উগ্রবাদ ঠেকাতে না পারলে ফের গণতন্ত্রের কবর হবে : তারেক

| বৃহস্পতিবার , ২০ মার্চ, ২০২৫ at ৬:৫৮ পূর্বাহ্ণ

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও চরমপন্থা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে দেশে আবার গণতন্ত্রের কবর রচিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল বুধবার ইস্কাটনে লেডিস ক্লাবে বিএনপির ইফতার আয়োজনে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি সতর্ক করে বলেন, উগ্রবাদীদের অপতৎপরতা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে গণতান্ত্রিক বিশ্বে ভাবমূর্তি সংকটে পড়তে পারে বাংলাদেশ।

রাজনীতিকদের সম্মানে আয়োজিত দলের ইফতারপূর্ব আলোচনা সভায় তারেক রহমান বলেন, আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, ধর্মীয় উগ্রবাদীদের অপতৎপরতা ও চরমপন্থা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পরিচয় দিলে উগ্রবাদী জনগোষ্ঠী এবং পরাজিত ফ্যাসিবাদী অপশক্তি দেশে পুনরায় গণতন্ত্রের কবর রচনা করবে। অপর দিকে গণতান্ত্রিক বিশ্বের ইমেজ সংকটে পড়তে পারে বাংলাদেশ। খবর বিডিনিউজের।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, চরম পন্থা ও ধর্মীয় উগ্রবাদীদের অপতৎপরতা প্রতিহত করার পাশাপাশি গণহত্যাকারী পলাতক মাফিয়া চক্রকে যেকোনো মূল্যে বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থা শক্তিশালী করাই হবে বিএনপিসহ গণতান্ত্রিক পক্ষের শক্তির আগামী দিনের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। জনপ্রত্যাশার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, একটি রাষ্ট্রে একটি সরকারের মেয়াদ নির্দিষ্ট। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক নীতি কিংবা রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা দীর্ঘস্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদী। সুতরাং রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী এবং টেকসই কাযর্কর রাখতে জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায় নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। দীর্ঘ দেড় দশক ধরে ক্ষমতাহীন জনগণ এবার নিজেদের ভোটের অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে সরকার প্রতিষ্ঠা করে নিজেদের অধিকার বুঝে নিতে প্রস্তুত।

তারেক বলেন, জননিরাপত্তা নিশ্চিত এবং জনদুর্ভোগ কমানোর সকল পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি জনগণের ভোটে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনকেই সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেবে এটাই গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রত্যাশা। তিনি বলেন, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বৈষ্যমহীন নিরাপদ গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য একটি নির্বাচিত জাতীয় সরকারের মাধ্যমেই বিএনপি রাষ্ট্র ও রাজনীতি মেরামতের কাজগুলো সফল করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। সেই লক্ষ্য পূরণে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি জনগণের রায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জাতীয় সরকার করবে যা অতীতেও আমরা জাতির সামনে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী, তাদেরকে নিরাপত্তাহীন রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব। সরকার, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি কিংবা অন্য কোনো কাজে বেশি মনোযোগী থাকার কারণে আমাদের মাবোনকন্যারা নিরাপত্তা সংকটে পড়েছে কি না এই বিষয়টি গভীরভাবে ভাবার প্রয়োজন রয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জাতীয় ঐক্যমত কমিশন হয়েছে। সংস্কার প্রস্তাবগুলো রাজনৈতিক দলের কাছে পৌঁছে গেছে। আপনারা নিশ্চয় তা গভীরভাবে পর্যালোচনা করবেন, দেখবেন, পরীক্ষা করবেন। এই দেশে জাতির জন্য যেটা প্রয়োজন বাংলাদেশের মানুষের জাতীয় ইতিহাস, তার কৃষ্টি, তার ঐতিহ্য, তার একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সব কিছুকে নিয়ে যেন আমরা সামনের দিকে এগুতে পারি। এটাই হওয়া উচিত আমাদের সকলের লক্ষ্য। আজকে এ কথাগুলো এজন্য তুললাম, আজকে বিভিন্ন রকম কথাবার্তা বিভিন্ন মিডিয়ায় চলে আসছে, সমাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন কথা উঠছে। আমাদের মধ্যে বিভিন্ন রকম বিভ্রান্তি ছড়ানো শুরু করেছে। গণতন্ত্রের পথে যাওয়া ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প নেই।

এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমেদ বলেন, আমাদের একটা জিনিস অনুধাবন করতে হবে যে, দেশটা আমাদের। ভারতের দালালি করে কোনো লাভ হবে না। আমরা বহুদিন দালালি করেছি বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার দাবি, এবার ভারতের পেঁয়াজও নাই, এবার ভারতের চালও নাই। কিন্তু বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে আছে। নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে জোর দিয়ে অলি আহমেদ বলেন, অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যদি আমরা আগাই আমরা আর কখনো স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারবো না। তারেক রহমানসহ তরুণ নেতৃত্ব যদি অভিজ্ঞতাকে নিয়ে এগোতে পারে তাহলে এদেশে আর পেছনের দিকে ফিরে তাকাতে হবে না বলে মন্তব্য করেন অলি।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, আমি মনে করি, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের জন্য এখন জাতীয় ঐক্যই হবে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। এই লক্ষ্য রেখেই যার যার জায়গা থেকে আমাদেরকে চারটি বিষয়ে এক থাকতে হবে। এক. বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব বিষয়ে কোনো আপোষ নাই। দুই. একটি টেকসই গণতন্ত্র। তিন. একটি ফেয়ার ইলেকশন এবং চার. দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ।

জাতীয় নাগরিক পার্টিএনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, একটি কথা বলা হচ্ছে যে, ইনক্লুসিভ ইলেকশন। আমি মনে করি যে, এই ইনক্লুসিভ ইলেকশন হওয়ার মত বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার মত রাজনৈতিক দল বর্তমানে দেশে রয়েছে। ৫ আগস্ট বাংলাদেশের জনগন যে শক্তিকে পরাজিত করেছেৃ মুজিববাদ ও আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্টদের বিদায় করেছে বাংলাদেশের সামনের ভবিষ্যৎ, রাজনীতি, নির্বাচন সেখানে সেই মুজিববাদী রাজনীতির স্থান আসলে হবে না। আন্দোলনের সময় হত্যা ও গণহত্যার অভিযোগে বিচার প্রক্রিয়া চলমান আছে তুলে ধরে তিনি বলেন, বিচারের আগে তো সেই প্রশ্নটিই আসে না। আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে সেই আহ্বান রাখবে যে, এই বিষয়েও যাতে আমরা রাজনৈতিক ঐক্যমতে আসতে পারি।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর বক্তব্য রাখেন।

ইফতারে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসিপিবির মোহাম্মদ শাহ আলম, রুহিন হোসেন প্রিন্স, খেলাফত মজলিশের আমির আল্লামা মামুনুল হক, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টিবিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ, বাংলাদেশ জাসদের শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও নাজমুল হক প্রধান, বিকল্পধারা বাংলাদেশ নুরুল আমিন ব্যাপারী, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির বহ্নিশিখা জামালী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ ও মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু ও আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, বিএলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, জেএসডির শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, গণ দলের চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মওলা চৌধুরী, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ইসলামী ঐক্যজোটের আব্দুর রকিব, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টিজাগপার খন্দকার লুৎফুর রহমান ও রাশেদ প্রধান, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম ও জাতীয় নাগরিক পার্টিএনসিপির সারজিস আলম যোগ দিয়েছেন।

ইফতার আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দীন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মীর নাসির, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আহমেদ আজম খান, আবদুস সালাম পিন্টু, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, মিজানুর রহমান মিনু, আফরোজা খান রীতা, জহির উদ্দিন স্বপন, ইসমাইল জবিহউল্লাহ, হাবিবুর রহমান হাবিব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ
পরবর্তী নিবন্ধনির্বাচন সামনে রেখে পুলিশকে প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার