ঈদ হোক আত্মশুদ্ধি, সংযম ও সম্প্রীতির মেলবন্ধন

| শনিবার , ২৯ মার্চ, ২০২৫ at ৫:৩২ পূর্বাহ্ণ

ঈদ শুধু আনন্দ উৎসবই নয়; এটি আমাদের শান্তি, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও ত্যাগের শিক্ষা দেয়। পরস্পরের মধ্যে আনন্দ ও দুঃখ ভাগাভাগি করার মাধ্যমে আমরা মৈত্রী ও সমপ্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হই। পবিত্র রমজানে দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার কষ্ট ও ক্লান্তির পর মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে মুসলিম মিল্লাতের জন্য এক শ্রেষ্ঠ উপহার হলো পবিত্র ঈদুল ফিতর। মহান আল্লাহর অনুকম্পা, ক্ষমা, অনুগ্রহ ও নৈকট্য লাভের লক্ষ্যে ঈদুল ফিতর বিশ্ব মুসলিমের জন্য এক অনন্য উৎসব। বলা হয়ে থাকে, এটি মুসলিম জাহানের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। হিংসাবিদ্বেষ ও হানাহানি ভুলে মানুষ একে অপরের ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়। ঈদ ধনীগরিব নির্বিশেষে সবার জীবনে আনন্দের বার্তা বয়ে নিয়ে আসে। ঈদের আনন্দ আমাদের সবার।

ঈদ আরবি শব্দ। এটি ‘আওদ’ শব্দমূল থেকে উদ্ভূত। এর আভিধানিক অর্থ হল ফিরে আসা, প্রত্যাবর্তন করা, বার বার আসা। মুসলমানদের জীবনে চান্দ্র বৎসরের নির্দিষ্ট তারিখে প্রতি বছরই দুটি উৎসবের দিন ফিরে আসে। তাই দিন দুটিকে ঈদ বলা হয়। ফিতর শব্দের অর্থ হলো ভেঙে ফেলা, বিদীর্ণ করা। মুসলমানরা রমজানের চাঁদ দেখার সাথে সাথে রোজা রাখা আরম্ভ করে এবং শাওয়ালের চাঁদ দেখার সাথে সাথে রোজা ভেঙে দেয় তথা রোজা রাখা ছেড়ে দেয়। সে কারণে এটিকে ঈদুল ফিতর তথা রোজা ভাঙার আনন্দ বলা হয়।

ইসলামী চিন্তাবিদরা বলেন, ঈদ মানে ফিরে আসা বা প্রত্যাবর্তিত হওয়া। তাই ঈদের মাধ্যমে খুশির উৎসব ও প্রত্যাবর্তনের বার্তা লিপিবদ্ধ রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে খুশির হাওয়া বইতে থাকে, সর্বত্র উৎসবের আমেজ বিরাজ করে, মানুষের পুনর্মিলনী বা সম্মিলন ঘটে, তাই প্রাণের এ উৎসবকে আমরা ঈদ বলে থাকি। আবার মহাকালের ঘূর্ণাবর্তে প্রতি বছরই ঈদ আমাদের মাঝে ফিরে ফিরে আসে, মানবচিত্তে আনন্দউল্লাসের দোলা দিয়ে যায়, সমাজমানসে নিখুঁত শিল্পীর অদৃশ্য তুলি দিয়ে প্রত্যাবর্তনের চিত্রাংকন করে বেড়ায় এবং এ প্রত্যাবর্তনের গল্পে থাকে তাৎপর্যময় ও জীবনজগতের জন্য পরম শিক্ষা। তাই আমাদের উচিত, ঈদ পালনের ভেতর দিয়ে শুধু উৎসবের সাগরে অবগাহন না করে প্রকৃত অর্থে এই প্রত্যাবর্তনের বার্তা, তাৎপর্য ও শিক্ষাকে গ্রহণ করা; তবেই আমাদের ঈদ উদযাপন সার্থক হয়ে উঠবে।

ঈদ সমাজে বিভেদ ও বৈষম্য দূর করার মাধ্যমে একতার শিক্ষা দেয়। বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতিত্বের ঐক্যের এ দিনে আজ বিশ্বের সবখানে মুসলমান লাঞ্ছিত, নিপীড়িত, নির্যাতিত। ইসলামের মূল শিক্ষা ও আদর্শ থেকে বিচ্যুত হওয়ার কারণে আজকে মুসলিমদের এ করুণ দশা। বিশ্বব্যাপী খুশির প্লাবনেও আজ ফিলিস্তিনি মুসলিম ভাইদের মাঝে আনন্দের রেশমাত্র নেই। তাদের মাঝে রোজা ছিলোইফতার ছিলো না, তারাবি ছিলো সাহরি ছিলো না। খাদ্যের অভাবে মানুষ পশুর খাদ্য ঘাস, লতা পাতা খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। প্রতিনিয়তই মরছে মানুষ। নেই খাদ্য চিকিৎসা, বাসস্থান। ভুখা, নির্ঘুম রক্তাক্ত শরীর নিয়ে খোলা আকাশের নিচে দিনাতিপাত করছে। যাপন করছে মানবেতর জীবন।

ঈদ একতার শিক্ষা দেয়, সমাজের বিভেদ ও বৈষম্য দূর করার শিক্ষা দেয়। ধর্মীয় বিধিবিধানের মাধ্যমে ধনীগরিব সর্বস্তরের মানুষকে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস নেয়। সর্বোপরি পরস্পরের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের শিক্ষা দেয়। মহান আল্লাহর কাছে আমাদের প্রত্যেকের প্রার্থনা, পৃথিবীর সকল মানুষের সুখশান্তি, কল্যাণ ও উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি। বর্তমানের ওপর দাঁড়িয়ে ভবিষ্যতকে তৈরী করা; আগামী দিনগুলোতে যেন মানুষ শির তুলে চলতে পারে। আমরা চাই সবার জীবন সত্য, সুন্দর ও সৌন্দর্যমণ্ডিত হোক! হাসিুখুশি ও ঈদের অনাবিল আনন্দে প্রতিটি মানুষের জীবন পূর্ণতায় ভরে উঠুক!

ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে মুসলমানদের আত্মশুদ্ধি, সংযম, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির মেলবন্ধন পরিব্যাপ্তি লাভ করুকএটাই হোক ঈদ উৎসবের ঐকান্তিক কামনা। হাসিখুশি ও ঈদের অনাবিল আনন্দে প্রতিটি মানুষের জীবন পূর্ণতায় ভরে উঠুক। বিশ্বের সব মানুষের সুখশান্তি, কল্যাণ ও উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি হোকমহান আল্লাহর কাছে এ প্রার্থনা আমাদের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে