ঈদবাজারে বাড়ছে চাপ

অনীহা স্বাস্থ্যবিধিতে

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৯ মে, ২০২১ at ৬:১৩ পূর্বাহ্ণ

ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, মার্কেট থেকে ফুটপাতে সর্বত্রই ক্রেতাদের চাপ বাড়ছে। নগরীর অভিজাত শপিংমল, বিপণী বিতান, মার্কেট থেকে শুরু করে ফুটপাতে চলছে ঈদের কেনাকাটা। জেলার উপজেলা সদর ও জনবহুল এলাকার মার্কেট দোকানেও ভিড় করছেন ক্রেতারা। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারি নির্দেশনা থাকলেও কেনাকাটার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধিতে আগ্রহ কম। অনেকের মুখে নেই মাস্ক, দোকানগুলোতে ব্যবহার নেই হ্যান্ড স্যানিটাইজারেরও। তবে আনুপাতিক হারে ক্রেতার সংখ্যা কম থাকায় এক দামের দোকানেও অলিখিত ছাড়ে কেনাবেচা চলছে। আবার সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখার নির্দেশনা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা গড়ায় রাত ১২টা পর্যন্ত।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে নিম্ন মধ্যবিত্ত, কিছু ক্ষেত্রে মধ্যবিত্তরা নগরীর মার্কেট ও ফুটপাতে বাজার সাড়ছেন। গ্রামের মানুষরাও কেনাকাটা করছেন। অনেকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। আবার ঈদের বাকি মাত্র ৩-৪ দিন। তাই নির্দেশনা থাকলেও ক্রেতাদের উপস্থিতির কারণে দোকানপাট বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
গতকাল শনিবার ঘড়ির কাঁটা যখন রাত ১০টা, তখনও নগরীর বেশ কয়েক স্থানে জমজমাট দেখা গেছে বেচাকেনা। নগরীর বিপণী বিতান থেকে শুরু করে রেয়াজুদ্দিন বাজার, তামাকুমণ্ডি লেইন, টেরীবাজার, চকবাজার এলাকার মার্কেটগুলোতে রাত ১২টা পর্যন্ত বেচাকেনা। তাছাড়া মূল সড়কের আশেপাশের বেশিরভাগ দোকান খোলা। বিশেষ করে ঈদকে সামনে রেখে কাপড়চোপড়ের দোকান বাদেও নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের দোকানও মধ্যরাত পর্যন্ত খোলা রাখা হচ্ছে।
এদিকে গত কয়েকদিন ধরে নগরীর মার্কেট শপিংমলগুলোতে সকাল থেকে দলে দলে ভিড় করছেন ক্রেতারা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা রূপ নেয় ক্রেতাদের মিলন মেলায়। দুপুরে নগরীর বিপণী বিতান এলাকায় দেখা যায়, চারিদিকে মার্কেটে প্রবেশ করছে অসংখ্য মানুষ। রেয়াজুদ্দিন বাজারের প্রায় প্রত্যেকটি মার্কেটে রয়েছে ক্রেতাদের ভিড়। এসময় বিক্রেতাদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে শেষ মুহূর্তের প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে এসেছেন রেয়াজুদ্দিন বাজারে। তাছাড়া মার্কেটের বাইরে ফুটপাতেও ছিল ক্রেতাদের ভিড়। প্রায় সবক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষের মাঝে মাস্ক নিয়ে তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি। কোথাও সামাজিক দূরত্বের বালাই নেই। তবে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মার্কেট-বিপণীগুলোতে ঘুরে ঘুরে স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে লোকজনদের সচেতন করছেন। অনেকক্ষেত্রে মাস্ক পরিয়ে দিচ্ছেন। ক্ষেত্র বিশেষে জরিমানাও করছেন।
দুপুর আড়াইটার দিকে নগরীর ভিআইপি টাওয়ারে গিয়ে দেখা যায়, মার্কেটটিতেও রয়েছে ক্রেতাদের উপস্থিতি। কাপড়ের দোকানগুলোতে দরজায় দাঁড়িয়ে ক্রেতাদের ডাকছেন বিক্রয়কর্মীরা। কম দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে জানিয়ে তারা ক্রেতাদের নিজ নিজ দোকানে টানছেন। মার্কেটটির মাইকে কিছুক্ষণ পর পর ক্রেতা-বিক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে সেন্ট্রাল সাউন্ড সিস্টেমে ঘোষণা ভেসে আসছে। ‘সবাই মাস্ক পরুন, দোকানগুলো হ্যান্ড সেনিটাইজার ব্যবহার করুন’। কিন্তু কার কথা কে শোনে? বেশিরভাগক্ষেত্রে দোকানের সেলসম্যানদের মুখেও ছিল না মাস্ক। আবার যাদের আছে, তারা মাস্কটি থুতনীতে ঝুলিয়ে রেখেছেন।
