ডিবি পুলিশের পরিচয়ে গত রোববার রাতে চট্টগ্রাম নগরের অক্সিজেন মোড় থেকে দুই যুবককে জোরপূর্বক তুলে নেয় অপহরণকারীরা। এরপর মুক্তিপণ দাবি করা হয় ১০ লাখ টাকা। এর পরেরদির পুলিশ অভিযান চালিয়ে অপহৃত ব্যক্তিকে উদ্ধার করেন। পাশাপাশি অপহরণ চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঈদকে ঘিরে নগরে এরকম অপহরণ, ছিনতাই চক্রের তৎপরতা বেড়েছে। পবিত্র ঈদুল ফিতর আসন্ন্। ঈদের বাজার, বেচা–বিক্রি ঘিরে ব্যস্ত পুরো নগরবাসী। গ্রাম থেকেও অনেকেই পছন্দের জিনিস কিনছেন নগরে এসে। নগরের দেড় শতাধিক মার্কেটের অন্তত তিন লাখের মতো দোকানে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। রোজার দিন হওয়ায় দিনের চেয়ে রাতে বেচাকেনা হয় বেশি। সাংসারিক কাজকর্ম শেষে অনেকে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন রাতে মার্কেটে যেতে। সব মিলিয়ে রোজায় কয়েক হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নগরীতে বেড়েছে ছিনতাই–অপহরণ চক্রের দৌরাত্ম্য। অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, সালাম পার্টি, বমি পার্টিসহ বিভিন্ন নামে পরিচিত এসব চক্র। বাণিজ্যিক কিংবা শপিংমল এলাকায় এসব অপরাধী থাকে ওঁৎ পেতে। সুযোগ পেলেই তারা ছিনিয়ে নেয় সর্বস্ব। ছিনতাইয়ের কবলে পড়তে হচ্ছে সকল শ্রেণিপেশার মানুষকে। শুধু রাস্তাঘাটে নয় বাসাবাড়িতেও ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা।
অপরদিকে রয়েছে অপহরণ। বিভিন্ন পরিচয়ে তুলে নিয়ে দাবি করা হয় মুক্তিপণ। তবে এ চক্রের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। প্রতিটি মার্কেটে, গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়া প্রতিদিন চলছে পুলিশের অভিযান। এতে নগরে প্রায়ই ধরা পড়ছে ছিনতাই–অপহরণ চক্রের সদস্যরা। রমজানে শুরু এখন পর্যন্ত ছিনতাই, অপহরণ চক্রের শতাধিক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরে ছয় শতাধিক ছিনতাইকারীর নাম পুলিশের তালিকায় আছে। এদের মধ্যে সক্রিয় ছিনতাইকারীর সংখ্যা তিন শতাধিক। আসন্ন রমজানের ঈদকে কেন্দ্র করে তৎপরতা বেড়েছে এসব চক্রের। নগরীর জহুর হকার্স মার্কেট, নিউমার্কেট, রেয়াজুদ্দিন বাজার, আখতারুজ্জামান সেন্টার, লাকী প্লাজা, টেরিবাজার, সানমার ওশান সিটি, শপিং কমপ্লেঙ, জিইসি মার্কেট, মিমি সুপার কমপ্লেঙ, ফিনলে সাউথ সিটি এবং আফমি প্লাজাসহ নগরের ব্যস্ততম মার্কেটগুলোতে প্রায়ই ঘটছে টাকাসহ ব্যাগ খোয়া যাওয়ার ঘটনা। ঘটছে অপহরণও। গত সপ্তাহে ছিনতাইয়ের ঘটনায় অতিষ্ঠ হয়ে ষোলশহরে তিন ছিনতাইকারীকে ধরে গণপিটুনি দিয়েছে সাধারণ জনতা।
পথচারীদের অভিযোগ, ছিনতাইকারীরা এতটাই বেপরোয়া যে পুলিশের নাগালে থেকেও ছিনতাই করেন। এসব ঘটনার গুটিকয়েক থানায় অভিযোগ জমা হয়। বাকিরা আইনি ঝামেলা এড়াতে থানায় না গিয়ে চুপ থাকেন। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানান।
জানা গেছে, পবিত্র রমজান মাসে নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিএমপির পক্ষ থেকে বিশেষ কন্ট্রোল রুম চালু রয়েছে। ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য অপরাধের বিরুদ্ধে দ্রুত পুলিশি সহায়তা দিতে হটলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে নাগরিকরা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ ছাড়াও সিএমপি স্পেশাল কন্ট্রোল রুমের ০১৩২০–০৫৭৯৯৮ এবং ০১৩২০–০৫৪৩৮৪ নম্বরে (শুধুমাত্র রমজান মাসের জন্য) যোগাযোগ করতে পারবেন। গত ৯ মার্চ ঈদকে সামনে রেখে নগরীর বিভিন্ন শপিংমল ও বাজারের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পরিদর্শন করেছেন সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ।
তিনি জানান, সবাই আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সন্তুষ্ট, কিন্তু এখানে আমাদের একটি উদ্বেগ আছে। সেটা হচ্ছে– ছিনতাইকারী। ছিনতাইকারীর দৌরাত্ম্য কমানো ও নির্মূল করার জন্য আমাদের পুলিশ কর্মকর্তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। রমজানে এখন পর্যন্ত ৫০–৬০ ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার হয়েছে, আরও হবে। সিএমপি কমিশনার জানান, সুপারমার্কেট, শপিংমল ও অপরাধপ্রবণ এলাকায় যৌথ বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে হোন্ডা মোবাইল প্যাট্রোল টিম সক্রিয় রয়েছে।
এছাড়া নগরীতে অপরাধ ঠেকাতে পুলিশের পাশাপাশি কাজ করছে র্যাব। গত এক মাসে অভিযান চালিয়ে শতাধিক ছিনতাইকারী ও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যকে আটক করে তারা। নগরে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে জানিয়ে সিএমপির অতিরিক্ত উপ–পুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) মাহমুদা বেগম আজাদীকে বলেন, ঈদকে ঘিরে নগরে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ মার্কেট ও পয়েন্টে পুলিশ রয়েছে। থানা ফোর্সের পাশাপাশি পুলিশ লাইন্স থেকে পুলিশ নিয়োগ করা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিদিন অভিযান অব্যহত রয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক ছিনতাইকারী, অপহরণকারী আটক হয়েছে।