যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের দীর্ঘ ঐতিহ্য অনুযায়ী অধিকাংশ অঙ্গরাজ্যের ভোটাররা প্রতিটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনো একটি দলকেই ধারাবাহিকভাবে বেশি ভোট দিয়ে আসছেন। অর্থাৎ ওই অঙ্গরাজ্যের সব ইলেকটোরাল ভোট নিয়মিতভাবে একটি দলের প্রার্থীই পেয়ে আসছেন। এভাবে এসব রাজ্য হয় রিপাবলিকান অথবা ডেমোক্র্যাট পার্টির ভোট ব্যাংক হিসেবে ভূমিকা রেখে আসছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এ ধরনের অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে যেগুলো ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থীকে বরাবর সমর্থন জানিয়ে আসছে, সেগুলো ‘নীল’ অঙ্গরাজ্য বলে পরিচিতি পেয়েছে, আর রিপাবলিকান পার্টিকে সমর্থন জানিয়ে আসা অঙ্গরাজ্যগুলো ‘লাল’। যেমন, সবচেয়ে বেশি ইলেকটোরাল ভোট থাকা ক্যালিফোর্নিয়া নীল অঙ্গরাজ্য, অর্থাৎ এখানে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জয়ী হবে এমনটি ধরে নেওয়া যায়। আবার ইলেকটোরাল ভোট সংখ্যায় এর পরে থাকা টেঙাস লাল অঙ্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত, অর্থাৎ এখানের সবগুলো ইলেকটোরাল ভোট রিপাবলিকান প্রার্থীর পক্ষেই যায়।
রিপাবলিকান বা ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে নামা মাত্রই ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত অঙ্গরাজ্যগুলোর ইলেকটোরাল ভোট তারা পাচ্ছেন বলে নিশ্চিতভাবে ধরে নেওয়া হয়। যেমন, এবারের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিস ২২৬টি ইলেকটোরাল ভোট আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ২১৯টি ইলেকটোরাল ভোট পেতে যাচ্ছেন বলে ভবিষ্যদ্বাণী করছে সংবাদ মাধ্যম সিএনএন।
সিএনএনের হিসাব অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে হোয়াইট হাউজে যেতে হলে হ্যারিসকে আরও অন্তত ৪৪টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেতে হবে, এর বিপরীতে জয় নিশ্চিত করতে হলে ট্রাম্পকে পেতে হবে আরও ৫১টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট। এই ইলেকটোরাল কলেজ ভোটগুলো প্রার্থীদের ভোটব্যাংকের বাইরের অঙ্গরাজ্যগুলো থেকে আসে। এসব অঙ্গরাজ্যর কোনটির সমর্থন কোন প্রার্থীর পক্ষে যাবে তা জরিপ বা অন্য কোনোভাবেই আগাম বলে দেওয়া যায় না।
যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাতটি অঙ্গরাজ্যকে দোদুল্যমান হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে পেনসিলভেইনিয়া, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, মিশিগান, অ্যারিজোনা, উইসকনসিন ও নেভাডা। এসব দোদুল্যামান অঙ্গরাজ্যের মোট ইলেকটোরাল ভোট ৯৩টি। এরমধ্যে পেনসিলভেইনিয়ার ভোট ১৯টি, জর্জিয়ার ও নর্থ ক্যারোলাইনার ১৬, মিশিগানের ১৫, অ্যারিজোনার ১১, উইসকনসিনের ১০ ও নেভাডার ৬টি। এসব রাজ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের নজির রয়েছে। আবার এসব রাজ্য একবার ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থীর পক্ষে যায় তো আরেকবার যায় রিপাবলিকান প্রার্থীর পক্ষে। তাই সাধারণভাবে এসব রাজ্যকে সুইং স্টেট বা দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যও বলা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ইলেকটোরাল ভোট নির্ভর নির্বাচনী পদ্ধতির কারণে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বড় অঙ্গরাজ্যগুলোর তুলনায় এসব অঙ্গরাজ্য বেশি প্রভাব রাখে।