ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) : শান ও মান মর্যাদার মহিমায় সমুজ্জ্বল

| রবিবার , ৯ অক্টোবর, ২০২২ at ৭:৪৭ পূর্বাহ্ণ

‘সাহারাতে ফুটলরে ফুল রঙ্গীন গুলে- লালা/ সেই ফুলেরই খোশবুতে আজ দুনিয়া মাতোয়ালা’। সে ফুলের নাম হযরত মুহাম্মদ (দ.)। আজ ১২ রবিউল আওয়াল। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.)। হযরত মুহাম্মদ (দ.) এর জন্মদিন। এ দিন বিশ্বমানতার আনন্দের দিন। সমগ্র সৃষ্টির প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ‘র ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের এমন দিনে আরবের মক্কা নগরীতে কোরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। দিনটি তাই সমগ্র সৃষ্টির জন্য খুশি’র দিন। ‘ধুলির ধরা বেহেশতে আজ, জয় করিল, দিল রে লাজ- আজকে খুশির ঢল নেমেছে ধূসর সাহারায়’। সমগ্র আরব জাতি যখন অশিক্ষা, অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের ঘোর তমসায় নিমজ্জিত ছিলো, সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ যখন মূর্তিপূজায় নত, সভ্যতা যখন পদদলিত, ভুলুণ্ঠিত যখন মানবতা ঠিক তখনই সমগ্র মানবজাতির আলোর দিশারী হিসেবে আল্লাহ তায়ালা প্রেরণ করেন তাঁকে। সৃষ্টির পর থেকে যুগে যুগে আল্লাহ পৃথিবীতে বহু নবী ও রাসুল প্রেরণ করেছেন তাঁর বান্দাদের হেদায়েতর জন্য। তাঁদের মধ্যে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (দ.)। তিনি সমগ্র বিশ্বে ইসলামের নামে এক অভূতপূর্ব বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। যা ছিলো সাম্যের, মানববতার ও মুক্তির। তিনি শুধু নবীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ছিলেন তা নন, সৃষ্টির আদি থেকে এ পর্যন্ত যতসব পণ্ডিত ও জ্ঞানী ছিলেন হযরত মুহাম্মদ (দ.) ছিলেন তাদের মধ্যে সেরা। তিনি একাধারে শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী, শ্রেষ্ঠ বিচারক, শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক, শ্রেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ও শ্রেষ্ঠ জ্যোতিষবিদ ছিলেন। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নয়, সয়ং আল্লাহ জিব্রাইল আ. এর মারফত অহীর মাধ্যমে তাঁর হাবীবকে যে শিক্ষা দিয়েছিলেন তা ছিলো মানবজাতির জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়। শুধু মুসলমানদের কাছে নন, অমুসলিমদের কাছেও তিনি ছিলেন ‘আল আমীন’ অর্থাৎ বিশ্বাসী। অত্যন্ত দুখের বিষয় আমরা আজ মহনবীর আদর্শ থেকে বিচ্যুত। পৃথিবীতে আজ যত হানাহানি, যত মানবিক বিপর্যয় ও অর্থনৈতিক সংকট তা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র পথ নবী (দ.) এর আদর্শ অনুসরণ। হযরত মুহাম্মদ (দ.) শুধু আরবের নন, তিনি সমগ্র বিশ্বের, শুধু মুসলমানদের নন, সমগ্র সৃষ্টির। পবিত্র কোরআন শরীফে মহান রাব্বুল আলামীন বলেন, ‘ওয়ামা আরসালনাকা ইল্লা রাহমাতুল্লিল আলামীন। অর্থাৎ সমগ্র সৃষ্টিজগতের রহমতস্বরূপ আপনাকে প্রেরণ করেছি। ঈদ মানে খুশি, আনন্দ। আর মিলাদুন্নবী মানে নবীর জন্মদিন। আজ সেই দিন। নবী প্রেমিকদের জন্য আজ ‘ইয়মুল ঈদ’ অর্থাৎ ঈদের দিন। আজকের এই দিন মুসলমানদের কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যময়। কেননা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর প্রিয় হাবীব হযরত মুহাম্মদ (দ.) এর মাধ্যমেই প্রেরণ করেন পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান আল কোরআন। যার মাধ্যমে আল্লাহ তার দ্বীনকে পূর্ণতা দান করেছেন। আর আমাদেরকে দিয়েছেন নিয়ামত। ঈদে মিলাদুন্নবী অর্থাৎ আজকের দিনটি ইসলামী সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিশ্বের প্রায়ই প্রতিটি মুসলিম দেশে এদিনটিকে বিশেষ দিন হিসেবে পালন করে আসছে। বাংলাদেশেও প্রতিটি এলাকায় ও রাষ্ট্রীয়ভাবে এ দিনটিকে পালন করা হচ্ছে।
পবিত্র মিলাদুন্নবীর ইতিহাস অতি প্রাচীন। মিলাদুন্নবীর সূচনা করেছেন স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ‘পৃথিবীর আদি লগনে’। নবীগণের মহাসম্মেলন ডেকে মিলাদুন্নবী মাহফিলের আয়োজন করেছিলেন। ওই মজলিসে সব পয়গম্বরদের উপস্থিতি ছিলো। এ মজলিশের উদ্দেশ্য ছিলো হযরত মুহাম্মদ (দ.) এর জন্ম, শান ও মান অন্যান্য নবীর সামনে তুলে ধরা এবং তাঁদের কাছ থেকে তাঁর ওপর ঈমান আনয়ন ও সমর্থনের প্রতিশ্রুতি আদায় করা। কোরআন মজিদের সুরা আল ইমরানের ৮১-৮২ ন. আয়াতে এ বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ এটাই ছিলো প্রথম মিলাদ। সুতরাং মিলাদ মাহফিল হচ্ছে আল্লাহর তরিকা।
ন্যায়নিষ্ঠা, সততা সত্যবাদিতার জন্য হযরত মুহাম্মদ (দ.) নবুয়তপ্রাপ্তির আগেই খ্যাতি অর্জন করেছিলেন আল আমিন নামে। ধর্ম -সম্প্রদায় নির্বিশেষে সর্বশ্রেষ্ঠ মানবিক গুণাবলী হিসেবে এসব সদগুণ সর্বকালে সর্বদেশেই স্বীকৃত। শুধু তা নয় তার মধ্যে সম্মিলন ঘটেছিলো ক্ষমাশীলতা, বিনয়, সহিষ্ণুতা, সহমর্মিতা, শান্তিবাদিতার মতো গুণ। সার্বিক অর্থে মানবজাতির মুক্তি ও কল্যাণের জন্যই আবির্ভাব ঘটেছিলো এ মহামানবের। নবীর শুভাগমনের দিন হিসেবে ১২ রবিউল আউয়াল শান ও মান মর্যাদার মহীমায় সমুজ্জ্বল। ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) এর আনন্দঘন এ দিনে আমরা প্রার্থনা করি মহানবী (দ.) এর জীবনাদর্শই হোক আমাদের জীবনের একমাত্র পাথেয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে