ঈদ আনন্দে থিম পার্ক রির্সোট বেইস ক্যাম্পের সমন্বয় অনন্য ফয়’স লেক কমপ্লেক্স

| শুক্রবার , ১৪ জুন, ২০২৪ at ১১:০৭ অপরাহ্ণ

প্রাচ্যের রাণী খ্যাত চট্টগ্রাম বেড়ানোর জন্য বেশকিছু স্থান থাকলেও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা এবং উৎসব আনন্দে বিনোদনের জন্য ফয়’স লেক কমপ্লেক্স অন্যতম বলে বিবেচিত হয়। নানা বয়সী মানুষের জন্য বিনোদন কিংবা দল বেধে ঘুরে বেড়ানোর জন্য প্রকৃতি ও আধুনিকতার সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এক আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র। চট্টগ্রাম শহরের প্রাণকেন্দ্র জিইসি মোড় থেকে জাকির হোসেন সড়ক ধরে আড়াই কিলোমিটার গেলেই সড়কের ডান পাশে এক তোড়ন। সেখান থেকে কিছুটা এগোলেই মূল প্রবেশ পথ।

শুরুতেই এ্যামিউজমেন্ট পার্ক যা বেশ কিছু রাইড নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে। পার্কের উল্লেখযোগ্য রাইডসগুলোর মধ্যে রয়েছে ফেরিস হুইল, বাম্পার কার, ফ্যামিলি রোলার কোস্টার, পাইরেট শীপ, বেবি কেরাওসাল, কফি কাপ, ড্রাই স্লাইড। প্রায় একশফুট উচু ফেরিস হুইলে উঠলে এক চক্করে দেখা যাবে প্রায় পরো পার্ক। বাম্পার কার এ চলে খেলনা কার এ চড়ে আরেক জনের কার এ ধাক্কা দেয়ার প্রতিযোগিতা, দেখে মনে হবে যেন এক মজার যুদ্ধে নেমেছে সবাই। ফ্যামিলি রোলার কোস্টার এক সঙ্গে অনেকে উঠে ঢেউ খেলানো গতিতে দ্রুত এগিয়ে চলে। এর পরেই দেখা মিলবে পাইরেট শীপ এই প্রকান্ড আকারের রাইডটি দোলনার মতো দুলতে থাকে ফলে অনেকেরই মাথা ঘোরে যা অত্যন্ত মজার।

বাচ্চাদের জন্য “ফয়’স লেক এ্যামেউজমেন্ট ওয়াল্ড” যেন এক স্বপ্নরাজ্য কেননা সাজানো গোছানো এই জায়গাতে ছোট বাচ্চারা ইচ্ছেমতো ছুটোছুটি করতে পারে। ছোটদের আনন্দ বিনোদনের জন্য সব রকম উপকরণ আছে এখানে ছোটদের রাইডগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বেবী-কেরাওসাল, ট্রেন, হ্যাপী জাম্প, দোলনা ইত্যাদি। কফি কাপ রাইডের পাশ দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে পাহাড়ে উঠলে দেখা পাওয়া যাবে অননন্য সুন্দর এক পিকনিক স্পট যা ফটো কর্ণার নামে পরিচিত। সেখান থেকে যাওয়া যাবে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। আগত দর্শণার্থী এখানে পরিচিত হতে পারবে প্রাণীজগতের সঙ্গে। পাহাড়চূড়ায় রয়েছে টিয়া পাখি, ঈগল পাখি, অজগর, চিতা বাঘ, ভালুক সহ নানা বন্যপ্রাণীর ভাস্কর্য।

