উখিয়া উপজেলার কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঢলের পানিতে নেমে আসা বর্জ্যে নষ্ট হয়ে গেছে কয়েকটি বিলের অন্তত দুই হাজার একর ধানক্ষেত। গত সপ্তাহের বৃষ্টিতে সৃষ্ট ঢলের সাথে বর্জ্য নেমে আসলে বেশ কয়েকজন কৃষকের পাকা ধান পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। এতে আর্থিকভাবে বেশ ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন তারা।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মোহাম্মদ আলী জানান, চলতি বোরো মৌসুমে স্থানীয় মাছকারিয়া বিলে ৫ একর জমিতে তিনি বোরো ধানের চাষ করেছিলেন। ধান পেকেও উঠেছিল। বৈশাখের মাঝামাঝিতে ধান কাটার প্রস্তুতি ছিল তার। কিন্তু তার আগেই বৃষ্টিতে জমির পাশের পাহাড়ে অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্জ্য এসে তার অধিকাংশ পাকা ধান তলিয়ে গেছে।
শুধু তিনি নন গত সপ্তাহের ভারী ও মাঝারি এক পশলা বৃষ্টিতে উপজেলার কুতুপালং, লম্বাশিয়া, হাকিমপাড়া, বালুখালী, ময়নারঘোনা ও পালংখালীর বিভিন্ন এলাকায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্জ্যের কারণে পাকা ও আধাপাকা ধান নষ্ট হয়ে গেছে।
স্থানীয় কৃষক ও জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া তথ্য মতে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশপাশের গ্রামগুলোতে অন্তত ২০০ একর জমির বোরো ধান বর্জ্যে তলিয়ে গেছে। মানুষের মল–মূত্রের সঙ্গে প্লাস্টিক পণ্যের বর্জ্যে ক্ষেতে নামা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।
শুধু এ বছর নয়, প্রতিবছর বোরো আবাদ মৌসুমে এমন ক্ষতির শিকার হচ্ছেন এই এলাকার কৃষকরা। একই সাথে সবজি চাষেও বিঘ্ন ঘটছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্জ্যে। মৌসুমে একটু বৃষ্টি হলেই ক্যাম্পের বর্জ্য এসে ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন না থাকায় কৃষকরা এমন অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। তাই রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরের বর্জ্য আসা বন্ধসহ খাল খননের দাবিও করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, সামান্য বৃষ্টিতে ক্যাম্পের নালা উপচে ফসলি জমিতে ঢুকে পড়ছে মানববর্জ্য। পাশাপাশি প্লাস্টিক, পলিথিন ও মেডিকেল বর্জ্যও আসছে। এরমধ্যে জমিতে বর্জ্য জমে পচে যাচ্ছে ধান ও সবজি ক্ষেত। এভাবে প্রতি বছর বর্জ্য এসে পড়ায় লোকসান গুণছেন স্থানীয় কৃষকরা। জরুরি ভিত্তিতে ড্রেন নির্মাণ ও খালগুলো সংস্কার করে বর্জ্য আসা বন্ধ করা দরকার।
রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মীর শাহেদুল ইসলাম রোমান বলেন, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে এ বিষয়ে বারবার তাগাদা দিয়েও সমস্যার সমাধান কিংবা কৃষকদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নেয়নি। এ বিষয়ে কঙবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশপাশের খালগুলো খনন ও সংস্কারের জন্য আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) থেকে একটি তহবিল পাওয়া গেছে। শিগগিরই কাজ শুরু করা হবে।