ইসরায়েল ইরানে প্রথম হামলা চালানোর পর দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল ষষ্ঠদিনে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। ইরানের দাবি, ‘ফাত্তাহ’ নামের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে সফলভাবে প্রবেশ করেছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রেস টিভিও জানিয়েছে, ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) অভিযানের সর্বশেষ পর্যায়কে ‘একটি টার্নিং পয়েন্ট’ হিসাবে বর্ণনা করে বলেছে প্রথম প্রজন্মের ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন ইসরায়েলের ‘কাল্পনিক’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সমাপ্তির সূচনা। বর্তমান যুদ্ধে ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। সংঘাত শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ইরান থেকে ৪০০ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ১০০০ ড্রোন ছুড়েছে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের একজন সামরিক কর্মকর্তা।
অপরদিকে ইরানের রাজধানীর কাছে খোজির ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন স্থাপনা লক্ষ্য করে ইসরায়েল তাদের সবশেষ হামলা চালিয়েছে। ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সম্পর্কিত অবকাঠামোর জন্য এই স্থাপনাটি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। গত অক্টোবরেই ইরানে হামলার সময় এটি টার্গেট করেছিল ইসরায়েল। তেহরানের পূর্ব উপকণ্ঠে অবস্থিত ইমাম হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করেছে ইসরায়েল। বিশ্ববিদ্যালয়টি ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের সাথে যুক্ত বলে মনে করা হচ্ছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এঙ–নেটে লিখেছেন, ইরানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ভবন ধ্বংস করা হয়েছে। তার দাবি এটি ইরানের সরকারের দমনমূলক কর্মকাণ্ডের মূল কেন্দ্র।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে নিঃশর্তে আত্মসমর্পণ করার যে আহ্বান জানিয়েছিলেন তা প্রত্যাখ্যান করেছেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। তিনি বলেন, ইরান, এর জনগণ এবং এর ইতিহাস সম্পর্কে জানা ব্যক্তিরা কখনোই এই জাতির সাথে হুমকির ভাষায় কথা বলেন না। কারণ ইরানিরা আত্মসমর্পণ করে না।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জানা উচিত তাদের যেকোনো সামরিক হস্তক্ষেপ সন্দেহাতীতভাবে তাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বয়ে আনবে। ইরানি জাতি চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ ও চাপিয়ে দেয়া শান্তির বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াবে এবং এই জাতি চাপের মুখে কারও কাছে আত্মসমপর্ণ করবে না।
খামেনি আরো বলেন, ‘ঘটনাগুলো এমন সময় ঘটেছে যখন ইরানের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সরাসরি আলোচনায় ছিল এবং ইরানের দিক থেকে কোনো সামরিক বা কঠিন পদক্ষেপ নেয়ার ইঙ্গিত ছিল না। অবশ্যই, শুরু থেকেই এটা সন্দেহ করা হতো যে জায়নবাদী (ইহুদিবাদী) সরকারের যে কোনো পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতা ছিল এবং আমেরিকার কর্মকর্তাদের সামপ্রতিক বক্তব্যগুলোতে এই সন্দেহই দিন দিন জোরালো হচ্ছিলো।’ খামেনি বলেন, ইহুদীবাদী শত্রুকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে এবং ইরান জাতি ও সশস্ত্র বাহিনীর কাছ থেকে তারা তা পাচ্ছে।
এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন যে আয়াতোল্লাহ আলী খামেনির অবস্থান তাদের জানা, তবে তাকে হত্যার কোনো পরিকল্পনা অন্তত এখন তাদের নেই। ট্রাম্পের এই পোস্টের পরপরই ইরানের রেভ্যলুউশনারি গার্ড টেলিগ্রামে দেয়া পোস্টে লিখেছে, ‘আমেরিকান মিথ্যাবাদী প্রেসিডেন্টের জানা উচিত যে ইরান সম্ভাব্য সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছে এবং সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হবে সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতি। এটা শুধু আমেরিকার স্বার্থকে নয়, বরং পশ্চিমা সব স্বার্থকে পুড়িয়ে দেবে।’
এদিকে ইরানে ইসরায়েলের হামলায় যোগ দেবেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্নই জিইয়ে রাখলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ‘আমি এটা (ইরানে হামলা) করতেও পারি, নাও করতে পারি।’ হোয়াইট হাউজের সাউথ লনে একটি পতাকাদণ্ড স্থাপনের কাজ তদারকির সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের এই জবাব দেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্র ইরানে ইসরায়েলের হামলায় যোগ দেবে কিনা সে প্রশ্ন করা হয়েছিল তাকে। ট্রাম্প বলেন, ‘আমি কী করতে চলেছি, তা কেউই জানে না।’ কিন্তু তিনি বলেন, আমি এটি বলতে পারি যে, ইরান খুবই সমস্যায় আছে। তারা হোয়াইট হাউজে বসে আলোচনা করতে চায়।
তবে ট্রাম্পের এমন বক্তব্য নাকচ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে অবস্থিত ইরানের কূটনৈতিক মিশন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তারা বলেছে, ‘কোনও ইরানি কর্মকর্তা হোয়াইট হাউজের দরজায় মাথা নোয়াতে চায়নি। তার (ট্রাম্প) মিথ্যার চেয়ে আরও ঘৃণ্য বিষয় হল তার কাপুরুষোচিত হুমকি। ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে হত্যা করার হুমকি দিয়েছেন তিনি’, বলা হয় এক্সের পোস্টে।