নগরীর কর্ণফুলী সেতু এলাকায় ১ লাখ ২০ হাজার ইয়াবাসহ এক পুলিশ সদস্যকে আটকের পর ছেড়ে দেওয়া এবং ইয়াবা পিসগুলো গায়েব করার অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদের আদালত আগামী ১২ জানুয়ারির মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নগর পুলিশের দক্ষিণ জোনের উপ–কমিশনারকে (ডিসি) এ নির্দেশ দেন।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের নাজির আবুল কালাম আজাদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, নগরীর কর্ণফুলী সেতু এলাকায় ১ লাখ ২০ হাজার ইয়াবাসহ এক পুলিশ সদস্যকে আটকের পর ছেড়ে দেওয়া এবং ইয়াবা পিসগুলো গায়েবের অভিযোগে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যা ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ১৯০ (১) (সি) ধারা অনুযায়ী অপরাধ আমলে নেওয়ার এখতিয়ার সম্পন্ন ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদের আদালতের নজরে আসে। এরইপ্রেক্ষিতে আদালতটি উক্ত বিষয়ের আলোকে একটি পৃথক মিস কেস (বিবিধ মামলা) নথি খোলেন এবং বিষয়টি জন্য নগর পুলিশের দক্ষিণ জোনের ডিসিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
আদেশে বলা হয়, অভিযোগ হচ্ছে– নগরীর বাকলিয়া থানাধীন কর্ণফুলী সেতু এলাকার চেকপোস্টে গত ৮ ডিসেম্বর রাত ২টার দিকে ঢাকাগামী একটি বাসে তল্লাশি চালানো হয়। এতে ইমতিয়াজ হোসেন নামের এক পুলিশ সদস্যকে ইয়াবাসহ আটকের পর ছেড়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি তার কাছ থেকে জব্দ করা ১ লাখ ২০ হাজার পিস ইয়াবা গায়েব করা হয়। এতে বাকলিয়া থানার ওসি–তদন্ত তানভীর আহমেদ ও তার সহযোগী পুলিশ সদস্যদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। ইমতিয়াজ হোসেন কঙবাজার জেলা আদালতের এক বিচারকের গানম্যান হিসেবে কর্মরত থাকার বিষয়টি জানার পর দরকষাকষির মাধ্যমে বাকলিয়া থানার ওসি–তদন্ত তানভীর আহমেদ ইয়াবাগুলো জব্দ না করে তাকে ছেড়ে দেন। ওই সময় ঘটনাস্থলে বাকলিয়া থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই আল আমিন, দায়িত্বরত এএসআই সাদ্দামসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। উদ্ধার হওয়া ইয়াবার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা। ইমতিয়াজ হোসেন কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার বাখরনগর গ্রামের বাবলু মিয়ার ছেলে।
আদেশে আরো বলা হয়, উক্ত সংবাদ পর্যালোচনায় সন্দেহমূলক অনুমান হয়, আমলযোগ্য অপরাধ হওয়া সত্ত্বেও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের না করে পুলিশ আইনের ২৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। ঘটনাস্থলে দায়িত্বপালনকারী পুলিশ সদস্যরা শুধু তাদের উপর অর্পিত সরকারি দায়িত্বে অবহেলা ও ক্ষমতার অপব্যবহারই করেননি, ফৌজদারী অপরাধও করেছেন। এসব বিষয় বিচারিক হস্তক্ষেপ ব্যতীত অমীমাংসিত থাকলে আইনের শাসন ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ন হওয়ার আশংকা রয়েছে বলেও আদেশে বলা হয়।
আদেশে ৬ টি বিষয় সম্পর্কে কার্যকর তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার কথা উল্লেখ করেন বিচারক। সেগুলো হচ্ছে– ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে কোন কোন পুলিশ সদস্য কর্মরত ছিল এবং সংশ্লিষ্ট টহল পুলিশ বা চেকপোস্টে যারা ছিল তাদের নাম, যে জিডি বা সিসি মূলে তারা দায়িত্ব পালন করেছিল সে বিষয়ে তাদের চেকপোস্টের ডিউটি রেজিস্ট্রারসহ জিডি ও সিসি কপি সংগ্রহ, সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে উক্ত সময়ে কোন কোন বাসে তল্লাশি চালানো হয়েছিল এবং তল্লাশিকালে পুলিশ পরিচয়দানকারী ইমতিয়াজ হোসেনকে ইয়াবাসহ আটক করা হয়েছিল কিনা এবং উক্ত ব্যক্তিকে উল্লিখিত মাদকসহ আটক করার পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে কিনা, সংশ্লিষ্টদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা, দায়িত্বপালনকারী পুলিশ সদস্যদের কার ভূমিকা কী ছিল এবং বাকলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ কেন আলামত উদ্ধার হওয়া সত্ত্বেও এফআইআর হিসেবে রেকর্ড করে নাই তার কারণ তদন্ত করা এবং বর্ণিত ইয়াবা জব্দ তালিকা প্রস্তুত না করার কারণ এবং মাদক গোপনে অন্যত্র হস্তান্তর করে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কোন ধরণের বেআইনী সুবিধা প্রদান করেছে কিনা, যেসব ইয়াবার কথা আসছে, সেগুলোর বর্তমান অবস্থান কোথায় এবং কার নির্দেশে ও কার হেফাজতে রয়েছে তা যাচাই ও সংগ্রহ এবং সর্বশেষ সরকারী দায়িত্ব পালনে ডিউটিরত পুলিশ সদস্যরা কোন গুরুতর অবহেলা ও ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে কিনা সেই বিষয়ে তদন্ত করা।











