রমজানের শুরু থেকেই সাজসাজ রব পড়ে যেত নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজারের অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। আঞ্চলিক, মাইজভাণ্ডারী ও কাওয়ালিসহ হরেক রকম গানের অ্যালবাম প্রকাশের প্রস্তুতি চলত। চট্টগ্রামের স্টুডিওগুলোতে গান রেকর্ডিং হতো দিনরাত। তুমুল জনপ্রিয় কিছু শিল্পীর গান রেকর্ড হতো ঢাকার নামকরা স্টুডিওতে। শিল্পী, সংগীত পরিচালক ও যন্ত্রীদের ব্যস্ততা আর মফস্বলের ছোট–বড় ক্যাসেটের দোকান মালিকদের দৌড়ঝাঁপ–সব মিলিয়ে চট্টগ্রামের অডিও বাজারে ঈদের আয়োজন ছিল দেখার মতো।
এমনও হয়েছে মফস্বলের অনেক ক্যাসেট ব্যবসায়ী জনপ্রিয় শিল্পীর অ্যালবাম সংগ্রহের জন্য ঈদের এক সপ্তাহ আগেই শহরে চলে আসতেন, হোটেল ভাড়া নিয়ে শহরে থাকতেন। প্রতিদিন সকাল–সন্ধ্যা উপস্থিত হতেন অডিও প্রতিষ্ঠানগুলোতে; কখন বের হবে শেফালী ঘোষ, সেলিম নিজামীদের ক্যাসেট–এই প্রতীক্ষায়! কিন্তু সেদিন আর নেই। চট্টগ্রামের বনেদী সংগীত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আমিন স্টোর, বিনিময় স্টোর, ন্যাশনাল, শাহ আমানত অডিও কমপ্লেঙ ও জাহেদ ইলেকট্রনিঙ এখন আর গান–ব্যবসাতেই নেই, এসব প্রতিষ্ঠান এখন ভিন্ন ব্যবসায় ব্যস্ত। নতুন কোনো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেনি। ফলে ঈদ উপলক্ষে চট্টগ্রামের মূলধারার ও প্রতিষ্ঠিত কোনো শিল্পীর গান এখন আর বের হয় না। অডিও শিল্পের এই দুর্দিন চট্টগ্রামের সংগীতাঙ্গনকে করেছে নির্জীব।
১৯৮০ সালের দিকে সংগীতজ্ঞ আবদুল গফুর হালীর তত্ত্বাবধানে, বিখ্যাত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ঐকতান থেকে চট্টগ্রামে প্রথম অডিও ক্যাসেট বের হয়েছিল, ক্যাসেটের শিল্পী ছিলেন গায়িকা ও নায়িকা শিল্পী রাণী। পরে জাহেদ ইলেকট্রনিঙ থেকে বের হয়েছিল আইয়ুব বাচ্চুর ‘রক্ত গোলাপ’, আবদুল মান্নান রানার ‘যেখানে যাও ভালো থেকো’ অ্যালবাম। সোলসের সাড়া জাগানো ‘কলেজের করিডোরে’ অ্যালবাম বের হয়েছিল জাহেদ ইলেকট্রনিঙের ব্যানারে। এভাবে ঢাকার সাথে পাল্লা দিয়ে চট্টগ্রামেও গড়ে উঠেছিল সমৃদ্ধ এক অডিও শিল্প। আর শ্রোতারাও ঈদের নতুন জামা কেনার পাশাপাশি প্রিয় শিল্পীর আঞ্চলিক বা মাইজভাণ্ডারী গানের একটা ক্যাসেট কিনে ঘরে ফিরতেন। ঈদের উৎসবে সেই গান হতো বাড়তি আনন্দের উপলক্ষ। টানা তিন যুগ ছিল অডিও শিল্পের এমনই রমরমা।
রিয়াজউদ্দিন বাজারের বিভিন্ন অডিও প্রতিষ্ঠান গত ৩০ বছরে আনুমানিক ২ হাজার অ্যালবাম বের করেছে। একই সময়ে শুধু চট্টগ্রামের শিল্পীদের গান দিয়ে শত কোটি টাকার ক্যাসেট ব্যবসা হয়েছে।
আশির দশকে গ্রামোফোন যুগ শেষ হওয়ার পর রিয়াজউদ্দিনবাজার কেন্দ্রিক অডিও শিল্পের মাধ্যমেই চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক ধারার সংগীত এগিয়েছে। চট্টগ্রামের অডিও বাজারও ছিল মূলত ঈদ–কেন্দ্রিক। তবে বিভিন্ন মাজারের ওরশ উপলক্ষে বিশেষ করে ফটিকছড়ির মাইজভাণ্ডার দরবার ও মোহছেন আউলিয়ার ওরশ ঘিরে আরেকদফা জমজমাট হয়ে উঠত অডিও বাজার।
