সৌরভ ও সুজন দুই বন্ধু। তারা দুজন তৃতীয় শ্রেণীতে একই বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। সৌরভের বাবা আসীম উদ্দীন একজন ব্যাংক কর্মকর্তা, আর সুজনের বাবা হলো দরিদ্র ঠেলাগাড়ি চালক।
ঈদের চাঁদ উঠেছে দেখে সৌরভের খুশির সীমা নেই! তার বাবা আসীম উদ্দীন তার জন্য নতুন জুতা স্যান্ডেলসহ কয়েক সেট নতুন পোশাক কিনে দিয়েছে কোরবানির ঈদ উপলক্ষে। আর কোরবানি করার জন্য বড় একটি গোরু কিনেছে এক লক্ষ দশ হাজার টাকা দিয়ে। সৌরভ মনের আনন্দে গোরুটির কাছে গিয়ে খড় ভূষি দেয় খাওয়ার জন্য। সুজনও সৌরভের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখে, তবে তার চেহারায় আনন্দের লেশমাত্র নেই। সুজনের বাবা ঠেলাগাড়ি ভাড়া খাটিয়ে যা রোজগার হয় তা দিয়ে সুজনের পড়া লেখার খরচসহ কোনোমতে ডালভাত খেয়ে দিন চলে। সৌরভের নতুন পোশাক দেখে সুজন বড় মুখ করে বাড়ি গিয়ে তার বাবাকে বলে সৌরভকে তার বাবা অনেক দামিদামি সুন্দর সুন্দর শার্ট প্যান্ট জুতা সেন্ডেল কিনে দিয়েছে এবং কোরবানি করার জন্য বড় একটি গোরুও কিনেছে । সুজনের বাবা মাথা নিচু করে ছেলের কথা শুনে বলে ওরা বড় লোক মানুষ, অনেক টাকা পয়সা আছে, ঈদতো ওদের জন্যই আসে বাবা। আমাদের গরীবের জন্য শুধু ঈদের চাঁদ দেখে দেখে সান্ত্বনা নেওয়া ছাড়া আর কিছুই নেই। জিনিস পত্রের যে দাম এই উর্ধগতির দ্রব্যমূল্যে আমাদের দুমুঠো ডালভাত মুখে তুলতেই কর্ম শেষ হয়ে যাচ্ছে। ঈদ আনন্দ আমাদের জন্য শুধুই স্বপ্ন দেখা ছাড়া কিছুই নয়। সুজন মন খারাপ করে বলে বাবা তাহলে আমার জন্য কি একটা নতুন জামাও কেনা হবে না ? সুজনের বাবা কলিমউদ্দিন বলে নারে বাজান! কেমনে কিনুম তোর মায়ের পরার কাপড় ছিঁড়ে গেছে, তার জন্য একটি শাড়ি কাপড় না কিনলে বাহিরে বের হতে পারবে না। তার পর ঈদের দিনতো একটু চিনি সেমাই কিনতে হবেনে, কী দিয়ে কী করব চিন্তা করে কুল পাইনারে বাপ! সুজনের মা ঘরে থেকে এ সব শুনছে আর ছেঁড়া কাপড়ের আঁচল দিয়ে চোখ মুছছে! সুজনও আর কিছু বলছে না। চোখমুখে তার বিষণ্নের ছাপ। ক ফোঁটা চোখের জল গড়িয়ে পড়ে পাঁজরের উপর! অস্পষ্ট কণ্ঠে বলে ঠিক আছে বাবা, তাহলে মায়ের জন্যই একখানা শাড়ি কাপড় কিনে দিও বাবা! আমার কিছু কিনে দিতে হবেনা! এই বলে রাতে ঘুমিয়ে যায় সুজন। পরের দিন সুজন আবার সৌরভের কাছে যায় ওদের ষাঁড় গোরুটি দেখার জন্য। মনে তার হতাশার চিহ্ন। সৌরভ তার বন্ধু সুজনের মন খারাপ দেখে বলে কীরে বন্ধু, তোকে