পর্যটন টাওয়ার থেকে নেমেই দেখা যাবে পাহাড়ের বুক চিরে চলে যাওয়া জলধারা। লেকের স্বচ্ছ জলরাশিতে খেলা করে পানকৌড়ি, বক, মাছ শিকারে ব্যস্ত থাকা মাছরাঙ্গা। কখনও দেখা মেলে লেকের এক পার্শ্বে ঝোপ জুড়ে ওৎ পেতে থাকা আবার কখনও উড়তে দল বেধে উড়তে থাকা চিল। এঁকেবেকে চলা লেকের দুপাশে সংরক্ষিত বন আর পাহাড়ে খেলা করে বুনো হরিণ আর খরগোশের দল আর উড়ে বেড়ায় নানা রঙ্গের পাখি। লেকের শেষ প্রান্তে দেখা মিলবে রিসোর্ট যার গা ঘেষেই গড়ে তোলা হয়েছে পানির এক রোমাঞ্চকর রাজ্য-সী ওর্য়াল্ড। ঈদেন ছুটিতে সারাদিন জলকেলি উসবে মেতে উঠার জন্য রয়েছে আধুনিক সব রাইডস। সী-ওর্য়াল্ডের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান ওয়েভ পুল, সাগড়ের ঢেউয়ের মতো কৃত্রিম ঢেউ খেলা করে। ওয়েভ পুলের সামনের স্টেজে ঈদ উৎসবে দশদিন ব্যাপী পরিবেশিত হয় ডিজে শো।

কৃত্রিম ঢেউ আর মিউজিক এর তালে তালে নেচে গেয়ে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠে আগত দর্শনার্থীরা। পাশেই ড্যান্সিং জোনে কৃত্রিম বৃষ্টি মন মাতানো মিউজিক আর রঙ্গিন বাতির আলোক ঝর্ণায় নেচে গেয়ে আনন্দ উল্লাসে হারিয়ে যায় অন্য কোন জগতে। চিলড্রেন পুলে ছোটদের পানিতে খেলার জন্য রয়েছে আকর্ষণীয় অনেকগুলো র্যাইডস্। দর্শনার্থীদের জন্য ফ্যামিলি পুল অন্যতম আকর্ষণীয় রাইড, এই রাইডে চড়লে খুব দ্রুত গতিতে নিচের পানিতে লাফিয়ে পড়ে। অন্যান্য রাইডগুলো হচ্ছে টিউব স্লাইড, মাল্টি- স্লাইড, প্লে-জোন।

অবকাশ যাপন কিংবা লম্বা ছুটি কাটানোর জন্য প্রকৃতি ও আধুনিকতার সম্বয়ে লেকের সামনে অনন্য এক স্থাপত্য শৈলীতে গড়ে তোলা হয়েছে ফয়’স লেক রিসোর্ট ও বাংলো। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রতিটি কক্ষের সাথে রয়েছে ঝুলন্ত বারান্দা যেখান থেকে উপভোগ করা যাবে লেক ও সবুজ গাছগাছালির সৌন্দর্য। পূর্ণিমা রাতে চাঁদের রিসোর্টে থেকে ফয়স লেক এর পরিপূর্ণ সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে। রিসোর্টে ছোট সোনামণিদের জন্য রয়েছে খেলাধুলার ব্যবস্থা। খাবারের জন্য আছে চমৎকার একটি রেস্টুরেন্ট যা চব্বিশ ঘন্টা খোলা থাকে যেখানে পাওয়া যায় দেশী, ইন্ডিয়ান, চাইনিজ, থাই সব রকম খাবার। ফয়’স লেক বাংলো রিসোর্ট এক অনুপম সৌন্দর্যের প্রতীক যা নিরিবিলি পরিবেশে প্রকৃতির কোলে এক রোমাঞ্চকর পরিবেশে অবস্থিত। শীত, গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা সব সময় আকর্ষণ করে ফয়’স লেক বাংলো রিসোর্ট। মনে হয় এখানকার প্রকৃতি যেন প্রতিটি ঋতুতে প্রকৃতি ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে। দিনে নানা রঙ্গের পাখি আর রাতে শুধু ঝি-ঝি পোকার ডাক শুনতে পাওয়া যায়, এমন নিরিবিলি পরিবেশ যেন প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটানের জন্য অনন্য এক স্থান। দেশের নানা প্রান্ত থেকে অনেক পর্যটক এসে ফয়’স লেক বাংলো রিসোর্ট এর পরিবেশ দেখে মুগ্ধ হয়ে যায়। বাংলোর আশে পাশে বসে থাকলে মনে হবে সবুজের সাথে মিতালী ঘটেছে। ঈদের লম্বা ছুটিতে বেড়ানোর জন্য এর চেয়ে চমৎকার আয়োজন আর কি হতে পারে।