সংগীত সুকুমার কলা হলেও বাণিজ্যিক যোগ সেই গ্রামোফোন আমল থেকে গানকে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছে। দুই দশক আগেও আগে একজন শিল্পী একটা ক্যাসেট করে লাখ টাকা সম্মানি পেতেন, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আরও লাখ টাকা লাভ করতেন। এখন পুরনো দিনের আদলে গান আর বিক্রি হয় না, সে কারণে নতুন কোনো ভালো আঞ্চলিক বা মাইজভাণ্ডারী গান তৈরি হচ্ছে না, তৈরি হচ্ছে না জনপ্রিয় শিল্পীও।
গ্রামোফোন যুগের পর গত চার দশকে চট্টগ্রাম তো বটেই বাংলাদেশের সংগীত–শিল্প প্রধানত দুটি মাধ্যমে সুজলা–সুফলা হয়েছে, তার একটি চলচ্চিত্র, অপরটি অডিও বাজার। রাজধানীর মতোই চট্টগ্রামের অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোও সারাবছরই অডিও ক্যাসেট বের করত। কিন্তু রমজানের ঈদকে কেন্দ্র করেই অডিও শিল্প জমজমাট হয়ে উঠত। প্রায় প্রতিবছরই কোনো না কোনো শিল্পীর ক্যাসেট সুপারহিট হতো, ক্যাসেটের এক বা একাধিক গান মানুষের মুখে মুখে ফিরত।
জাতীয় পর্যায়ে একজন মুজিব পরদেশীর ‘আমি বন্দী কারাগারে’, মোহাম্মদ ইব্রাহিমের ‘কি আছে জীবনে আমার’, মমতাজের ‘কালো কোকিল’, রবি চৌধুরীর ‘প্রেম দাও’, আসিফের ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’, হাবিবের ‘দিন গেল’ সন্দীপনের ‘সোনাবন্ধু’ কিংবা শিরিনের ‘পাঞ্জাবিওয়ালা’ গানগুলো অডিও ক্যাসেটেরই গান, আর এই গান দেশ মাত করেছে। একটু খবর নিলে জানা যাবে, এসব শিল্পীর অডিও অ্যালবামগুলো মূলত ঈদেই প্রকাশিত হয়েছে। ঈদের এসব গান সারা বছরই শ্রোতাদের মধ্যে আনন্দ বিলিয়ে যেত।
টানা ৩০ বছরে (১৯৮০–২০১০) ঈদের অডিও বাজারকে কেন্দ্র করেই চট্টগ্রামের প্রধান তিন সংগীত–ধারা আঞ্চলিক গান, মরমী ও মাইজভাণ্ডারী গান এবং মোহছেন আউলিয়ার গান সমৃদ্ধ হয়েছে। এই সময়ে কালজয়ী শিল্পী শ্যামসুন্দর বৈঞ্চবের ‘ও জেডা ফইরার বাপ’, শেফালী ঘোষ–শ্যামসুন্দর জুটির ‘বাইক্যা টেয়া দে’, ‘আঁর বউরে আঁই কিলাইয়ম’, সঞ্জিৎ আচার্য–কল্যাণী ঘোষ জুটির ‘দুবাইলঅলা জামাই’, শিমুল শীলের ‘মোহছেন আউলিয়া বাবার বটতলী মাজার’, সিরাজুল ইসলাম আজাদের ‘হেডমাস্টরে তোঁয়ারে তোয়ার’, আবদুল মান্নান কাওয়ালের ‘আজি কি আনন্দ দেখ ২৭ শে আশ্বিন’, সেলিম নিজামীর ‘চোখের পলকে’ গানগুলো মূলত সৃষ্টি হয়েছিল ঈদের অডিও বাজার ও ওরশ ঘিরে। অবশ্য, পয়লা বৈশাখে বৈসাবি উৎসব ঘিরেও পাহাড়ি গানের অসংখ্য ক্যাসেট বের হত। টানা তিন দশক চট্টগ্রামের অডিও শিল্পের প্রাণপুরুষ ছিলেন গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক আবদুল গফুর হালী। ‘কইলজার ভিতর গাঁথি রাইখ্যুম’ুখ্যাত এম এন আখতার, ‘বাঁশখালী