আজ এমন মনে লাগছে কেনো? তোর বাবা তোকে ঈদের জন্য নতুন পোশাক কিনে দেয়নি? সুজন বলে নারে বন্ধু, আমার বাবাতো গরীব। আমাদের ঘরে ঈদ আসে চোখে পানি নিয়ে! সৌরভ বন্ধুর কষ্টের কারণ বুঝে গিয়ে বলে ঠিক আছে বন্ধু, আমার বাবা গত রোজার ঈদে আমাকে নতুন জামা পাঞ্জাবি কিনে দিয়েছিলো,আবার এ ঈদেও কিনে এনেছে। তুই যদি মনে কিছু না করিস তবে এ ঈদে আমার বাবা আমার জন্য যে পাঞ্জাবি, পাজামা , টুপি ও স্যান্ডেল এনেছে এগুলি তুই নিয়ে যা! এই বলে সৌরভ তাদের ঘরে গিয়ে ঈদের নতুন সেট পোশাক নিয়ে বাহিরে এসে সুজনের হাতে তুলে দিয়ে বলে এই নে বন্ধু। এগুলি তোকে দিয়ে দিলাম। আর ঈদের দিন তুই সকাল থেকে আমাদের বাড়িতে থাকবি আমরা দুজন ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিব বন্ধু। সুজনের চোখে যেনো আর এক ইদের চাঁদ ভেসে উঠলো সে সৌরভকে জড়িয়ে ধরে বললো তুই আমার প্রিয় বন্ধু। এর পরে সুজন হাসিমুখে বাড়ি চলে যায়। সৌরভ ভয়ে ভয়ে তাদের ঘরে গেলে তার বাবা জিগ্যেস করে, কী রে সৌরভ, তুমি না নতুন পাজামা পাঞ্জাবি স্যান্ডেল নিয়ে বাহিরে গেলে, সে সব কই রেখে এলে বাবা? সৌরভ ভয়ে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে জি বাবা! আমি তোমাদের না বলে একটি কাজ করে ফেলেছি। এ জন্য সরি বাবা! সৌরভের বাবা অসীম উদ্দীন বলে খুলে বলো কী করেছো? তখন সৌরভ বলে বাবা আমার বন্ধু সুজনের বাবা খুব গরীব মানুষ, ঠেলাগাড়ি চালিয়ে ছেলে মেয়ের লেখাপড়া চালিয়ে কোনো রকমের ডালভাত খেয়ে দিন পার করে। রোজার ইদে এবং এই কোরবানি ঈদেও সুজনকে কিছুই কিনে দিতে পারেনি। তার মায়ের ব্যবহারি শাড়িটাও ছিঁড়ে গেছে। ঘর হতে বাহিরে বের হওয়াও খুব সমস্যা হচ্ছে। সুজনের মুখে এমন কথা শুনে আমি স্থির থাকতে পারিনি বাবা। তাই আমার নতুন সেট ঈদের পোশাক ওকে দিয়েছি বাবা! সৌরভের মুখের কথা শুনে তার বাবা বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলে উত্তম কাজ করেছো বাবা, তোমার এমন মহানুভবতার জন্য আজ আমারও সচেতন তা বৃদ্ধি পেয়ে চোখ খুলে গেলো বাবা! আজ তোমার এমন মহত্বের নিদর্শন দেখে আমি আজই ঈদের আনন্দ দ্বিগুণ উপভোগ করছি বাবা। সৌরভের মাও ছেলের মহানুভবতার জন্য হাত তুলে এমন ছেলে উপহার দেওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে দোয়া করেন । এবং দুহাজার টাকা বের করে অসীম উদ্দীনের হাতে দিয়ে বললেন এই টাকাগুলি সুজনের বাবাকে দিয়ে আসবে তাদের জামাকাপড় কেনার জন্য।