ইসরায়েলি হামলায় শিশুসহ আরও ৪০ ফিলিস্তিনি নিহত

সমঝোতার আভাস নেই, জাতিসংঘে গাজা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো

| শুক্রবার , ২০ অক্টোবর, ২০২৩ at ৫:১০ পূর্বাহ্ণ

গাজা উপত্যকায় গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান হামলায় ৪০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজা শহরের দক্ষিণে খান ইউনিসের একটি বাড়িতে বিমান হামলায় সাত শিশুসহ নয়জন নিহত হয়েছেন। তা ছাড়া দক্ষিণ গাজা উপত্যকার রাফাহ তাল আলসুলতান এলাকায় হামলা চালায় ইহুদি সেনারা। এ ঘটনায় নিহত হন অন্তত ৩০ জন; আহতের সংখ্যা কয়েক ডজন। আল জাজিরা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ভোরে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা কার্যত আরো বেশি। কেননা, বেশ কয়েকটি এলাকাকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে হামলা করেছিল ইসরায়েল। খবরে বলা হয়েছে, দক্ষিণ গাজায় বাস্তুচ্যুত লোকদের আশ্রয় দেওয়া একটি স্কুলের কাছের এক বাড়িতে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এ সময় বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি নিহত হন। নিহতদের মধ্যে সাত শিশু রয়েছে। বিমান হামলায় বাড়িটি ধসে পড়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন। এক ছবিতে দেখা যায়, খান ইউনিসের গাজা ইউরোপিয়ান হাসপাতালে একটি স্ট্রেচারে ছয়টি শিশুর মরদেহ রাখা। তাদের শরীরের ওপরে শুধু ধুলার আস্তরণ। হাসপাতালের চিকিৎসকরা এ দৃশ্য দেখে শুধু কেঁদেই যাচ্ছিলেন। হাসপাতালের পরিচালক ডা. ইউসুফ আল আক্কাদ বলেন, এটি একটি গণহত্যা। বিশ্ব দেখুকএরা শুধুই শিশু। ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর হামলায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান জিহাদ মহসিন নিহত হয়েছেন। গতকাল হামাস সংশ্লিষ্ট একটি সংবাদমাধ্যমের বরাতে আল জাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে। বলা হয়েছে, গাজা সিটির শেখ রেদওয়ান অঞ্চলে জিহাদ মহসিনকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। তবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী জিহাদ মহসিনের নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি। অন্যদিকে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় হামাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কমিটি পলিটব্যুরোর একমাত্র নারী সদস্যও প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি গণমাধ্যম।

ইসরায়েলফিলিস্তিনের যুদ্ধবিরতির জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে এই খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল ব্রাজিল। আল জাজিরার আরেক প্রতিবেদনে জানা যায়, বুধবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ১৫ সদস্যের মধ্যে ১২ সদস্যই এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। বিপক্ষে একমাত্র ভোট দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে রাশিয়া ও যুক্তরাজ্য এই প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল। জাতিসংঘে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেছেন, মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে রাশিয়ার আনা একটি খসড়া প্রস্তাবও সোমবার নিরাপত্তা পরিষদে পাস হয়নি।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, এ মাসের সাত তারিখ থেকে শুরু হওয়া সংকট ক্রমশঃ উত্তপ্ত হচ্ছে। সর্বশেষ গাজায় হাসপাতালে বিমান হামলার পর সংকট নিরসনের সম্ভাবনা আরো ক্ষীণ হয়ে গেছে। এদিকে, ইসরায়েল বা হামাস কারো মধ্যেই সমঝোতার কোন আভাস দেখা যাচ্ছে না। এর আগে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চল থেকে হামাস বন্দুকধারীরা অন্তত ১৫০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে গিয়েছিল, যাদের গাজার বিভিন্ন গোপন জায়গায় রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে নারী, শিশু ও বয়স্করাও রয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ইসরায়েল যদি এখন গাজায় পূর্ণ মাত্রার অভিযান চালায়, তাহলে এসব জিম্মি বেঁচে থাকার সুযোগ পাবে? ইসরায়েল একটি স্থল অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর অংশ হিসেবে এরই মধ্যে গাজা সীমান্তে সেনা মোতায়েন, ভারী আর্টিলারি এবং ট্যাংক জড়ো করেছে তারা। ইসরায়েলে হামাসের সশস্ত্র সদস্যরা অতর্কিত হামলা চালানোর পর থেকে গাজায় বিমান হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল।

পেছন থেকে কাতার, মিশর ও সম্ভবত আরও কয়েকটি দেশ জিম্মিদের একাংশের মুক্তির জন্য তৎপরতা চালাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। একটি আইডিয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে যে হামাস নারী ও শিশু বন্দীদের মুক্তি দেবে এবং বিনিময়ে ইসরায়েল ৩৬ নারী ও কিশোর বন্দীকে ছেড়ে দেবে। ইসরায়েলের রেইচম্যান ইউনিভার্সিটির ইন্সটিটিউট ফর পলিসি অ্যান্ড স্ট্রাটেজির সিনিয়র বিশ্লেষক মাইকেল মিলস্টাইন বলছেন যে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যে কোন মূল্যে জিম্মি হওয়া ব্যক্তিদের ফেরত পাওয়াই হতো ইসরায়েলের বড় অগ্রাধিকার। কিন্তু এখন তাদের অগ্রাধিকার হলো সামরিক হুমকি হিসেবে হামাসকে নির্মূল করা। উভয় পক্ষেই উত্তেজনা ও ক্রোধ বাড়ছে। ইসরায়েল ও হামাসকারও মধ্যেই সমঝোতার মেজাজটাই নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিকলবাহা খালে নির্মিত হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন স্টিল আর্চ ব্রিজ
পরবর্তী নিবন্ধআইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি নিয়ে ঐকমত্য