মইষখালী’খ্যাত সঞ্জিত আচার্য্য, ‘অ জেডা ফইরার বাপ’–খ্যাত সৈয়দ মহিউদ্দিন ও ‘ন বাজাইও বিষর বাঁশি’–খ্যাত নুরুল আলমের মতো গুণী সংগীতজ্ঞদের অবদানও স্মরণীয়। শেফালী ঘোষ, শ্যামসুন্দর বৈষ্ণব, কল্যাণী ঘোষ, শিল্পী রানী, আবদুল মান্না কাওয়াল, আহমেদ নুর আমিরী, সেলিম নিজামী, শিমুল শীলের অসংখ্য জনপ্রিয় ক্যাসেট গফুর হালীর সংগীত পরিচালনায় প্রকাশিত হয়েছে। শিল্পী আবদুল মান্নান রানা, সাইফুদ্দীন মাহমুদ খান, ওয়াকিল কাওয়াল, সৈয়দ আমিনুল ইসলাম (ইসলাম কাওয়াল), আহমদ কবির আজাদ, বুলবুল আকতার উপহার দিয়েছেন অনেক জনপ্রিয় গান।
চট্টগ্রামের ঈদের গানের সেই সুদিন এখন সোনালী অতীত। মূলত, ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অডিও বাজারে ধস শুরু হয়।
গ্রামোফোনের যুগ শেষ হতে না হতেই সত্তরের দশকের শেষের দিকে চট্টগ্রামে শুরু হয় অডিও শিল্পের স্বপ্নযাত্রা। শুরুর দিকে রিয়াজউদ্দিন বাজারের বিনিময় স্টোর, আমিন স্টোর ও জাহেদ ইলেকট্রনিঙ, রাউজানের পথের হাটের শাহা আলম মাইক সার্ভিস এবং কঙবাজারের আলাউদ্দিন রেকর্ডিং হাউজ ছিল প্রতিনিধিত্বশীল প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। বিনিময় স্টোর ওই সময় শিল্পী আহমদ নুর আমিরীর একটি লাইভ অনুষ্ঠান থেকে দরবারি গান রেকর্ড করে অ্যালবাম আকারে বাজারে ছেড়েছিল, সেটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। তখন ৫৪৩ ব্র্যান্ডের টেপ রেকর্ডার দিয়ে গান রেকর্ড করে বাজারে ছাড়া হতো। নামী শিল্পী হলে গান রেকর্ড করতে ছুটতে হতো ঢাকায়। অ্যালবামের নামকরণের ছল তখনো হয়নি। ক্যাসেটের গায়ে শিল্পীর নাম দেওয়া হলেও ছবি দেওয়া হতো না। এমন পরিস্থিতিতে গ্রামোফোন যুগের জনপ্রিয় শিল্পী শেফালী ঘোষ, শ্যামসুন্দর বৈষ্ণব, সঞ্জিৎ আচার্য, কল্যাণী ঘোষ, ঊমা খান, কান্তা নন্দী অডিও অ্যালবামে গান গেয়ে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ও মাইজভাণ্ডারী গানে নতুন মাত্রা যোগ করেলেন।
ভাবতে অবাক লাগে, আশির দশকে রাউজানের নোয়াপাড়া পথের হাটের শাহা আলম মাইক সার্ভিস নামে ছোট একটি প্রতিষ্ঠান থেকে শেফালী ঘোষ, শ্যামসুন্দর বৈষ্ণব ও শিল্পী রাণীর যৌথ গান দিয়ে ‘আঞ্চলিক গান’ নামে দারুণ এক অ্যালবাম বের হয়েছিল। যে অ্যালবামে ছিল শ্যামসুন্দরের কালজয়ী গান ‘ও জেডা ফাইরার বাপ’ (কথা ও সুর–সৈয়দ মহিউদ্দিন)। আরো ছিল শ্যাম–শেফালীর দ্বৈতকণ্ঠের বিখ্যাত গান ‘একখান হতা পুছার গইত্তাম, মিছা ন হইঅ…’। সঞ্জিত আচার্য ও শেফালী ঘোষের ‘দুবাইওয়ালা জামাই’ নামে সুপারহিট অ্যালবাম উপহার দিয়েছিল শাহা আলম মাইক সার্ভিস। কঙবাজারের আলাউদ্দিন রেকর্ডিং হাউজ থেকে বের হয়েছে ‘ও কালা চাঁন গলার মালা’ গান–খ্যাত শিল্পী বুলবুল আকতারের অসংখ্য ক্যাসেট।
