবি করেছে। এছাড়া কেঁওচিয়া ইউনিয়নের নয়াখাল এলাকায় শাহজালাল ব্রিকস ও চট্টগ্রাম ব্রিকস নামের আরও দুটি ইটভাটার কার্যক্রম শুরু হয়েছে একইভাবে।
সাতকানিয়া ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি নেজাম উদ্দিন বলেন, সাতকানিয়ায় উচ্ছেদকৃত স্থানে নতুন করে যেগুলো হচ্ছে সবগুলোই জিগজাগ প্রযুক্তির। সম্ভবত পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানিয়ে নতুন করে জিগজাগ চিমনি তোলা হয়েছে।
কেঁওচিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনির আহমদ আজাদীকে বলেন, সেভেন বিএম বাদেও নয়াখালের মুখে এসবিএম এবং চট্টগ্রাম ব্রিকস নতুন করে কার্যক্রম শুরু করেছে। মূলত সাতকানিয়া জুড়ে বেপরোয়াভাবে মাটি কাটা চলছে। টপসয়েলও কাটা হচ্ছে। যে যার মতো করে মাটি কাটছে। মাটি কাটা বন্ধ করা না গেলে অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করা কষ্টসাধ্য।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুস সালাম চৌধুরী বলেন, অনুমোদনহীন যেকোনো ইটভাটাই অবৈধ। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী চট্টগ্রামে অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সেখানে উচ্ছেদকৃত স্থানে লাইসেন্স না নিয়ে নতুন করে ইটভাটার কার্যক্রম শুরু করলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভেঙে দেওয়ার পরও নতুন করে কীভাবে ইটভাটার কার্যক্রম শুরু করেছেন, জানতে চাইলে সাতকানিয়া সেভেন স্টার ব্রিকসের মালিক সামশুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, আমার ইটভাটাটি গত ৬ জানুয়ারি ভেঙে দিয়েছে। কিন্তু আমার লাইসেন্স ছিল। এর আগে আমি সব ধরনের বকেয়া ফি জমা দিয়ে আইন মোতাবেক মানমাত্রার মধ্যে চুল্লি ব্যবহার করার অনুমতি চেয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদন করেছিলাম। ১০ জানুয়ারি সেই আবেদনও খারিজ করে দিয়েছে। ওই বিষয়ে আমি পরিবেশ অধিদপ্তরের সচিবের কাছে আপিল করেছি। এছাড়া গত ২২ মার্চ হাই কোর্ট থেকে দুই মাসের জন্য স্টে অর্ডার নিয়েছি। শুধু আমি নই, সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার অনেকে দুই মাসের জন্য এ ধরনের স্টে অর্ডার নিয়েছে।
এ ব্যাপারে রিটকারী আইনজীবী হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, গত কয়েকদিনে কিছু ইটভাটা মালিক তথ্য গোপন করে হাই কোর্ট থেকে দুই মাসের জন্য স্টে অর্ডার নিয়েছে শুনেছি। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে কিছু সার্টিফিকেট পেয়েছি বিকেলে (বুধবার), যে কারণে হাই কোর্ট থেকে সত্যাসত্য চেক করতে পারিনি।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের অবৈধ ইটভাটা মালিকরা সর্বোচ্চ আদালত থেকে তাদের ইটভাটা চালানোর সুযোগ পাননি। সংবিধান অনুযায়ী সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত সবার জন্য বাধ্যতামূলক। হাই কোর্টের জন্যও বাধ্যতামূলক। কিন্তু কিছু ইটভাটা মালিক প্রতারণা করে আপিল বিভাগে গিয়ে যে সুযোগ পাননি, সে বিষয়টি গোপন করে অন্য আদালত থেকে আদেশগুলো নিচ্ছেন। যেসব ইটভাটা মালিক এসব করছেন তারাও আদালত অবমাননা করছেন। আমি তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার ব্যাপারে অভিযোগ আনব।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার উপ-পরিচালক জমির উদ্দিন আজাদীকে বলেন, আদালতের নির্দেশে অবৈধ সব ইটভাটা উচ্ছেদ করা হবে। প্রথম পর্যায়ে সবগুলো ইটভাটা বন্ধ করার পর নতুন করে আবার যারা কার্যক্রম শুরু করছে সেগুলোতে পুনরায় অভিযান চালানো হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপদত্যাগের ঘোষণা দিলেন হেফাজতের নায়েবে আমির
পরবর্তী নিবন্ধফেসবুক লাইভে উস্কানি দেয়ার অভিযোগে তরুণ গ্রেপ্তার