ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের রাজনৈতিক শাখার শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়া হত্যার প্রতিশোধের জন্য ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ইসরায়েলে সরাসরি হামলার নির্দেশ দিয়েছেন বলে তিন ইরানি কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস। টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই কর্মকর্তাদের ওই আদেশের বিষয়ে জানানো হয়েছে এবং তাদের মধ্যে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের দুই সদস্যও আছেন। হানিয়াকে হত্যা করা হয়েছে বুধবার সকালে, ইরান এটি জানার কিছুক্ষণ পর দেশটির সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে খামেনি ওই আদেশ দেন বলে জানিয়েছেন তারা।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার ইরানের রাজধানীতে ইসমাইল হানিয়ার শেষকৃত্য হয়েছে। তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে তার জানাজার নামাজে ইমামতি করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। আল–জাজিরা জানায়, হানিয়ার পোস্টার এবং ফিলিস্তিনি পতাকা নিয়ে বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জড়ো হয় হাজার হাজার শোকার্ত মানুষ। জানাজা শেষে হানিয়া ও তার দেহরক্ষীর মৃতদেহ নিয়ে আজাদী স্কয়ার পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে মিছিল করেছে জনতা। তেহরানে এই আনুষ্ঠানিকতা শেষের পর ইসমাইল হানিয়ার লাশ কাতারের রাজধানী দোহায় নিয়ে যাওয়া হবে তাকে সমাহিত করার জন্য। খবর বিডিনিউজের।
হানিয়া হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে ইরান ও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজায় হামাসের সঙ্গে যুদ্ধরত ইসরায়েল হানিয়া হত্যার কথা স্বীকার বা অস্বীকার, কোনোটাই করেনি। ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মঙ্গলবার তেহরানে গিয়েছিলেন হানিয়া। ওই অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর বুধবার দুপুর রাতে তেহরানে নিজ বাসভবনে সম্ভাব্য ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত হন হানিয়া। স্বীকার না করলেও ইসরায়েলের এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটানোর দীর্ঘ ইতিহাস আছে। এর আগে তারা ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানী ও সামরিক কমান্ডারদের এ ধরনের গুপ্ত হামলা চালিয়ে হত্যা করেছিল।
গাজায় প্রায় ১০ মাস ধরে চলা যুদ্ধের পুরোটা সময় ইরান একটা ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। মধ্যপ্রাচ্যে থাকা মিত্র ও ছায়া বাহিনীগুলোর মাধ্যমে ইসরায়েলে ক্রমাগত হামলা বাড়িয়ে দেশটিকে চাপে রাখার চেষ্টা করলেও সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়িয়ে গেছে।
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের দূতাবাস কম্পাউন্ডে ইসরায়েলি হামলায় বেশ কয়েকজন ইরানি কমান্ডার নিহত হওয়ার পর এপ্রিলে ইসরায়েলের ওপর প্রকাশ্যে সবচেয়ে বড় হামলাটি চালিয়েছিল তেহরান। হামলাটি চালাতে কয়েকশ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করেছিল তারা, যার অধিকাংশই প্রতিহত করেছিল ইসরায়েল ও এর মিত্ররা। ওই ইরানি কর্মকর্তারা বলেছেন, ইরানের সামরিক কমান্ডাররা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র যোগে তেল আবিব ও হাইফার সামরিক লক্ষ্যস্থলগুলোতে হামলা চালানোর কথা বিবেচনা করছেন, কিন্তু বেসামরিক লক্ষ্যস্থলে হামলা এড়াবেন। প্রতিক্রিয়া জানাতে ইরান কতোটা শক্তিপ্রয়োগ করবে নাকি পরিস্থিতি আরও নাজুক করে তোলা এড়াতে আরেকবার সবকিছু সতর্কভাবে মূল্যায়ন করবে তা এখনও পরিষ্কার হয়নি।