ইসি-সুধীজন বৈঠক, গুরুত্ব পেল অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন

রাজনীতি তীক্ষ্ণভাবে বিভক্ত, সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিচ্ছে সরকার : সিইসি

| বৃহস্পতিবার , ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৬:৫৮ পূর্বাহ্ণ

সব দল নির্বাচনে না এলে বিশেষ করে বড় কোনো দল ভোটের বাইরে থাকলে সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। আর অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সমঝোতা, ক্ষমতাসীনদের সদিচ্ছাই গুরুত্ব পেল আলোচনায়। গতকাল বুধবার নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আয়োজিত ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন : প্রত্যাশা ও বাস্তবতা’ শীর্ষক বৈঠকে এমন আলোচনা হয়। সাবেক নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন পর্যবেক্ষক, বিশেষজ্ঞ ও সিনিয়র সাংবাদিক এমন ২৮ সুধীজনকে নিয়ে বৈঠকটি আয়োজন করে ইসি। খবর বাংলানিউজের।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, একটা পার্টি, বড় দল যদি নির্বাচনে না আসে আরও তিনশ দল নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে পারবে না। জামালপুরের ডিসি বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে আবার চাই, তো এই ডিসিকে দিয়েই আপনাদের নির্বাচন করাতে হবে, ‘ইফ আই অ্যাম নট রং’। সেই প্রেক্ষাপটে আপনারা টাফ অবস্থানে থাকবেন। তিনি বলেন, যেই প্রেক্ষাপটের কথা বললাম, সেই প্রেক্ষাপটের এই প্রশাসন নিয়ে আপনারা নির্বাচন করতে পারবেন না।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, বিদেশি রাষ্ট্রগুলো আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলছে। তাদের আমরাই ডেকে এনেছি। যদি আমরা ঠিক থাকতাম তাহলে এমনটা হতো না। পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্র আমাদের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক দলীয়করণ হচ্ছে। যেখানে জনগণ হচ্ছে প্রজাতন্ত্রের মালিক, সেখানে এ অবস্থায় মানুষের অধিকার উপেক্ষিত। ইসিকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে যে ক্ষমতা দেওয়া আছে, তার বাস্তবায়ন দেখতে চাই।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও নির্বাচন পর্যবেক্ষক ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, বর্তমান আমাদের এমনভাবে গ্রাস করেছে যে, ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে পারছি না। নির্বাচনের সিডিউল সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হবে, এই নিশ্চয়তা কে দেবে? নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনের কথামতো কাজ করা কর্তব্য। কিন্তু কাজ না করলে কী হবে, সে বিষয়ে কিছু বলা নেই। এই বিষয়ে কিছু নির্দেশনা থাকা উচিৎ।

সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, বাস্তবতা আপনাদের অনুকূলে নেই। সরকার না চাইলে কমিশনের পক্ষে ভালো নির্বাচন সম্ভব না। কোনো দলের পক্ষে বক্তব্য দেওয়া কর্মকর্তাদের নজরদারিতে রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

সাবেক রাষ্ট্রদূত মো. হুমায়ূন কবীর বলেন, মানুষ প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলছে। এরমধ্যে নির্বাচন কমিশনও রয়েছে। সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ, ভোটারদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা এবং পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রথম আলোর যুগ্মসম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, নির্বাচন কমিশন ভোটার ও ভোটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন কীভাবে? নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। প্রধান চ্যালেঞ্জ সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করা। গণতন্ত্র না থাকলে এমন নির্বাচন অর্থহীন।

সভাপতির বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা একটা কঠিন অবস্থানের মধ্যে আছি। এটা অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচন হচ্ছে না। এখানে বিভিন্ন ধরনের সংকট আছে। অনেকগুলো সংকট কিন্তু নিরসন করতে হবে রাজনীতিকদের। এই কথাটি আমি বারবার বলেছি। আমাদের যদি অনুকূল পরিবেশ রাজনীতিবিদরা তৈরি না করে দেন, তাহলে আমাদের পক্ষে নির্বাচনটা অনুষ্ঠান করা কষ্টসাধ্য হবে। আর যদি অনকূল করে দেন তাহলে আমাদের জন্য সহজ হবে। নির্বাচনটা ভালো হবে কি মন্দ হবে এজন্য পলিটিক্যাল উইল থাকতে হবে। পলিটিক্যাল উইলটা পলিটিঙ থেকে আসতে হবে।

সাবেক এই আইন সচিব বলেন, সরকারি দল বলতে আইনে কিছু নেই। আমরা এটা মুখে বলে থাকি। যখনই একটা সরকার, সরকার হয়ে যায়, সে কিন্তু সকল দলের, পুরো দেশকেই প্রতিনিধিত্ব করে। আমরা অত্যন্ত আশ্বস্ত বোধ করছি যে, সরকারের তরফ থেকে বারবার বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীসহ আমরা আগামী নির্বাচনটাকে সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক করতে চাই। সেই প্রতিশ্রুতি কিন্তু সরকার দিয়েছে। আগে কিন্তু কখনো সরকার সেই প্রতিশ্রুতি দেয় নাই। এই প্রথমবারের মতো সরকারই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আইমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী, যোগাযোগ মন্ত্রী সরকার শব্দটা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীও স্পষ্টভাবে বেশ কয়েকার বলেছেন যে, সরকার আগামী নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিচ্ছে। আমি বলবো, আস্থা রাখতে চাই।

কাজী হাবিবুল আউয়াল আরও বলেন, আমরা বারবার বলেছি, একটা সমঝোতার কথা, আপনারা চায়ের টেবিলে বসেন। কিন্তু পলিটিক্যাল কালচার এমন হয়েছে, কেউ কারো সঙ্গে বসতে চাচ্ছেন না। ইসি এ সমস্যার সমাধান করে না। দেশজ পদ্ধতিতে (সমাধান) এটা হতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক সে ধরনের সিভিল সোসাইটি দেখতে পাচ্ছি না।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে রাজনীতিক প্রশ্নে রাজনীতি বেশ সার্ফলি, তীক্ষ্ণভাবে বিভক্ত। যার ফলে রাজনৈতিক বিতর্ক উপস্থাপন হলে আলোচনাগুলো খুবই ধারালো ও আক্রমণাত্মক হয়ে থাকে। আজকে সেদিকে যাবো না। আমরা সামনের দিকে তাকাতে চাচ্ছি। আপনাদের মাধ্যমে জনগণের প্রত্যাশা জানতে পারলে কিছুটা সমৃদ্ধ হবো।

নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খানের সঞ্চালনায় বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর, মো. আনিছুর রহমান, ইসি সচিব ও অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, সুধীজনের পরামর্শ নেওয়ার জন্যই এই বৈঠক। তবে ভোটের আগে দলগুলোর সঙ্গে তাদের বৈঠকে বসার আর কোনো পরিকল্পনা নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিচারকের স্বাক্ষর জাল করে ওয়ারেন্ট জারি
পরবর্তী নিবন্ধঝুঁকি নিয়ে মহাসড়ক পারাপার, ফকিরহাটে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের দাবি