ক্রুড অয়েল তেল পরিশোধনে দ্বিতীয়বারের মতো সক্ষমতার চাইতে বেশি তেল শোধন করেছে দেশের একমাত্র সরকারি জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল)। প্রতিষ্ঠানটি বার্ষিক জ্বালানি তেল শোধনের সক্ষমতা বছরে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টন। সেখানে এ বছর তেল পরিশোধন করা হয়েছে ১৫ লাখ ৩৫ হাজার টন। গতকাল দুপুরে নগরীর পতেঙ্গায় ইআরএলের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইআরএল’র পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণি, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান এবং ইআরএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শরীফ হাসনাত প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ইআরএল রাষ্ট্রায়ত্ত খাতে দেশের একমাত্র জ্বালানি তেল শোধনাগার। এটি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) এর একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। ১৯৬৮ সালের মে মাসে ইআরএল‘র বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় এবং সুদীর্ঘ ৫৭ বছর যাবত আমদানিকৃত ক্রুড অয়েল পরিশোধন করে এলপিজি, পেট্রোল, অকটেন, কেরোসিন, ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলসহ মোট ১৪ টি পেট্রোলিয়াম পণ্য উৎপাদন করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি সদ্য সমাপ্ত ২০২৪–২৫ অর্থবছরে তার উৎপাদন সক্ষমতার শতভাগ অতিক্রম করার নজির স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। ইআরএলের বাৎসরিক পরিশোধন সক্ষমতা ১৫ লাখ মেট্রিক টনের বিপরীতে উক্ত অর্থবছরে ক্রুড অয়েল পরিশোধনের পরিমাণ ১৫ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত সময়কালে এক অর্থবছরে এটিই সর্বোচ্চ পরিমাণ ক্রুড অয়েল পরিশোধন। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদনের ইতিহাসে একটি অনন্য মাইলফলক অর্জিত হয়েছে।
ইআরএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শরীফ হাসনাত বলেন, আমরা অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, এবার আমাদের উৎপাদন সক্ষমতা অতিক্রম করে ১৫ লাখ ৩৫ হাজার টন পরিশোধন সম্ভব হয়েছে। এটি আমাদের ইতিহাসে এক অনন্য মাইলফলক। এই অর্জন সম্ভব হয়েছে ইআরএল’র সব কর্মকর্তা–কর্মচারী, বিপিসি, বিপণন কোম্পানি এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। যদিও আমাদের সামনে অনেক বাস্তব চ্যালেঞ্জ ছিল, সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে তা জয় করতে পেরেছি। এই ঐতিহাসিক অর্জনের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। সক্ষমতার অনুযায়ী উৎপাদন করতে হলে এর সঙ্গে সংযুক্ত সব কিছু এক সাথে কাজ করতে হয়। আল্লাহর রহমতে এবার সব কিছু এক সাথে হওয়ায় আমরা সক্ষমতার বেশি উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি।
ইআরএলের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান নাসিমুল গণি বলেন, সব পক্ষের প্রচেষ্টায় ও তেল সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণে তেল সরবরাহ করা গেছে। ৫৭ বছরের পুরোনো এ পরিশোধনাগারে সফলতার সঙ্গে এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলো।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিপিসির চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান বলেন, ইআরএল দ্বিতীয় ইউনিট বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে। গতকাল সোমবার প্রকল্পের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। ফলে চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে খুব দ্রুত ইআরএল দ্বিতীয় ইউনিটের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে। এছাড়া মহেশখালীতে পরিশোধনাগার নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান বিপিসির চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, মহেশখালীতে ১০ লাখ টন পরিশোধন ক্ষমতার একটা শোধনাগার নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে সরকার কাজ করছে। এ জন্য সেখানে জায়গা বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পায়রা বন্দরেও একটি শোধনাগার নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।












