উখিয়ায় ক্যাম্পে ভয়াবহ আগুন

পুড়ল ২ হাজার ঘর ১২ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয়হীন

উখিয়া প্রতিনিধি | সোমবার , ৬ মার্চ, ২০২৩ at ৬:২১ পূর্বাহ্ণ

উখিয়ার বালুখালীর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার বিকালে শুরু হওয়া অগ্নিকাণ্ড সন্ধ্যার দিকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। প্রাথমিকভাবে ২ হাজারের মতো ঘর পুড়ে অন্তত ১২ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিট, সেনাবাহিনী, থানা ও এপিবিএন, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, প্রশাসনের লোকজন ছাড়াও স্থানীয় লোকজন ও রোহিঙ্গারা অংশ নেন।

 

জানা যায়, গতকাল বিকাল পৌনে ৩টার দিকে উখিয়ার বালুখালী ১০ ও ১১ নং ক্যাম্পের একাধিক স্থানে আগুনের শিখা দেখা গেছে। পাশাপাশি ২টি ক্যাম্পে আগুন ছড়িয়ে পড়ায় অন্তত ২ হাজারের মতো ঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও অন্যান্য স্থাপনা পুড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ক্যাম্পের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ৮ এপিবিএন গত রাতে এক বিবৃতিতে জানায়, বিকাল পৌনে ৩টার দিকে উখিয়ার বালুখালী ১১ নং ক্যাম্পের ডি ব্লকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ওই ক্যাম্পের ডি, এ ও বি ব্লকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

৮ এপিবিএনের সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ জানান, এপিবিএন অফিসার ফোর্স ও ফায়ার সার্ভিসের প্রচেষ্টায় বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। এতে আনুমানিক ২ হাজারের বেশি রোহিঙ্গার বসতি পুড়ে গেছে এবং প্রায় ১২ হাজারের মতো রোহিঙ্গা ঘরছাড়া হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ক্যাম্পের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন অফিস সূত্র জানায়, যে সকল আশ্রিত রোহিঙ্গার ঘর পুড়ে গেছে তাদেরকে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন অফিসের ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন লার্নিং সেন্টার, মাদ্রাসা ও এনজিওর কমিউনিটি সেন্টারে সাময়িক আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা, অভিবাসন সংস্থা ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের থাকার ব্যবস্থা ও খাবার সরবরাহ করবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ক্যাম্পের প্লাস্টিক তেরপাল ও বাঁশের নির্মিত ঝুপড়িগুলোতে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া জাতিসংঘের দেয়া রান্নার কাজে ব্যবহৃত প্রতিটি ঘরে এলপিজি সিলিন্ডারগুলোতে মুহূর্তের মধ্যে একের পর এক বিস্ফোরণ ঘটতে থাকে। সাথে ছিল মৃদু বাতাস। তাই আগুন দ্রুত এক ব্লক থেকে অন্য ব্লকে ছড়িয়ে পড়ে। ক্যাম্প১১ এর ক্ষতিগ্রস্ত ব্লক সংলগ্ন ৯, ১০ ও ১২ নং ক্যাম্পের কিছু ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. সামছুদৌজা নয়ন বলেন, গতকাল বিকাল পৌনে ৩টায় উখিয়ার বালুখালী ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন লাগে। প্রাথমিকভাবে দুই হাজারের বেশি রোহিঙ্গার ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এতে অন্তত ১২ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের সাময়িক আশ্রয় ও প্রয়োজনীয় খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

উখিয়া ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ইনচার্জ মো. এমদাদুল হক বলেন, ক্যাম্পে আগুন নিয়ন্ত্রণে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়। ক্যাম্পগুলোতে পানির সংকট রয়েছে। অনেক দূর থেকে পানি সংগ্রহ করে তা নিয়ে একদিকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতেই পানি শেষ। আবার পানির জন্য দৌড়ানো। পানি নিয়ে ফের

আসতে আসতে নতুনভাবে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। রান্নার এলপিজি চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে প্রাথমিকভাবে জেনেছি। ক্যাম্পের ব্লকগুলোর অভ্যন্তরে সরু গলির কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ে। প্রতিটি ঘরে গ্যাস সিলিন্ডার থাকায় আগুনের

ভয়াবহতা বেড়ে যায়। তিনি জানান, উখিয়া ফায়ার সার্ভিসের ৪টি, কক্সবাজারের ৩টি, রামুর ১টি, টেকনাফের ১টি ও স্যাটেলাইট ১টি ইউনিটসহ ১০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত সময় লাগে।

উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, ঘটনাস্থলের আশেপাশে এপিবিএন ও থানা পুলিশের যৌথ টহলের মাধ্যমে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন বললেন রোহিঙ্গা নেতা
পরবর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার অপেক্ষায় বাঙালি