ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে এস আলমের মালিকানায় থাকা এ ব্যাংকের সব শেয়ার সরকারি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার কথা বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। শুধু শরিয়াহভিত্তিক দেশের অন্যতম বৃহত্তম এ ব্যাংক নয়, ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এস আলমের মালিকানায় থাকা অন্য ব্যাংকগুলোর পর্ষদও ধীরে ধীরে ভেঙে দেওয়ার কথা বলেছেন তিনি। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকে সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর এসব সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরেন। খবর বিডিনিউজের।
যারা ঋণের নামে ব্যাংক থেকে টাকা বের করে নিয়ে আর ফেরত দেননি, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। বলেন, টাকা উদ্ধার করতে আইনগত পন্থা আছে। কর্তৃপক্ষ সেসব অনুসরণ করবে।
এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের (এস আলম) ছেলে আহসানুল আলমের নেতৃত্বাধীন ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান পর্ষদ ভেঙে সেখানে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হবে। বর্তমান চেয়ারম্যান আহসানুল ও অন্য পরিচালকরা সবাই এস আলম গ্রুপের মনোনীত প্রতিনিধি।
পর্ষদ ভেঙে দেওয়া ব্যাংকগুলো কারা চালাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, সরকার কোনো ব্যাংকের দায়িত্ব নেবে না। আপাতত স্বতন্ত্র পরিচালক দিয়ে ব্যাংকগুলো চলবে। এস আলম গ্রুপ ছাড়া অন্যদের হাতে ২ শতাংশের বেশি শেয়ার থাকলে পরে তারা পর্ষদে আসতে পারবেন। এস আলম গ্রুপের কাছে কত ঋণ আছে, জানতে চাইলে আহসান এইচ মনসুর বলেন, নামে–বেনামে কত ঋণ আছে, তা জানা যায়নি। বেনামি ঋণের তথ্য এখনো আমাদের কাছে নেই। তবে এসব তথ্য বের হবে। এ জন্য কিছুটা সময় প্রয়োজন হবে। তিনি বলেন, দুর্বল ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হবে। ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। অন্য ব্যাংকগুলো নিয়েও একই সিদ্ধান্ত হবে।
অর্থনীতিকে বাঁচাতে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশ যাতে কোনো বিদেশি ঋণে খেলাপি না হয় সেদিকেও নজর দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া বৈদেশিক লেনদেনে কোনো রকমের প্রশ্ন না ওঠে সে বিষয়েও সবাইকে সঠিক নিয়মের মধ্যে কাজ করতে হবে।
২০১৭ সালে জোরজবরদস্তি করে ইসলামী ব্যাংকের কর্তৃত্ব নেয় এস আলম গ্রুপ। তারপর নামে বেনামে ব্যাংক থেকে ঋণ বের করে নেয় গ্রুপটি। তাতে অবনতি ঘটে ব্যাংকটির। শুধু ইসলামী ব্যাংক থেকেই গ্রুপটি ৭৫ হাজার কোটি টাকা বের করে নেয়। এর মধ্যে খাতুনগঞ্জ শাখা থেকেই ৬৭ হাজার কোটি টাকা বের হয়ে যায়।
ছাত্র–জনতার তুমুল আন্দোলনের মধ্যে সরকার পতনের পরদিনই এস আলম মুক্ত করতে বিক্ষোভ ও আন্দোলনে নামে ইসলামী ব্যাংকের কর্মীরা। এ নিয়ে একদিন গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। ইসলামী ব্যাংক ও এস আলম নিয়ে আলোচনার মধ্যেই ব্যাংকটি নিয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া শুরু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।