ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ শুরু হয়নি ১১ বছরেও

মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে ডিপিপি, প্রকল্প নিয়ে সংশয়

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৩ মে, ২০২১ at ৫:৩৪ পূর্বাহ্ণ

১১ বছরেও শুরু হয়নি ইস্টার্ন রিফাইনারির বহুল প্রত্যাশার সেকেন্ড ইউনিট স্থাপনের কাজ। অনুমোদনই মিলেনি ডিপিপির। এখনো শুধু টেন্ডার ডকুমেন্টসহ কাগজপত্র (ডকুমেন্টেশান) তৈরির কাজ চলছে। দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে আমদানিকৃত অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধনের সক্ষমতা বাড়াতে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণে প্রকল্প নেয়া হয়েছিল ২০১০ সালে। এরপর ১১ বছর সময় কেটে গেলেও সেটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। সূত্র জানিয়েছে, দেশে বর্তমানে জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রায় ৬৫ লাখ টন। এর মধ্যে ইস্টার্ন রিফাইনারি (ইআরএল) এর বার্ষিক ক্রুড প্রসেসিং ক্ষমতা ১.৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন। ইআরএল ১২ থেকে ১৩ লাখ টন ক্রুড অয়েল পরিশোধন করে। চাহিদার বাকি তেলের পুরোটাই বিদেশ থেকে আনতে হয়। এতে শুধু বাড়তি খরচই নয়, বরং দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগে থাকতে হয়। এই অবস্থার অবসান ঘটিয়ে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার বার্ষিক ৩০ লাখ টন উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন ইআরএল এর দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০১০ সালে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে ডিটেইলস প্রজেক্ট প্রোফাইল (ডিপিপি) তৈরিসহ নানা আনুষ্ঠানিকতা চললেও প্রকল্পটি গতি পায়নি। ২০১৬ সালে এসে প্রকল্পটি নিয়ে আবারো মাঠে নামে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট (পিএমসি) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ারস ইন্ডিয়া লিমিটেডকে। ভারতীয় এই পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের ব্যাপারে বেশ কিছু কার্যক্রম চালায়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি বিপিসি ফরাসি প্রতিষ্ঠান টেকনিপের সাথে চুক্তি করে। এই টেকনিপই ১৯৬৮ সালে ইআরএল এর বর্তমান ইউনিটটি স্থাপন করেছিল। নতুন প্রকল্পটিও টেকনিপের মাধ্যমে হওয়ার সুযোগ তৈরি হওয়ায় অনেকে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তাদের ভাষায়, টেকনিপ ১৯৬৮ সালে ইস্টার্ন রিফাইনারি যে পরিমাণ যত্ন ও মমত্ব গিয়ে করেছে তার সুফল আজো মিলছে। প্রতিষ্ঠার অর্ধ শতাব্দীর বেশি সময় পার হলেও ইআরএল আজো সমান দক্ষতায় ক্রুড পরিশোধন করে বিভিন্ন ক্যাটাগরির জ্বালানি তেলসহ নানা উপজাত উৎপাদন করছে।
টেকনিপের নকশা অনুযায়ী ভৌত কাজ ও যন্ত্রপাতি বসানো হবে। নতুন প্রকল্পটিতে শুধু ৩০ লাখ টন ক্রুডই পরিশোধন নয়, একই সাথে ১০টি প্রসেসিং ইউনিটে এলপিজি, গ্যাসোলিন ইউরো-৫, ডিজেল ইউরো-৫, গ্রুপ-৩ বেসঅয়েল, জেট এ-১, ফুয়েল অয়েল, বিটুমিন ও সালফার ফিনিসড প্রোডাক্ট হিসেবে পাওয়া যাবে।
বিপিসি বলছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার পাশাপাশি তেল পরিশোধন কার্যক্রম দ্বিগুণেরও বেশি উন্নীত হবে। তাদের মতে, দেশে তেল পরিশোধনের সক্ষমতা থাকলে পরিশোধিত তেল আমদানি না করে ক্রুড অয়েল আমদানি করা যাবে। যা জ্বালানি তেল আমদানি খাতে বহু টাকা সাশ্রয় করবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ২০১০ সালে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হলেও গত ১১ বছরেও মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন শুরু হয়নি। শুরুতে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা। পরবর্তীতে ব্যয় ১৬ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা নির্ধারণ করে ডিপিপি সংশোধন করা হয়। ২০১৮ সালে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয় ইআরএল সেকেন্ড ইউনিটের বহুল প্রত্যাশার ডিপিপি। কিন্তু বেশ কয়েক দফা ডিপিপি ফেরত দেয়া হয়। নানা সংশোধনীর পর মন্ত্রণালয়ে ডিপিপি জমা দেয়া হলেও গতকাল পর্যন্ত সেটি পাস হয়নি। জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে পাশ হলে পরিকল্পনা কমিশন এবং অর্থ মন্ত্রণালয়সহ নানাঘাট ঘুরে সেটি কবে পাস হবে বা আলোর মুখ দেখবে তা নিয়ে বিপিসির একাধিক কর্মকর্তা সংশয় প্রকাশ করেছেন।
এই ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক এবং ইস্টার্ন রিফাইনারির ডিজিএম (পি এন্ড এস) মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু না হলেও ডকুমেন্টেশনের কাজ চলছে। টেকনিপ ডিজাইন ড্রয়িং করছে। টেন্ডার ডকুমেন্ট তৈরি হচ্ছে। ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়াও চলছে। ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রকল্প মেয়াদ আছে। আমরা ঠিকাদার নিয়োগের পর দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা করব। ডিপিপি অনুমোদন হলে অন্যান্য কাজে গতি আসবে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, করোনাকাল সব কিছুতেই সংকট তৈরি করেছে। এখানেও হয়েছে। তবে আমরা এ বছরের মধ্যে কাজ শুরু করতে পারব বলে আশাবাদী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএটা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র : শারুন
পরবর্তী নিবন্ধগুম-খুনের হুমকি পেয়ে মুনিয়ার বোনের জিডি