‘পুনর্বাসন ছাড়া অমানবিক উচ্ছেদ করবেন না’, ‘নদী রক্ষায় রায় হয়, মানুষ রক্ষায় কেন নয়,’ ‘আমরা পড়তে চাই, আমাদের স্কুল ভাঙবেন না’; এমন নানা দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড, পোস্টার ও ব্যানার হাতে গতকাল বিকেলে দক্ষিণ পতেঙ্গার বিমানবন্দর সংলগ্ন সড়কে মানববন্ধন করেছে লালদিয়ার চরের হাজারো বাসিন্দা।
তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, বিএনপি নেতৃবৃন্দসহ এলাকার জনসাধারণ। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ৪৮ বছর আগে সরকারকে নিজেদের ভিটে-মাটি ছেড়ে দিয়ে লালদিয়ার চর এলাকার ২ হাজার ৩শ পরিবার এখন নিঃস্ব। তাদের থাকার জায়গার ব্যবস্থা না করে উঠিয়ে দেওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘন। মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য স্থাপনা নির্মাণ করে দিয়ে যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন, সেখানে এ চরবাসীদের সামান্য থাকার জায়গা ব্যবস্থা করে দেওয়া সরকারের পক্ষে কোনো বিষয় নয়। আমরা এ জনবসতি উচ্ছেদ না করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। ৪১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি ছালেহ আহমদ চৌধুরী বলেন, লালদিয়ার চর এলাকার লোকজন খুবই গরীব। উচ্ছেদ করলে ভাড়া বাসায় যাওয়ার মতো সামর্থ্য পরিবারগুলোর নেই। ২৫ ফেব্রুয়ারি যদি কর্তৃপক্ষ তাদের উচ্ছেদ করতে আসে তাহলে লালদিয়ার চরবাসী ওইদিন বিমানবন্দর সড়কে শুয়ে থাকবে।
মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন, মহিলা কাউন্সিলর শাহানুর বেগম, মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আলম টেন্ডল ও আবদুল গফুর, মহানগর আওয়ামী লীগ সদস্য হাজী মো. ইলিয়াছ, সিরাজুদ্দৌলা, আলমগীর আলম, আবদুল হালিম, জামাল উদ্দিন, ওয়াহিদ হাসান, আবুল হোসেন, শাকিল হারুন, জাবেদ হোসেন, জাকারিয়া দস্তগীর, নুরুল আজম রনি, ওয়াহিদুল আলম চৌধুরী, আবদুল কাদের প্রমুখ।
মাননবন্ধন থেকে লালদিয়ার চরে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নিন্দা জানানো হয়।
জানা গেছে, কর্ণফুলী নদী তীরের বন্দর এলাকা লালদিয়ার চর থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ২ মাসের মধ্যে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। তবে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা না হলে মামলার বিবাদীদের আদালতে উপস্থিত হতে হবে উল্লেখ করে আগামী ৯ মার্চ মামলার পরবর্তী দিন নির্ধারণ করেছেন হাইকোর্ট।
চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার, ডিসি, র্যাব কমান্ডার, সিডিএ চেয়ারম্যান ও সিটি করপোরেশনের প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের এই মামলায় বিবাদী করা হয়েছে। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
মানবন্ধনে অংশ নেওয়া চরবাসী জানান, কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ ছাড়াই আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি তাদের উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দরের বিষয়টি নোটিশের মাধ্যমে জানানো হলে স্থানীয়দের মাঝে উচ্ছেদ আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।