চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী এবং ডা. শাহাদাত হোসেনের নির্বাচনী ইশতেহারে সমান গুরুত্ব পেয়েছে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের বিষয়টি। জলাবদ্ধতা নিরসনকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে নিজেদের মতো করে বাসযোগ্য, উন্নত ও নান্দনিক নগর হিসেবে সাজাতে চান তারা। গতকাল একই দিনে ইশতেহার ঘোষণা করেছেন দুই প্রার্থী। জলাবদ্ধতা ছাড়াও দুই প্রার্থীর ইশতেহারে যে বিষয়গুলো গুরুত্ব পেয়েছে সেগুলো হলো নগরীর দখলকৃত খাল, নালা, নদী পুনরুদ্ধার; খাল, নালা-নর্দমা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কার করা। এছাড়া আরেকটি বড় সমস্যা যানজট নিরসনের কথা ইশতেহারে গুরুত্বের সাথে এসেছে।
রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, নগরীর বড় সমস্যা যানজট তথা ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা। নগরীতে সড়ক সুবিধার তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা বেশি। আধুনিক সুবিধার পাবলিক যানবাহনের তুলনায় ব্যক্তিগত যান ও রিকশা, ভ্যান, ঠেলার মতো মনুষ্যচালিত যানের সংখ্যা বেশি। অসংখ্য বহুতল বাণিজ্যিক বা আবাসিক ভবন, নগরীর ব্যস্ততম এলাকায় রাস্তার পাশে যত্রতত্র গড়ে ওঠা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কনভেনশন সেন্টারের নিজস্ব বা আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং নেই। ফলে রাস্তায় গাড়ি রাখায় মূল সড়কের অর্ধেক বেদখলে চলে যায়। এতে যানজট হয়। পরিবেশ উপযোগী ও উন্নত দেশের আদলে টেকসই সড়ক তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি ব্যস্ততম পয়েন্টগুলোতে নিরাপদ পথচারী পারাপারে আন্ডারপাস চালুর উদ্যোগ নেব।
শাহাদাত হোসেন বলেছেন, যানজট নিরসনে উন্নত বিশ্বের অনুকরণে বাইপাস সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়াসহ গণপরিবহনে আধুনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নাগরিকদের যাতায়াত সুবিধার জন্য পরিকল্পিত স্মার্ট বাস স্টপ নির্মাণ করা।
ইশতেহারে দুই মেয়র প্রার্থী পর্যটন খাতকে সমান গুরুত্ব দিয়েছেন। রেজাউল বলেছেন, স্বল্প বিনিয়োগ, পরিচর্যা ও উপযুক্ত প্রচারণার মাধ্যমে পর্যটন খাতে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় সম্ভব। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে পর্যটন খাত ও সৈকত পর্যটনে আধুনিক সুবিধা যোগ করে এই খাত থেকে নগর উন্নয়নে বাড়তি আয়ের ওপর জোর দেব। আর শাহাদাত বলেছেন, চট্টগ্রাম নগরীকে অল্প সময়ে বিশ্বের অন্যতম নগরীতে পরিণত করার জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে পাহাড়, নদী, সমুদ্র, বিরল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আলোকে পর্যটন শিল্পের বিকাশ সাধন করে একটি আধুনিক আকর্ষণীয় পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
উভয় প্রার্থী স্বাস্থ্যখাতকেও সমান গুরুত্ব দিয়েছেন। রেজাউল প্রতি ওয়ার্ডে একটি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র গড়ে তুলতে চান; যাতে অসচ্ছল নাগরিকরা বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা পায়। এছাড়া পূর্ণাঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও ৫০০ বেডের হাসপাতাল গড়ে তোলার স্বপ্নের কথাও আছে। শাহাদাত বলেছেন, নির্বাচিত হলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পর্যায়ক্রমে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগসহ মেমন মাতৃসদন এবং চসিক জেনারেল হাসপাতালকে আধুনিকায়ন ও শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। কোভিড-১৯ নিয়েও দুজনের চিন্তা আছে।
নগরীর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হোল্ডিং ট্যাক্সের বিষয়ে উভয় প্রার্থী সমান গুরুত্ব দিয়েছেন। যৌক্তিকভাবে গৃহকর নির্ধারণ করা হবে এবং সরলীকরণসহ সহনীয় পর্যায়ে রাখার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রেজাউল। আর শাহাদাত ৯টি খাতে গৃহকর সহনীয় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এছাড়া নগর পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি উভয়ে গুরুত্বের সাথে ইশতেহারে যুক্ত করেছেন। শিক্ষায়ও গুরুত্ব দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন উভয় প্রার্থী।