চট্টগ্রামের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক যুগোত্তীর্ণ শিল্পীর জন্ম দিয়েছে। নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে ন্যাশনাল ইলেক্ট্রনিঙের ব্যানারে মোহসেন আউলিয়ার গান নিয়ে দেশ মাত করেছিলেন শিমুল শীল। ২০০২ সালে আমিন স্টোরের ব্যানারে আবির্ভাব হয়েছিল হেডমাস্টারখ্যাত শিল্পী সিরাজুল ইসলাম আজাদের। একই প্রতিষ্ঠান থেকে ১৯৮৯ সালে কাওয়ালী গানের অ্যালবাম ‘রওজা মিলগায়া’ দিয়ে বাজার মাত করেছিলেন সেলিম নিজামী।
আশির দশকের মাঝামাঝি রাউজানের নোয়াপাড়া পথের হাটের শাহা আলম মাইক সার্ভিস থেকে কঙবাজার অঞ্চলের জনপ্রিয় শিল্পী আহমদ কবির আজাদ ও বুলবুল আকতারের ‘নয়া প্রেমের নয়া মজা’ নামে একটি সুপারহিট অ্যালবাম বের হয়েছিল। শিল্পীদের গান রেকর্ডের জন্য চট্টগ্রামেও গড়ে উঠেছিল বেশ কয়েকটা অডিও স্টুডিও, কয়েকটির রেকর্ডিং মান ছিল ঢাকার কাছাকাছি।
রিয়াজউদ্দিন বাজারের অডিও শিল্পের সাথে আমার ঘনিষ্ট যোগাযোগ ঠিক এক যুগ আগে, ২০০২ সালে। যখন সিরাজুল ইসলাম আজাদের প্রথম অ্যালবাম ‘হেডমাস্টর’ বের হয়। আমিন স্টোরের ব্যানারে সৈয়দ মহিউদ্দিনের সংগীত পরিচালনায় ওই অ্যালবাম সুপারডুপার হিট হয়েছিল, ভেঙ্গে দিয়েছিল অতীতের ক্যাসেট বিক্রির সব রেকর্ড। সিরাজের পরপর তিনটি অ্যালবাম অডিও বাজারে সুদিন এনেছিল। তাঁর দুটি অ্যালবাম ‘পরীক্ষা’ ও ‘ ‘চেয়ারম্যান সাব’–এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলাম আমি। রেকর্ডিং থেকে শুরু করে মিউজিক ভিডিও তৈরি পর্যন্ত ওতোপ্রোতভাবে জড়িত ছিলাম। সিরাজের ওই দুই মিউজিক ভিডিওতে অভিনয় করেছিলেন ইত্যাদি–খ্যাত অমল বোস, খ্যাতিমান অভিনয় শিল্পী ফখরুল হাসান বৈরাগী, আফজাল শরীফ, চিত্রনায়িকা শাহনুর, কৌতুক অভিনেতা পাপ্পুসহ অনেকে। বলা যায় চট্টগ্রামের অডিও বাজারে জাতীয় তারকাদের আগমন সিরাজের অ্যালবাম দিয়েই। এরপর সেলিম নিজামীসহ আরো কয়েকজন শিল্পীর অ্যালবাম তৈরির সাথেও যুক্ত ছিলাম।
অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি,অডিও শিল্পে দুর্দশার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ মোবাইল। প্রযুক্তির এই চরম সময়ে গান মানুষ বেশি শুনছেন। এখন হাতে হাতে স্মার্ট ফোন। ফেসবুক, ইউটিউব খুললেই গানের মেলা। কিন্তু মানুষ সেই পুরনো গানেই ঘুরপাক খাচ্ছেন, তারা নতুন গান পাচ্ছেন না। অডিও ইন্ড্রাস্ট্রি না থাকায় গানে বিনিয়োগ নেই, নেই শিল্পীদের আর্থিক নিশ্চয়তাও। ফলে জনপ্রিয় শিল্পীদের নতুন গান আসছে না, তৈরি হচ্ছে না নতুন শিল্পীও। তবে অনেক শিল্পী এখন ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুকে কিছু নতুন গান আপলোড করছেন, এটা আয়েরও একটা ভাল মাধ্যম হয়ে উঠছে। সেক্ষেত্রে দরকার প্রণোদনা। সামপ্রতিক সময়ের জনপ্রিয় কর্পোরেট আয়োজন ‘আইপিডিসি আমাদের গান’ বা ‘কোক স্টুডিও’র মতো উদ্যোগ চট্টগ্রামের গানে নবজোয়ার আনতে পারে।