বদ পাহাড় ঘেরা নির্মল প্রাকৃতিক পরিবেশে ফয়’স লেক বেইস ক্যাম্প এক অনন্য সৌন্দরে্যর প্রতীক। থোকা থোকা সবুজে ঘেরা উচু-নিচু পাহাড়ী-পথ, সাপের মত-এর্কে বেঁকে চলা স্বচ্ছজল-রাশি, পাখ-পাখালীর ডাক যে কাউকে বিস্ময়কর এক অনুভূতি দেবে। লেকের পাড় বেয়ে উপড়ে উঠলেই বেইস ক্যাম্পের মূল ফটক আর এখানে ভেতরে প্রবেশ করে পাহাড়ী পথে সিড়ি পেরিয়ে জিপালাইনের কাঠামো, এখান থেকেই তারে ঝুলে শূণ্যে ভেসে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যাওয়ার ব্যবস্থা। জিপলাইনের চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে পাহাড়ী পথ বেয়ে উঠলেই ট্রিটপ চাডভেঞ্চার যেখানে দশটি ধাপের নানারকম এ্যাডভেঞ্চার মূলক কার্যক্রম। বিভিন্ন ধাপের নিচে পাহাড়ী ঢল আর উপড়ে এক গাছ থেকে অন্য গাছে যেতে হয় হবে কাঠের পাটাতন টায়ার, সরু ব্রিজ, মাকড়সার জালের মতো জাল ধরে চলাচল, বাকা ত্যাড়া নানা নকশার ছোট ছোট সেতু। এরপর অবস্টেবল কোর্স যা বেইস ক্যাম্পের এ্যাডভেঞ্চারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। আরেক রোমাঞ্চকর অনুভূতি হবে জায়ান্ট সুইং-এ।

প্রকান্ড এক লৌহ কাঠামোতে শূণ্যে ভেসে দোলার অনুভূতি নিয়ে শিহরণ জাগাবে। পাহাড়ের ঢালজুড় জারান্ট হামক যেখানে বসে বা শুয়ে নিরিবিরি প্রকৃতি অনুভব করা যায় নিজের মতো করে। পাহাড়ের পাদদেশে সাপের মতো আঁকা বাঁকা হ্রদ ভ্রমনে কায়া কিং উপভোগের দারুন এক সুযোগ। বাচ্চাদের জন্য রয়েছে চিলড্রেনঅক্টিভিটিস এক এলাকা। বেইস ক্যাম্পের সবকিছুই আউটডোর কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে আর্চারি, ওয়াটার জিপলাইন, ক্রলিং, মাডট্রেইল, প্যাডেল বোটিং, ওয়াটার জিপলাইন, রিভার ক্রসিং। ভ্রমণের পূরিপূর্ণতা দিতে সান্ধ্যকালীন সময়ে পুরো ক্যাম্প জুড়ে নাইটসাফারীর ব্যবস্থা। ফয়স লেক বেইস ক্যাম্পে ভ্রমণ আরো রোমাঞ্চকর করতে খোলা আকাশের নিচে তাবু টাঙ্গিয়ে রাত কাটানোর সু-ব্যবস্থা। প্রাতঃরাশ থেকে শুরু করে দুপুর ও বিকেলের খাবার সহ বার-বি-কিউ-এর আয়োজন। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য, নিরাপত্তা, আতিথেয়তার সকল সুযোগ সুবিধা মিলে ফয়সলেক বেইস ক্যাম্প দেশের পর্যটনে এক বিশেষ মাইলফলক। ঈদ উৎসবে ভিন্নধারার আনন্দ পেতে মনে রাখুন ফয়’স লেক বেইস ক্যাম্প।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে আনসার আল ইসলামের দুই সদস্য আটক
পরবর্তী নিবন্ধসেন্টমার্টিন থেকে ফেরার পথে ট্রলারে মিয়ানমারের গুলি, যুবক আহত