রমজানের শুরুতেই কক্সবাজারে পর্যটকের আনাগোনা ছিল প্রায় শূন্যের কোটায়। তবে গত কয়েকদিন ধরে ফের পর্যটকের আগমন শুরু হয়েছে দেশের এই প্রধান অবকাশযাপন কেন্দ্রে। শুক্রবার থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত সাগর পাড়ের অভিজাত হোটেলগুলোর অধিকাংশ রুম অতিথিপূর্ণ রয়েছে। আজ রোববার আরো বেশি সংখ্যক পর্যটক আগাম রুম বুকিং করেছেন। কক্সবাজার সৈকতের বীচকর্মী মাহবুব আলম বলেন, ‘গত দুদিন ধরে ৫ হাজারের বেশি পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান করছেন।’ তবে গত কয়েকদিন ধরে কক্সবাজার ভ্রমণে আসা পর্যটকদের অধিকাংশই অমুসলিম বলে জানান হোটেল মালিকরা।
হোটেল মালিকরা জানান, রমজান উপলক্ষে পর্যটক না থাকায় অধিকাংশ রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখা হলেও অভিজাত হোটেলগুলোতে নিজস্ব রেস্তোরাঁ রয়েছে। এছাড়া শহর ও পর্যটন এলাকায় অমুসলিমদের জন্য অনেক রেস্তোরাঁ খোলা রাখা হয়েছে। ফলে রমজান মাসে ভ্রমণে এসে কাউকে ভোগান্তিতে পড়তে হয় না। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৭টার পর সাগর পাড়ের বেশ কয়েকটি তারকা হোটেলের সাথে কথা বলে অধিকাংশ রুম অতিথিপূর্ণ বলে জানা গেছে। হোটেল ওশ্যান প্যারাডাইজড রিসোর্টসের অভ্যর্থনা বিভাগের মারুফ জানান, তাদের হোটেলে তখন পর্যন্ত ৬০% ভাগ রুম অতিথিপূর্ণ হয়েছে। আজ রোববার আরো বেশি রুম আগাম বুকিং রয়েছে। একই তথ্য জানান সায়মন বীচ রিসোর্টসের অভ্যর্থনা বিভাগের ইমতিয়াজ। তিনি জানান, ঈদ উপলক্ষে কক্সবাজারে পর্যটকদের চাপ বাড়তে শুরু করেছে। তবে ঈদের পরদিন থেকেই শুরু হবে আসল চাপ। এ চাপ মে মাসের ৮/৯ তারিখ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে হোটেল সী–গালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রুমি ছিদ্দিকী জানান, ঈদের পরদিন থেকে টানা তিন দিন শতভাগ বুকিং রয়েছে তাদের হোটেলে। এছাড়া গতকাল শনিবার প্রায় ৪০% ভাগ রুম বুকিং হলেও আজ রোববার ৬০% ভাগের বেশি রুম আগাম বুকিং রয়েছে বলে তিনি জানান।
কক্সবাজারের হোটেল মালিকদের মতে, প্রতিবছর দুই ঈদ ছাড়াও থার্টিফার্স্টের ছুটিতে কক্সবাজারে সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে। এ সময় হোটেল–মোটেলে শতভাগ রুম বুকিং থাকে। বর্তমানে কক্সবাজার শহরেই রয়েছে ৫ শতাধিক আবাসিক হোটেল ও গেস্ট হাউস। যেখানে প্রায় দেড়লাখ পর্যটক রাত যাপন করতে পারে। এছাড়া শহরের বাইরে ও সমুদ্র তীরবর্তী উপ–শহরগুলোসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র ঘিরে রয়েছে ছোটবড় আরো প্রায় ৩শ আবাসিক হোটেল ও কটেজ, যেগুলোতেও প্রায় ১৫ হাজার পর্যটকের রাত যাপনের সুবিধা রয়েছে।
কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশনের (টোয়াক বাংলাদেশ) প্রতিষ্ঠাতা–সভাপতি এসএম কিবরিয়া খান জানান, সরকারিভাবে সোমবার থেকে ঈদুল ফিতরের ছুটি শুরু হলেও অনেকেই রোববারের ছুটি ম্যানেজ করে গত বৃহস্পতিবারই কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছেন।
তিনি জানান, যারা গতকাল শনিবার ও আগেরদিন শুক্রবার কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন তারা ঈদের আগেই ফিরে যাবেন। আর যারা আজ রোববার কক্সবাজারে বেড়াতে আসবেন, তাদের অধিকাংশই কক্সবাজারে ঈদ কাটাবেন। এখানে ঈদ কাটানোর জন্য প্রায় ৩০ হাজার পর্যটক আগাম হোটেল রুম বুকিং করেছেন। তবে পর্যটকদের আসল ঢল নামবে ঈদের পরদিন থেকে। এদিন থেকে টানা কয়েকদিন জুড়ে সমুদ্র সৈকতে বসবে লাখো মানুষের মিলনমেলা। আর রমজানে ঝিমিয়ে থাকা পর্যটন এলাকা ফের ভরে ওঠবে প্রাণচাঞ্চল্যে।
শনিবার ঢাকা থেকে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা শিক্ষক দম্পতি সুস্মিতা দাশ ও সুবীর দাশ জানান, রমজানে কক্সবাজার ফাঁকা ফাঁকা, কোথাও ভীড় নেই। যেখানেই যাই বেশ কদর করে। সপরিবারে ঘুরতে বেশ ভালই লাগছে। সোমবার রাতেই তারা কক্সবাজার ছাড়বেন বলে জানান।
চাকরীজীবী অমিতাভ বিশ্বাস শুক্রবার সপরিবারে কক্সবাজারে এসে ওঠেছেন সাগর পাড়ের এক অভিজাত হোটেলে। সোমবার দুপুরের ফ্লাইটেই ফিরবেন ঢাকায়। এই কয়দিনে কক্সবাজার–টেকনাফ সমুদ্র সৈকত ছাড়াও মহেশখালী আদিনাথ, ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক, রামু বৌদ্ধ মন্দিরসহ আশেপাশের এলাকা ভ্রমণের প্রত্যাশা রয়েছে।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, ঈদ উপলক্ষে গত কয়েকদিন ধরে পর্যটকদের চাপ বাড়তে শুরু করেছে। বিষয়টি লক্ষ্য রেখে পুলিশী টহলও জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া ঈদের পরদিন থেকে পর্যটকদের চাপ আরো বেড়ে যাবে, এ কথা মাথায় রেখেই শহর ও শহরতলীর পর্যটন স্পটগুলোতে টহল জোরদার করা হবে। পাশাপাশি শহর ও সমুদ্র সৈকতে চব্বিশ ঘন্টা নিরাপত্তা ব্যবস্থা কায়েম থাকবে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারে পর্যটকদের বাড়তি চাপের কথা মাথায় রেখে তাদের জন্য ভোগান্তিমুক্ত পরিবেশ তৈরির জন্য কাজ করছে প্রশাসন। পর্যটকেরা কোথাও হয়রানির শিকার হলে ভ্রাম্যমাণ আদালত ব্যবস্থা নেবে।