ইসির বরখাস্ত কর্মচারী জয়নাল এবার জন্মনিবন্ধনে ধরা

বানিয়েছেন ৫০টির বেশি, প্রতিটিতে নিয়েছেন ১৫শ-১৮শ টাকা

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ১০:০৪ পূর্বাহ্ণ

সাময়িক বরখাস্ত হওয়া নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সমালোচিত কর্মচারী জয়নাল আবেদিনকে এবার চট্টগ্রামে জন্মনিবন্ধন সনদ জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে তাকে রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি ও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পাইয়ে দেয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভুয়া জন্মনিবন্ধনের ঘটনায় গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করেছে সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। গ্রেপ্তার জয়নাল আবেদিনের (৪২) বাড়ি বাঁশখালী। তিনি নগরীর ডবলমুরিং থানা নির্বাচন কার্যালয়ের অফিস সহায়ক পদে কর্মরত ছিলেন। ২০১৯ সালে গ্রেপ্তারের পর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছিল নির্বাচন কমিশন সচিবালয়।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার আসিফ মহিউদ্দীন আজাদীকে জানান, ভুয়া জন্মনিবন্ধনের ঘটনায় ২৪ জানুয়ারি নগরীর ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের জন্মনিবন্ধন সহকারী আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে খুলশী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় সর্বশেষ জয়নাল আবেদিনসহ এ পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় জয়নালের কাছ থেকে একটি মোবাইল জব্দ করা হয়। মোবাইলটি পরীক্ষানিরীক্ষা করে জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জয়নাল ৫০টিরও বেশি জাল জন্মনিবন্ধন বানানোর কথা স্বীকার করেছেন। প্রতিটি সনদের জন্য তিনি ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা নিয়েছেন। জালিয়াতির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করার অভিযোগে জয়নালের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় দুটি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। এসব অভিযোগে তিনি নির্বাচন কমিশন কার্যালয় থেকে বরখাস্ত হন। তার মতো একাধিক চক্র দেশব্যাপী এ অবৈধ কার্যক্রমে জড়িত আছে।

একই সংস্থার পরিদর্শক সঞ্জয় কুমার সিনহা বলেন, গ্রেপ্তার চারজনের কাছ থেকে আমরা তথ্য পেয়েছি, জয়নাল আবেদিন তাদের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে লোকজন সংগ্রহ করেন জন্মনিবন্ধনের জন্য। এরপর যে প্রক্রিয়া সেটি জয়নালই সম্পন্ন করেন। আমাদের ধারণা, মূল সার্ভারে প্রবেশ কিংবা হ্যাক করার বিষয়ে তার কাছে তথ্য আছে। এজন্য আমরা তাকে গ্রেপ্তার করে সাতদিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেছি।

এর আগে ২৪ জানুয়ারি আব্দুর রহমান আরিফ (২৫), দেলোয়ার হোসেন সাইমন (২৩), মোস্তাকিম (২২) ও তার শ্যালক ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছিল কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। খুলশী থানার মামলায় সাইমন, মোস্তাকিম ও আরিফ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

এরপর ২৫ জানুয়ারি দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডে ভুয়া জন্মনিবন্ধন করানোর অভিযোগে মনি দেবী নামে এক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার তথ্যের ভিত্তিতে ইপিজেড এলাকায় অভিযান চালিয়ে রাকিব হোসেন হিমেল (২৭) নামে এক কম্পিউটার দোকানিকে গ্রেপ্তার করা হয়, যিনি ওই নারীকে অবৈধভাবে জন্মনিবন্ধন করে দিয়েছিলেন।

৮ জানুয়ারি থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত নগরীর ৬টি ওয়ার্ডে ৭৯৭টি ভুয়া জন্মনিবন্ধনের প্রমাণ পাওয়ার তথ্য দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। ১১ নং দক্ষিণ কাট্টলী, ১৩ নং পাহাড়তলী, ১৪ নং লালখান বাজার, ৩২ নং আন্দরকিল্লা, ৩৮ নং দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর এবং ৪০ নং উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডে এসব জালিয়াতির ঘটনায় তিনটি মামলা ও একাধিক জিডি হয়েছে। খুলশী থানায় দুটি ও হালিশহর থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলা তদন্ত করছে সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।

এর আগে, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রামে রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি ও এনআইডি পাইয়ে দেয়া নিয়ে প্রথম জালিয়াতির ঘটনা উদ্‌ঘাটন হয়। ২০১৪ সালে মিয়ানমার থেকে আসা রমজান বিবি নামে এক নারী ভুয়া নামঠিকানা দিয়ে তৈরি করেন জাল এনআইডি। স্মার্ট কার্ড নিতে চট্টগ্রামের জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে গেলে সন্দেহবশত তাকে জেরা করা হয়। দেখা যায়, তার জন্মসনদ জাল। অথচ সেই জন্মসনদ ব্যবহার করে তৈরি করা পরিচয়পত্রের তথ্য নির্বাচন কমিশনের তথ্যভান্ডারে সংরক্ষিত আছে।

এ ঘটনার পর নগরীর ডবলমুরিং থানা নির্বাচন কার্যালয়ের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদিন, এনআইডি উইংয়ের কর্মী শাহনূর মিয়া, অস্থায়ী কর্মী মোস্তফা ফারুক, মো. শাহীন, মো. জাহিদ হাসান ও পাভেল বড়ুয়াসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। তাদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। জয়নাল আবেদিনের কাছ থেকে পুলিশ নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করেছিল। পরে দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধানে প্রকাশ হয়, ইসির হারিয়ে যাওয়া ল্যাপটপ ব্যবহার করে ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মোট ৫৫ হাজার ৩১০ জনকে অবৈধভাবে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং তাদের এনআইডি পাইয়ে দেয়া হয়। এদের প্রায় সবাই রোহিঙ্গা।

দুদক ১১ জনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছিল, যে মামলায় চট্টগ্রাম জেলার সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা খোরশেদ আলম, রামু উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহফুজুল ইসলাম, অফিস সহায়ক রাসেল বড়ুয়া ও টেকনিক্যাল এঙপার্ট মোস্তফা ফারুককে আসামি করা হয়েছিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনতুন কর্মপরিকল্পনায় সাজবে রাউজানসহ দুই পৌরসভা
পরবর্তী নিবন্ধমেরুদণ্ড জোড়া লাগানো শিশু নুহা ও নাবার প্রথম অস্ত্রোপচার