ঈদে অর্থনীতির চাকা ঘোরানোয় গতি আনবে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস

মহিউদ্দিন বাবর | শনিবার , ৯ জুলাই, ২০২২ at ৮:২৪ পূর্বাহ্ণ

ঈদ উল আযহা উদযাপন উপলক্ষে দেশের অর্থনীতি ইতিমধ্যে একটি শক্তিশালী গতির জন্য প্রস্তুত হয়েছে। কোভিড ১৯ এর প্রভাবের কারণে দুই বছরের স্থবিরতার পর জীবন যখন তার স্বাভাবিক গতিতে ফিরে এসেছে, তখন আসন্ন ঈদ উৎসবগুলো খুব প্রাণবন্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আসন্ন ঈদে প্রচুর গবাদি পশু বিক্রির মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও গতি আসবে।
গবাদি পশু কেনা, অন্যান্য কেনাকাটা, ভ্রমণ এবং বাংলাদেশী প্রবাসীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত রেমিট্যান্স এই সময়ে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে মূল প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে। দেশের আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও ইতিমধ্যে বিশাল এই আর্থিক লেনদেনকে সহায়তা করার জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। তবে সবচেয়ে বড় ভূমিকা সম্ভবত রাখতে চলেছে দেশের মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এই বছরের এপ্রিলে ঈদ উল ফিতরের সময়, এমএফএস খাতে গত বছরের একই ঈদের তুলনায় ৫৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পরিলক্ষিত হয়েছিল। এবারের ঈদ উল আযহাতে প্রবৃদ্ধির হার আরও বৃদ্ধি পাবে এ কথা বলাই যায়, কেননা করোনা মহামারীর প্রাদুর্ভাব এখন বিগত যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক কম।
সামপ্রতিক বছরগুলোতে, আর্থিক লেনদেনের সাথে সম্পর্কিত ভোক্তাদের আচরণে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়েছে। কেউ একে ডিজিটাল প্রবণতা বলতে পারেন, তবে এটি সুবিধার পাশাপাশি বিশ্বাস এবং নির্ভরযোগ্যতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। আশ্চর্যের কিছু নেই যে, মোবাইল ফিনান্সিয়্যাল সার্ভিস এখন সারাদেশে ১০ কোটিরও বেশি মানুষ ব্যবহার করছেন। প্রতিদিন এই সংখ্যা বাড়ছে এবং নতুন নতুন গ্রাহকেরা এই পরিষেবার সাথে যুক্ত হচ্ছেন। এমএফএস ব্যবহার করা যে কোনো ধরনের লেনদেনের চেয়ে সহজ এবং দ্রুত। মজার বিষয় হলো, ক্রেডিট/ ডেবিট কার্ডের ব্যবহার কম হচ্ছে কারণ এমএফএস একটি বিকল্প এবং দারুণ সেবা। এটি আরও বেশি জনপ্রিয় হয়েছে কারণ এর সহজলভ্যতা, রাস্তার পাশে ভ্রাম্যমাণ দোকানেও এখন এই আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন হচ্ছে। আরেকটি বিস্ময়কর দিক হলো এমএফএস বিপুল সংখ্যক ব্যাংকবিহীন জনসংখ্যাকে ডিজিটাল উপায়ে আর্থিক লেনদেন উপভোগ করতে সক্ষম করেছে। এই ব্যাংকবিহীন জনসংখ্যার একটি বড় অংশ দরিদ্র মানুষ যাদের বসবাস প্রত্যন্ত অঞ্চলে।
কোভিড ১৯ মহামারী চলাকালীন এমএফএসএর ইতিবাচক ভূমিকার চিত্র আমরা সকলেই দেখেছি। হতাশা, অনিশ্চয়তা, স্থবিরতা, অনুৎপাদনশীলতা ইত্যাদির আধিপত্যের সময়ে এটি অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে নীরব ভূমিকা পালন করেছিল। এটি অর্থ আদান প্রদানের একটি অন্যতম মাধ্যম এবং বিল, ফি, বেতন ইত্যাদি পরিশোধ করার জন্য একটি নির্ভরযোগ্য চ্যানেলের চেয়ে যেন বেশি হয়ে উঠেছে। কোভিড মহামারীর সময় থেকে এই এমএফএস সেবার প্রতি মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা দুর্বার গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ধীরে ধীরে আমরা একটি নগদ বিহীন সংস্কৃতির দিকে অগ্রসর হচ্ছি।
এই সেবা দেশে ডিজিটাল বিভাজন সংকুচিত করতেও সাহায্য করেছে। এখানে মোবাইল ফোন অপারেটরদের অবদান অনস্বীকার্য যারা দেশের প্রতিটি কোণে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক পৌঁছে দিয়েছেন। নিঃসন্দেহে মোবাইল ফোনের সহজলভ্যতা এই সেবার সাফল্যের মেরুদণ্ড।
বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং সামাজিক অগ্রগতির জন্য এটি সত্যিই একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মহামারীর কারণে হওয়া ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমরা সামর্থের পরিচয় দিয়েছি। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে আরও প্রসারিত করবে বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এর আলাদা তাৎপর্য রয়েছে। সেই পটভূমিতে, এটা নিশ্চিত যে এমএফএস এর মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন অল্প সময়ের মধ্যে বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে তেরোটি এমএফএস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং নিঃসন্দেহে বিকাশ এদের নেতৃত্ব দিচ্ছে। এমন হতে পারে যে শীঘ্রই বা নিকট ভবিষ্যতে গতানুগতিক ব্যাঙ্কিং এর স্থান দখল করবে এমএফএস সেবা।
ঈদ উৎসবের মতো বিশেষ অনুষ্ঠানে, অর্থের লেনদেন স্বাভাবিকভাবে অনেক গুণ বেড়ে যায় এবং এটি এমএফএস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, নিয়ন্ত্রক এবং সকল গ্রাহকদের জন্যও একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিশ্বাসযোগ্য ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা রয়েছে এবং সংকট বা জরুরি পরিস্থিতিতে কার্যকরভাবে মোকাবেলা করতে তারা প্রস্তুত। ঈদ উল আযহা উৎসবের সময় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ গবাদি পশু বিক্রয়ের টাকা নিরাপদে গচ্ছিত রাখা এবং সেই টাকা নিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যাওয়া। অতীতে এমন অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে যেখানে বিক্রেতারা অসাধু লোকদের দ্বারা ছিনতাই’র শিকার হয়ে সর্বস্ব খুঁইয়েছেন। এই গল্পগুলি ভুলে যাওয়া উচিত নয় এবং দরিদ্র বিক্রেতাদের এমএফএস ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন করা উচিত যা দিন রাত চব্বিশ ঘণ্টা অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
উৎসবগুলো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে শক্তিশালী করার জন্য আশীর্বাদ এবং একই সাথে জিডিপির উন্নতিতে অবদান রাখে। সুবিধাজনক এবং বিশ্বাসযোগ্য পরিষেবার মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কক্ষপথে অনেক লোককে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে তারল্য প্রবাহ নিশ্চিত করে অর্থনীতিকে উদ্দীপিত করার জন্য উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হতে পারে এবং একইভাবে টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে এই সেবা।

লেখক : ফ্রি-ল্যান্সার

পূর্ববর্তী নিবন্ধকুরবানির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য ও পশুবৃত্তির বিসর্জন সম্ভব
পরবর্তী নিবন্ধরাঙামাটিতে পাহাড়ি গরুর চাহিদা বেশি