বিকেল সোয়া তিনটায় টেরীবাজারে গিয়ে দেখা যায়, টেরীবাজারের প্রায় প্রত্যেকটি মার্কেটে, গলিতে মানুষ আর মানুষ। দোকানগুলোতেও রয়েছে ক্রেতাদের চাপ। বিশেষ করে রেডিমেট পোশাকের দোকান, কসমেটিকস ও জুতোর দোকানে ভিড় বেশি। পাঞ্জাবির দোকানগুলোতেও ছিল ক্রেতাদের উপস্থিতি। এখানেও কোন স্বাস্থ্যবিধি তোয়াক্কা ছিল না। টেরীবাজার পরিচালনা কমিটির নেতারা প্রশাসনকে সাথে নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে দিনভর দৌড়ঝাঁপ করছেন।
বিকেল সাড়ে চারটার দিকে রেয়াজুদ্দিন বাজারেও দেখা গেছে একই চিত্র। সরু গলির কারণে বাজারটিতে লোকজনের ভিড় বেশি দেখা গেছে। অনেকটা ঠেলাঠেলি করেও লোকজন কেনাকাটা করতে আসছেন এখানে। রেয়াজুদ্দিন বাজারে পরিবার নিয়ে এসেছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আলী আহসান। তিনি দৈনিক আজাদীকে বলেন, দুপুর ১২টার দিকে তিনি রেয়াজুদ্দিন বাজারে করেছি। কোথাও সামাজিক দূরত্ব দেখা যায়নি। ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে বেশিরভাগই অসচেতন। আবার গরমের কারণেও অনেকে মাস্ক মুখ থেকে সরিয়ে নিচ্ছেন।
এদিকে নগরীর মার্কেট, অলিগলির দোকান থেকে শুরু করে অভিজাত মার্কেটগুলোতেও অলিখিত ছাড়ে পণ্য বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। মিমি সুপার মার্কেটের এক ব্যবসায়ী বলেন, করোনার কারণে বছরের পুরোটা সময়ে মার্কেটে ক্রেতার সংখ্যা কম ছিল। ঈদ উপলক্ষে পণ্য মজুদ করা হলেও শেষ পর্যন্ত লকডাউনের কারণে মার্কেটে লোকজন আসেনি। এখন মার্কেটগুলো খোলা রাখা হলেও ক্রেতার সংখ্যা আগের মতো নয়। এখন যে পণ্য তোলা হয়েছে, যদি বিক্রি না হয়, সেগুলো পুরোনো মডেল হয়ে যাবে। তাই কিছুটা কমমূল্যে হলেও বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। নগরীর বিপণী বিতান (নিউ মার্কেট), সানমার ওশ্যান সিটি, চিটাগাং শপিং কমপ্লেঙ, আফমি প্লাজা, সেন্ট্রাল প্লাজা, আমিন সেন্টার, চকবাজার কেয়ারি, গুলজার টাওয়ার, মতি টাওয়ার, আখতারুজ্জামান সেন্টার, বে-শপিং সেন্টারেও অলিখিত মূল্যছাড়ে পণ্য বেচাকেনা করছেন দোকানিরা।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি সালেহ আহমদ সুলেমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, এখন অপেক্ষাকৃত নিম্নমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্তরা বাজারে কেনাকাটা করতে আসছেন। অভিজাত শপিংমলগুলো বাদে প্রায় সব মার্কেট ও ফুটপাতে কম আয়ের মানুষেরা কেনাকাটা করছেন, তাদের বেশিরভাই স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে অসচেতন। যে কারণে অনেকে মাস্ক পরতে আগ্রহী হচ্ছে না। তারপরেও শেষমুহূর্তে কেনাবেচা জমে উঠেছে।
তিনি বলেন, করোনার কারণে গত বছর ব্যবসায়ীরা লক্ষ লক্ষ টাকা লোকসান দিয়েছেন। এবারও রমজানের শুরু থেকে লকডাউনের কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন যেভাবে বেচাকেনা চলছে, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বেচাকেনা স্বাভাবিক থাকলে, আশা করছি ব্যবসায়ীরা বড় লোকসান থেকে রেহাই পাবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকক্সবাজার উপকূলেও তিমির বিচরণ ও আবাস!
পরবর্তী নিবন্ধশিমুলিয়া-পাটুরিয়া ঘাটে বিজিবি মোতায়েন