ঈদের ছুটিতে নগরে থাকবে চার স্তরের নিরাপত্তা

চামড়া সংগ্রহ ও পরিবহনের নিরাপত্তায় বিশেষ কর্মপরিকল্পনা

ঋত্বিক নয়ন | রবিবার , ১৬ জুন, ২০২৪ at ৯:১৯ পূর্বাহ্ণ

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে মানুষজন শহর ছেড়ে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে কোলাহলহীন হয়ে পড়ছে নগরী। চিরচেনা ব্যস্ততা নেই এখন। নেই রাস্তাগুলোতে যানবাহনের স্থিরচিত্র (যানজট)। নগরীতে মানুষের সাথে সাথে কমছে যানবাহনও। গতকাল শনিবার নগরী ঘুরে এ চিত্র পাওয়া গেছে। গতকালও শহর থেকে গন্তব্যে গেছেন অসংখ্য মানুষ। শহর ছাড়ার ক্ষেত্রে যানবাহনের ভিন্নতা থাকলেও সকলের গন্তব্য নিজ গ্রাম।

এ কারণে গতকাল বিভিন্ন সড়কে যানবাহনের সংখ্যা যেমন কম ছিল, তেমনি মানুষজনের সংখ্যাও কমে গেছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এবারও নগরী থেকে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ ঈদুল আজহা উপলক্ষে শহর ছাড়বে। বাস, মিনিবাস, বিআরটিসি বাস, সিএনজি টেক্সি, মাইক্রোবাস, ট্রেন ও লঞ্চে যে যেভাবে পারছে শহর ছেড়ে যাচ্ছে। ঈদের ছুটিতে নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আশঙ্কা নেই তেমন। এ সময় নগরবাসীর নিরাপত্তায় থাকবে চার স্তরের নিরাপত্তা বলয়। সিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন ঈদের ছুটিতে নগরী ফাঁকা থাকার কারণে বাসাবাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটতে পারে। অন্যান্য অপরাধ কর্মকাণ্ড তেমন হবে না। ঈদুল আজহার দিন সোমবার চট্টগ্রাম নগরীতে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ ও পরিবহনের নিরাপত্তায় বিশেষ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে পুলিশ ও র‌্যাব। এছাড়া ঈদের ছুটিতে ফাঁকা হয়ে যাওয়া চট্টগ্রাম নগরীকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দিয়েছে র‌্যাবপুলিশ।

ঈদের ছুটিতে নিরাপত্তা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় আজাদীকে বলেন, অন্যান্য সময়ের তুলনায় এবার ঈদ উল আজহায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যথেষ্ট সন্তোষজনক। কিছু বিচ্ছিন্ন অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তা দিয়ে পুরো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে বিচার করা ঠিক হবে না। তিনি ঈদের ছুটিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছেন না। তিনি বলেন, বড় কোনো অপরাধী নগরীতে ঢুকলেই আমাদের কাছে খবর চলে আসছে। তাই নগরী শান্তই থাকবে। প্রতিটি থানা এলাকায় নিয়মিত টিমের পাশাপাশি অতিরিক্ত টিম নামানো হয়েছে। মোবাইল টিম, ফুট পেট্রোল, মোটরসাইকেল পেট্রোলের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। ঈদের ছুটিতে এরা এলাকায় নিয়োজিত থাকবে।

অন্যান্য ঈদ জামাতে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এরমধ্যে এক ভাগ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর পয়েন্টগুলোতে মোতায়েন করা হবে। অপর দু’ভাগের মধ্যে এক ভাগ ঈদ জামাতের স্থানে সার্বক্ষণিক দায়িত্বে ও অপরভাগ পুরো নগরজুড়ে বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে টহলে দেবে। এছাড়া পশুর হাটে মোতায়েন করা পুলিশ সদস্যদের বিভিন্ন এলাকায় ঈদ জামাতে মোতায়েন করা হবে।

ফাঁকা নগরীর নিরাপত্তা প্রসঙ্গে সিএমপি কমিশনার বলেন, নগরবাসীর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ঈদ উপলক্ষে নগরীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। নগরীর সবগুলো আবাসিক এলাকায় পুলিশের টহল আরও জোরদার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে স্থানীয় থানা পুলিশকে। তিনি জানান, ঈদের জামাতসহ ঈদের পর পর্যন্ত বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশনে মোতায়েন থাকবে অতিরিক্ত পুলিশ। পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের উদ্যোগে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রাখতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে প্রতিবছরই স্বজনদের সাথে ঈদ করতে নগরবাসী শহর ছেড়ে যায়। এসময় শহর ফাঁকা হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে আমাদের একটি অভিজ্ঞতা আছে। আমি পরামর্শ দিচ্ছি যে, আপনাদের মূল্যবান যদি কোনো সম্পদ থাকে সেগুলো আত্মীয়স্বজনের বাসায় কিংবা থানায়ও রাখতে পারেন। সিএমপি কমিশনার বলেন, যাদের নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে সেসকল প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের একসাথে ছুটি না দিয়ে পালাক্রমে ছুটি দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। আর কোনো রকম ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনির সহায়তা নেবেন। পাশাপাশি যাদের অবস্থা ভালো আছে তাদেরকে বলেছি, আপনারা আইপি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগান। যেন আপনি দূরবর্তী স্থান থেকেও আপনার প্রতিষ্ঠানের অবস্থা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। সেই অনুসারে প্রয়োজনে পুলিশের সাথে যোগাযোগও করতে পারবেন। ঈদে নগরবাসীর নিরাপত্তায় চার স্তরের নিরাপত্তা বলয় সাজানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের পোশাকি নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে, আমাদের সাদা পোশাকে ব্যবস্থা আছে। আমাদের স্পেশালাইজড টিম প্রস্তুত আছে। তাছাড়া আমরা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাসহ বিভিন্ন ইন্সট্রুমেন্টের সাহায্য নিয়েছি। আমাদের থানার বিভিন্ন ধরনের গোয়েন্দা সংস্থাও কাজ করছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএবার স্বস্তিতে বাড়ি ফেরা
পরবর্তী নিবন্ধদক্ষিণ চট্টগ্রামের ৬০ গ্রামে ঈদুল আজহা আজ