বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশে উগ্রবাদ যাতে মাথাচাড়া দিতে না পারে, সেজন্য নারী সমাজকে সজাগ থাকতে হবে। তিনি বলেন, একজন মায়ের চোখে যেমন বাংলাদেশ হওয়া দরকার, তেমন একটি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে আগামী জাতীয় নির্বাচন দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, দেশে যাতে আর কোনভাবেই আর কোনদিন ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ, চরমপন্থা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, এ ব্যাপারে বিশেষ করে নারী সমাজকে অত্যন্ত সতর্ক এবং সজাগ থাকতে হবে এবং সতর্ক ও সজাগ থাকার জন্য আমি সমগ্র বাংলাদেশের মা–বোনদেরকে আহ্বান জানাই। দেশের গণতন্ত্রকামী জনসাধারণের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আসুন, নারী–পুরুষ–শিশু, ধর্ম–বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য শহীদদের কাঙ্ক্ষিত একটি ইনসাফ ভিত্তিক গণতান্ত্রিক নিরাপদ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানানোর জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি। তিনি বলেন, সবার জন্য একটি নিরাপদ, গণতান্ত্রিক, মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার চলমান অভিযাত্রায় অতীতের মতো আগামী দিনেও আমাদের মা–বোনদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং সমর্থন দৃঢ়ভাবে আশা করি। বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উদ্যোগে জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে নারীর অবদান’ শীর্ষক এই আলোচনা অনুষ্ঠিত সভা হয়। আলোচনায় শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস। অনুষ্ঠানে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে নারীদের অবদানের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয় এবং পরে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সম্মাননা মেডেল প্রদান করে আয়োজক কমিটি। খবর বাসসের।
বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে নারী প্রধানদের নামে ফ্যামিলি কার্ড দেয়া হবে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে পরিবার হিসেবে যদি আমরা চিন্তা করি, তাহলে পরিবারের সংখ্যা প্রায় চার কোটি। এর মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারগুলোর মধ্যে থেকে আমরা যে পরিকল্পনা করছি সামনের দিনগুলোতে সুযোগ আসলে বাস্তবায়ন করব, সেটা হচ্ছে প্রথম পর্যায়ে কমপক্ষে ৫০ লাখ প্রান্তিক পর্যায়ের পরিবারের কাছে আমরা ফ্যামিলি কার্ড চালু করব।
তিনি বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ, আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি জনগণের রায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে পরিবারের নারী প্রধানের নামে এই ফ্যামিলি কার্ড ইস্যু করব। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, প্রান্তিক পরিবারগুলোকে প্রতি মাসে রাষ্ট্রীয়ভাবে আর্থিক অথবা প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তা প্রদান করা। আমরা আশা করছি, এই ধরনের উদ্যোগে একদিকে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ঘটবে, অপরদিকে পরিবারগুলো ধীরে ধীরে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে।
ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে তার নিজের পরিবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিগত দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় অনেক মা তার প্রিয় সন্তান হারিয়েছেন। আমার মাও তার এক সন্তান (আরাফাত রহমান কোকো) হারিয়েছেন আপনাদেরই মতো।
তিনি বলেন, ‘বহু স্ত্রী তার প্রিয়তম স্বামীকে হারিয়েছেন, বোন তার ভাইকে হারিয়েছেন, অনেক মা বহুভাবে নির্যাতিত–নিপীড়িত হয়েছেন। অনেক পরিবারের পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন–বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আজও শহীদ আর স্বজন হারানোর অসংখ্য মা–বোনের আত্মত্যাগের মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত ফ্যাসিস্ট শাসনের অবসানের পর আমাদের সবার সামনে শিশু–নারী–পুরুষ–ধর্ম–বর্ণ নির্বিশেষে একটি মানবিক বাংলাদেশ গঠনের সুযোগ এসেছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শহীদদের কাঙ্ক্িষত বাংলাদেশ গঠনের জন্য আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আগামী দিনে নারীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নারীদের উন্নয়নে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, ‘বিএনপি বিশ্বাস করে, দেশের অর্ধেক নারীকে রাষ্ট্র এবং রাজনীতির মূল ধারার বাইরে রেখে নিরাপদ বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, নারী শক্তিকে কর্মপরিকল্পনার বাইরে রেখে কোন রাষ্ট্রই এগোতে পারে না। তাই নারী শক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে দেশের নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, তাদের আশা–আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে বিএনপি আগামী দিনের সকল কর্মপরিকল্পনা সাজিয়েছে। বিশ্বায়নের এই সময়ে নারীদের জন্য শিক্ষা ও চাকরির বিষয়টি অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশ্বের সব দেশে নারীদের জন্য শিক্ষা, চাকরি, ব্যবসাসহ সকল সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত। নারী–পুরুষ ভেদাভেদ না করে সবাইকে কর্মদক্ষ করে গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি, যদি আমরা দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাই।
তারেক রহমান বলেন, ‘বিশেষ করে নারীদের শিক্ষা দান ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা গেলে নারীর প্রতি বৈষম্য এবং অর্থনৈতিক টানাপোড়েন জনিত পারিবারিক সহিংসতা রোধ করা সম্ভব হবে। সে কারণেই বিএনপির স্লোগান ‘ক্ষমতায়িত নারী শক্তি, পরিবারের মুক্তি’। বিএনপির নীতি মানবিক মূল্যবোধ, দক্ষ জনশক্তি তৈরির রাজনীতি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির রাজনীতি। দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আফরোজা খান রিতার সভাপতিত্বে ও মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, জেএসডির সহ–সভাপতি তানিয়া রব, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক তাজমেরী এস এ ইসলাম, তাহসিনা রুশদীর লুনা, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক শামীমা সুলতানা, শহীদ পরিবারের সদস্য সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজিদা ইসলাম তুলি এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনপ্রিয় টকশো উপস্থাপক হাসিনা আখতার বক্তব্য রাখেন।