ইসির অফিস সহায়ক জয়নালের ৭৬ লক্ষ টাকার অবৈধ সম্পদ

আদালতে দুদকের চার্জশিট

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

রোহিঙ্গা ভোটার জালিয়াতি করে অবৈধ জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় নির্বাচন কমিশনের অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীন ও তার স্ত্রী আনিছুন নাহারের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছেন দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা। জয়নাল ও তার স্ত্রীর নামে ৭৬ লক্ষ ৩০ হাজার ৭৬৩ টাকা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ রয়েছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। আগামী ২১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. ইসমাইল হোসেনের আদালতে চার্জশিট গ্রহণ শুনানি রয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম আদালতে দুদকের আইনজীবী কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু।
২০১৯ সালের ২২ আগস্ট চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিসে এনআইডির স্মার্ট কার্ড তুলতে যান লাকী আকতার নামের এক নারী। এসময় নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের লাকী আকতারকে সন্দেহ হয়। এসময় জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে লাকী আকতার নামের ওই নারী রোহিঙ্গা। তিনি টাকার বিনিময়ে এনআইডি করিয়েছেন। ওই ঘটনা তদন্ত করতে নেমে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসার অবস্থা। রোহিঙ্গাদের ভোটার করার ঘটনায় প্রথমে কোতোয়ালি থানায় ও পরে ডবলমুরিং থানায় পৃথক দুটি মামলা করে নির্বাচন কমিশন। পরে ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে ইসির কর্মচারী জয়নালসহ আটজনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করে দুদক। দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ জাফর সাদেক শিবলীর দায়ের করা মামলায় জয়নাল আবেদীনকে আসামি করা হয়। মামলাটি তদন্ত করেন দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর সহকারী রতন কুমার দাশ। গত ১২ সেপ্টেম্বর তিনি সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ২৭(১) ধারা তৎসহ দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। মামলায় বাদী, গ্রহণকারী কর্মকর্তা, গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলী, সাব রেজিস্ট্রার, বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ ১৯ জনকে সাক্ষী করা হয়।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, বাড়ির তিন গণ্ডা জমি ব্যতিত কোন সম্পদ নেই জয়নালের পিতার। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে জয়নাল ছোট। অষ্টম শ্রেণি পাস জয়নাল আবেদীন ২০০৪ সালের ১ নভেম্বর ৫৯৬০ টাকা বেতন স্কেলে চট্টগ্রাম সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসে অফিস সহায়ক হিসেবে যোগদান করেন। মামলা দায়েরের আগে ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে তার মূল বেতন দাঁড়ায় ১৩৯০০ টাকা। ২০০৪ সালের নভেম্বর হতে ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত জয়নাল আবেদীন ২২ লক্ষ ৪৬ হাজার ৯শ টাকা বেতন ভাতা থেকে আয় করেছেন। এই সময়ে তিনি ১৭ লক্ষ ৯৭ হাজার ৫২০ টাকা পারিবারিক ব্যয় করেছেন। এতে তার সবমিলিয়ে সঞ্চয় দাঁড়ায় ৪ লক্ষ ৪৯ হাজার ৩৮০ টাকা। চাকুরিকালীন সময়ে জয়নাল ও তার স্ত্রী ৭৮ লক্ষ ৪৬ হাজার ৭৯৫ টাকার স্থাবর এবং ২ লক্ষ ৩৩ হাজার ৩৪৮ টাকা ব্যাংকে জমাস্থিতি হিসেবে অস্থাবর সম্পদসহ ৮০ লক্ষ ৮০ হাজার ১৪৩ টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। এরমধ্যে ৭৬ লক্ষ ৩০ হাজার ৭৬৩ টাকা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ বলে উল্লেখ করা হয়। তাছাড়া তার নিজের ও স্ত্রীর নামে খরিদা ৭ শতাংশ জমির উপর ভবন নির্মাণ করছেন। মামলার তদন্তে নেমে তদন্তকারী কর্মকর্তা গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীদের সহযোগিতা নিয়ে ওই বাড়ির নির্মাণ ব্যয় নির্ধারণ করেন। বাড়িটি নির্মাণে ৬১ লক্ষ ২৬ হাজার ৮৪১ টাকা খরচ হয়েছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। এদিকে মামলার অভিযোগপত্রে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের কথা বলা হলেও কিভাবে এ অর্থবিত্তের মালিক বনেছেন সে বিষয়ে উল্লেখ করা হয়নি।
আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জয়নাল স্বীকারও করেন, রোহিঙ্গাদের ভোটার করার জন্য প্রতিজন থেকে ৫ হাজার টাকা করে নিতেন। নির্বাচন কমিশনের সার্ভার ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের ভোটার করতেন তিনি। সবমিলিয়ে জয়নাল একাই ১৮শ রোহিঙ্গাকে ভোটার করেছেন বলে আদালতে স্বীকার করেন। হিসেব মতে, ১৮শ রোহিঙ্গাকে ভোটার করেই জয়নুল কমপক্ষে ৯০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৩১% শিক্ষার্থী পেয়েছে দুই ডোজ চাহিদা আরও ৪৮ হাজার
পরবর্তী নিবন্ধচমেক হাসপাতাল নালা থেকে পলিথিনে মোড়ানো নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার