জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামীকাল শনিবার থেকে আমদানি রপ্তানি সংশ্লিষ্ট সকল ধরনের শুল্ক কর অনলাইন মাধ্যমে (ই-পেমেন্ট) পরিশোধ বাধ্যতামূলক হচ্ছে। এর আগে চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে দেশের সবগুলো শুল্ক স্টেশন এবং কাস্টম হাউসে ২ লাখ টাকার বেশি শুল্ক কর হলে তা ই-পেমেন্ট পদ্ধতিতে পরিশোধ করার বিধান কার্যকর করা হয়।
কাস্টমসের সেবাগ্রহীতারা বলছেন, অতীতে সার্ভারের ত্রুটির কারণে ই-পেমেন্ট শুল্ক পরিশোধে ব্যবসায়ীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এমনকি অনেক ব্যবসায়ী সকালে ই-পেমেন্ট করেও শুল্ক পরিশোধের কনফারমেশন বার্তা পাননি। এখন সব ধরণের শুল্ক পরিশোধ ই-পেমেন্টে হওয়ার সিদ্ধান্ত হওয়াতে সার্ভারের ওপর চাপ বাড়াটাই স্বাভাবিক।
কাস্টমস কর্তারা বলছেন, ই-পেমেন্টের ক্ষেত্রে এনবিআরের সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভার সংযুক্ত থাকে। কোনো একটি সার্ভারে ত্রুটি দেখা দিলে সমস্যা হতে পারে। বিষয়টি পুরোপুরি টেকনিক্যাল। তাই আগে থেকে সার্ভারের ত্রুটি হবে বলা মুশকিল।
জানা গেছে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নির্দেশনা মোতাবেক বাণিজ্য সহজীকরণের অংশ হিসাবে এনবিআর গত ২০১৭ সাল থেকে ই-পেমেন্ট সিস্টেম চালু করে। এ পদ্ধতিতে আমদানিকারক বা তার মনোনীত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সরকারি ট্রেজারিতে শুল্ক-করের অর্থ পরিশোধ করতে পারেন। আগে পদ্ধতিটি বাধ্যতামূলক না করার ফলে আশানুরূপ সুফল পাওয়া যায়নি। তবে এখন ই-পেমেন্টে শুল্ক পরিশোধ বাধ্যতামূলক করার ফলে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে। জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক গোলাম রাব্বানি রিগ্যান দৈনিক আজাদীকে বলেন, ই-পেমেন্টের ক্ষেত্রে আমদানি-রপ্তানিকারকদের ইউজার আইডি দিয়ে আরটিজিএস (রিয়েলটাইম গ্রস সেটেলমেন্ট) গেটওয়ের মাধ্যমে শুল্ক পরিশোধ হয়। এর আগে ই-পেমেন্টে শুল্ক কর দিতে গিয়ে ব্যবসায়ীরা ভোগান্তির শিকার হয়েছে। আমরা কাস্টমস কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা ব্যাংকের সার্ভারের সমস্যার কথা বলতেন। আবার এনবিআরের কেন্দ্রীয় সার্ভারেও সমস্যা হতো মাঝেমাঝে। ই-পেমেন্ট মানে হচ্ছে, এখন পেমেন্ট করলাম এখন পরিশোধ হয়ে যাবে। আমাদের ক্ষেত্রে এমনও মাঝে মাঝে হয় শুল্ক পরিশোধ করার ২৪ ঘণ্টার পরে শুল্ক পরিশোধ হয়েছে এই কনফারমেশনটি আসছে। আমাদের কথা হলো-সার্ভারের ত্রুটির কারণে এক শতাংশ ব্যবসায়ীও কেন ভোগান্তি পড়বেন। শুল্ক পরিশোধে ই-পেমেন্ট ব্যবস্থা নিসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। তবে আমাদের আশঙ্কা হলো, আগামী ১ জানুয়ারি থেকে সকল শুল্ক পরিশোধ ই-পেমেন্টে করার বাধ্যবাধকতা করে দিয়েছে এনবিআর। তাই সার্ভারের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি শুল্কায়ন প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। তারপরেও আমরা আশা করি, সবকিছু ভালোই ভালোই হবে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের সিস্টেম এনালিস্ট আহসান হাবীব সুমন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ই-পেমেন্টে কিছু কিছু টেকনিক্যাল সমস্যা হতে পারে। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী নয়। হয়তো একসাথে অনেকে পেমেন্ট করছেন তখন সার্ভারে জট লাগতে পারে। এখন পর্যন্ত আমাদের প্রস্তুতি ভালো আছে। কাজ শুরু হওয়ার পর বুঝতে পারবো, কোথাও সমস্যা হচ্ছে কিনা।