আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেড় মাসের কিছু বেশি সময়ের ব্যবধানে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারদর দ্বিগুণের বেশি হয়ে যাওয়ার পর কারসাজির সন্দেহে তদন্তের নির্দেশ এসেছে। পুঁজিবাজারে টানা দরপতনের মধ্যেও এই ব্যাংকের শেয়ারের আগুন দর নিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কাছ থেকে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন চেয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন–বিএসইসি। খবর বিডিনিউজের।
গতকাল রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ–ডিএসইর চিফ রেগুলেটরি অফিসারকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএসইসির মুখপাত্র ও পরিচালক ফারহানা ফারুকী। বিএসইসির দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, গত ৬ আগস্ট থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারদর যে হারে বাড়ছে তা অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক। শেয়ার লেনদেনে কোনো ধরনের ‘ইনসাইডার ট্রেডিং’, ‘কারসাজি’ বা অন্য কোনো ধরনের ‘অনিয়ম’ হয়েছে কি না, তা খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারে থাকার সময় ফ্লোর প্রাইস ৩২ টাকা ৬০ পয়সায় ক্রেতা ছিল না। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরেই একই চিত্র ছিল। তবে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই ব্যাংকটির শেয়ারে জোয়ার দেখা দেয়। ৩৪ কর্মদিবস পর শেয়ারদর ৭০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে, দাম বেড়েছে ৩৭ টাকা ৮০ পয়সা বা ১১৫ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে গত ছয় কর্মদিবসে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর দাম ছিল ৪৫ টাকা ৮০ পয়সা, বুধবার দাঁড়িয়েছে ৭০ টাকা ৪০ পয়সা।
ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারদর বৃদ্ধির এই প্রবণতা পুঁজিবাজারের সামগ্রিক চিত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বিনিয়োগকারীরা দেড় মাসে বিপুল পরিমাণ টাকা খুইয়েছেন শেয়ারের দরপতনে। ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারদর বৃদ্ধির এই প্রবণতা পুঁজিবাজারের সামগ্রিক চিত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বিনিয়োগকারীরা দেড় মাসে বিপুল পরিমাণ টাকা খুইয়েছেন শেয়ারের দরপতনে। ২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপের মালিকানায় যাওয়ার পর সাত বছরে এটিই ব্যাংকটির শেয়ারের সর্বোচ্চ দর।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ থেকে এস আলম গ্রুপকে সরিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ইসলামী ব্যাংকে বিদেশি মালিকানা আসার বিষয়ে কথা বলেছেন। এরপর থেকেই শুরু হয় এমন উত্থান।
ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারে এমন উত্থানের সঙ্গে পুঁজিবাজারের সামগ্রিক চিত্রের কোনো মিলই নেই। সরকার পতনের পর চার কর্মদিবসে ডিএসইর সার্বিক সূচক ৭৮৬ পয়েন্ট বেড়ে গেলেও পরে টানা পতন হচ্ছে। ১১ আগস্ট ডিএসইএঙের সূচক ৬ হাজার ১৫ পয়েন্ট হলেও এখন তা ৫ হাজার ৭৩৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, সূচক কমেছে ২৭৮ পয়েন্ট।
ইসলামী ব্যাংক ছাড়াও ইবনেসিনা ফার্মাসিউটিক্যালস, গ্রামীণ ফোন, ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো কোম্পানি, ব্র্যাক ব্যাংকের মতো কিছু কোম্পানির শেয়ারদর অনেকটাই বেড়েছে, যেগুলো সূচকে প্রভাব রাখে অনেকটাই। এর বিপরীতে বেশিরভাগ কোম্পানির ব্যাপক দরপতন ঘটছে, যে কারণে সূচক পৌনে তিনশ পয়েন্ট কমলেও বিনিয়োগকারীর আর্থিক ক্ষতি আসলে অনেক বেশি।