চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজেদের ইশতেহার ঘোষণা করেছে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির সমর্থিত দুই প্যানেল। শিক্ষার্থীদের স্বার্থ, নিরাপদ ক্যাম্পাস, আবাসন ও পরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়নসহ নানা বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েছে দুটি প্যানেলই। গতকাল বুধবার পৃথক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে প্যানেল দুটি তাদের ইশতেহার ঘোষণা করেছেন।
ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ৮ দফা ইশতেহার : বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল তাদের ৮ দফা মূল ইশতেহার ও ৬৯টি উপদফা ঘোষণা করে। প্যানেলটির সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় আনুষ্ঠানিকভাবে ইশতেহার ঘোষণা করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির, সহসভাপতি জিয়াউদ্দিন বাসেতসহ কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতারা।
ছাত্রদল ঘোষিত ৮ দফা ইশতেহার হল–শিক্ষা ও গবেষণাকে প্রাধান্য দিয়ে আধুনিক ও শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তোলা, মানসম্মত খাদ্য ও আবাসনের অধিকার নিশ্চিত করা, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও আইনী সহায়তা নিশ্চিত করা, নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস ও নারী স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা, পরিবহন ব্যবস্থার মানোন্নয়ন ও সমপ্রসারণ, মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করা, সাহিত্য–সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও বিনোদনমূলক কার্যক্রম সমৃদ্ধকরণ এবং ক্যারিয়ার গঠনের দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।
ইশতেহার ঘোষণাকালে সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় বলেন, শিক্ষার্থীরা আমাদের ইশতেহার জানার জন্য অনেক আগ্রহী ছিলেন। ইশতেহার তৈরির আগে আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়েছি, তাদের চাহিদাগুলো বুঝার চেষ্টা করেছি। সে আলোকেই আমাদের ৮ দফা ও ৬৯টি সাব দফা দিয়ে ইশতেহার তৈরি করেছি। শিক্ষার্থীদের ভাবনাই আমাদের ইশতেহার। আমরা ইশতেহার বাস্তবায়নে সর্বাত্মকভাবে কাজ করব।
শিবির সমর্থিত প্যানেলের ৩৩ দফা ইশতেহার : গতকাল দুপুর ৩টার দিকে একই স্থানে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘সমপ্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ তাদের ৩৩ দফা ইশতেহার ঘোষণা করে। ইশতেহার ঘোষণা করেন প্যানেলটির সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী ইব্রাহিম হোসেন রনি।
৩৩ দফা ইশতেহার হল–আবাসন সংকট নিরসন ও উন্নয়ন, শাটলের সংখ্যা বৃদ্ধি ও আধুনিকায়ন, নিরাপদ বাস সার্ভিস, সুলভ মূল্যে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিতকরণ, সেশনজট নিরসন, কটেজ–মেসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সুবিধা, নিয়মিত চাকসু নির্বাচন, ফ্যাসিবাদের দোসরমুক্ত ক্যাম্পাস বিনির্মাণ, মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা ধারণ, মাতৃত্বকালীন ছুটি ও নারীবান্ধব কমনরুম, যৌন হয়রানি ও সাইবার বুলিং প্রতিরোধ, শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিতকরণ, গবেষণায় উৎসাহ ও বরাদ্দ বৃদ্ধি, শিক্ষার্থীবান্ধব লাইব্রেরি, মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, সাশ্রয়ী মূল্যে উন্নত চিকিৎসা সেবা, নিরাপদ ও গ্রিন ক্যাম্পাস, নারীবান্ধব ক্যাম্পাস, হল ও ফ্যাকাল্টিভিত্তিক সমস্যা সমাধান, প্রেয়ার রুম উন্নয়ন, সাহিত্য–সংস্কৃতি চর্চার বিকাশ ও সকল জাতিগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষা, অটোমেশন পদ্ধতি চালু, উচ্চশিক্ষা ও স্কিল ডেভেলপমেন্ট, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অধিকার ও শিক্ষাবৃত্তি, টিএসসি ও সেন্ট্রাল অডিটোরিয়াম নির্মাণ, শরীরচর্চার সুযোগ সৃষ্টি, লিগ্যাল এইড সেল গঠন, অফিসিয়াল ই–মেইল চালু, অ্যালামনাইদের সঙ্গে সমন্বয়, মেন্টাল হেলথ কাউন্সিল ও অন–ক্যাম্পাস জব চালু।
ইশতেহার ঘোষণা শেষে ইব্রাহিম হোসেন রনি বলেন, আমরা প্রচারণাকালে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মৌলিক সমস্যাসহ অন্যান্য সমস্যা ও প্রত্যাশাগুলো ইশতেহারে তুলে ধরেছি। আমরা নির্বাচিত হলে সবাইকে সাথে নিয়ে কাজগুলো করার চেষ্টা করবো।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী সাঈদ বিন হাবিব, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) সাজ্জাদ হোসেন মুন্নাসহ প্যানেলের অন্যান্য সদস্যরা।
উল্লেখ্য, আগামী ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চাকসু নির্বাচন। এদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত পাঁচটি ভবনে ১৫টি হলের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।