ইসরায়েলকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রের পরিমাণ প্রকাশ্যে

গাজা যুদ্ধ | রবিবার , ৩০ জুন, ২০২৪ at ৪:৫১ পূর্বাহ্ণ

গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বাইডেন প্রশাসন বিপুল পরিমাণ সামরিক রসদ ইসরায়েলকে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। খবর বিডিনিউজের।

হালনাগাদ তথ্যের ভিত্তিতে তারা জানিয়েছেন, গত অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে কিছু দিন আগ পর্যন্ত অন্তত ১৪ হাজার এমকে৮৪ বোমা দিয়েছে। ২০০০ পাউন্ডের এসব বোমাকে অত্যাধিক ধ্বংসাত্মক বলে বিবেচনা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা অস্ত্রের তালিকায় আছে সাড়ে ছয় হাজার ৫০০ পাউন্ড বোমা, তিন হাজার হেলফায়ার প্রিসিশন গাইডেড এয়ারটুগ্রাউন্ড ক্ষেপণাস্ত্র, এক হাজার বাঙ্কারবাস্টার বোমা, ছোট ব্যাসের এয়ারড্রপড দুই হাজার ৬০০ বোমা এবং অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র। ওই কর্মকর্তারা নিজদের নাম প্রকাশ করতে চাননি।

রয়টার্স লিখেছে, অস্ত্রের চালান পাঠানোর সময় সম্পর্কে তারা স্পষ্ট ধারণা না দিলেও মোট অস্ত্রের পরিমাণ দেখে বোঝাই যায় যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রকে অস্ত্র সরবরাহ তেমন কমায়নি। তার মানে অস্ত্র সরবরাহ সীমিত করার আন্তর্জাতিক আহ্বান এবং শক্তিশালী বোমা না পাঠাতে যুক্তরাষ্ট্র সমপ্রতি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা বাস্তবে প্রতিফলিত হয়নি। ইসরায়েলের হিসাবে, গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ১২০০ জন নিহত হয়েছে, জিম্মি হয়েছে ২৫০ জন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাজায় গত আট মাসের অভিযানে ব্যবহৃত অস্ত্রের সরবরাহ পূরণ করতে যা প্রয়োজন তার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রের চালান সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে।

সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের অস্ত্র বিশেষজ্ঞ টম কারাকো বলেন, যদিও এই সংখ্যক (অস্ত্র) একটি বড় সংঘাতে তুলনামূলকভাবে কম সময়ে খরচ হতে পারে, তবে এই তালিকা আমাদের ইসরায়েলি মিত্রদের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের স্পষ্ট প্রতিফলন দেখাচ্ছে।

হামাস বা হিজবুল্লাহর সঙ্গে সংঘাতে ইসরায়েল যাতে ব্যবহার করতে পারেএমন অস্ত্রই তালিকায় দেখা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। রয়টার্স লিখেছে, গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইসরায়েলে পাঠানো সামরিক রসদের এতো বিস্তৃত ও হালনাগাদ তথ্য এর আগে প্রকাশ হয়নি।

গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল এবং ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহর মধ্যে গোলাগুলি চলে আসছে। যেকোনো সময় তাদের মধ্যে যুদ্ধ বাধতে পারে বলেও উদ্বেগ আছে। অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে হোয়াইট হাউস কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি দূতাবাসের বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে তারা সাড়া দেননি।

যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা বলেছেন, গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর অস্ত্রের বড় তালিকার অংশ হিসেবে এসব চালান পাঠানো হয়েছে। বাইডেন প্রশাসনের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, ৭ অক্টোবরের পর থেকে ইসরায়েলকে ৬৫০ কোটি ডলারের নিরাপত্তা সহায়তা দিয়েছে ওয়াশিংটন।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সামপ্রতিক সপ্তাহগুলোতে দাবি করেছেন যে, ওয়াশিংটন অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। যদিও মার্কিন কর্মকর্তারা কিছু বাধার কথা স্বীকার করলেও নেতানিয়াহুর দাবি অস্বীকার করেছেন।

গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারেএমন আশঙ্কায় দুই হাজার পাউন্ড বোমের একটি চালান পাঠানোর উদ্যোগ থামিয়ে দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জোর দিয়েই বলেছেন, অন্যান্য অস্ত্র সরবরাহ স্বাভাবিকই থাকবে। দুই হাজার পাউন্ডের একটি বোমা কংক্রিট ও ধাতব ভেদ করতে পারে, সৃষ্টি করতে পারে বিস্তৃত ব্যাসাধের্র বিস্ফোরণ।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, রাফায় সামরিক অভিযান নিয়ে উদ্বেগের কারণে বোমার যে চালান পাঠানোর উদ্যোগ মে মাসে স্থগিত করা হয়, সেই সিদ্ধান্ত পাল্টাতে ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র।

গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী যুদ্ধে ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা ৩৭ হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ায় এবং ওই ভূখণ্ড ধ্বংসস্তূপে পরিণত করায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান নিয়ে আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি আরও জোরাল হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন গড়াল দ্বিতীয় দফায়
পরবর্তী নিবন্ধবাইডেনকে একহাত নিউ ইয়র্ক টাইমসের ভোটের লড়াই থেকে সরার আহ্বান