ইলিশের উপযোগী পরিবেশ রক্ষায় বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে

| শনিবার , ১৯ জুলাই, ২০২৫ at ১০:৪১ পূর্বাহ্ণ

ভরা মৌসুমেও অনেক জায়গায় ইলিশ মাছের আকাল দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে যেখানে ইলিশ বেশি পাওয়া যায়, সেখানেও চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ কম। এর কারণ হিসেবে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা, দূষণ, এবং প্রজনন ক্ষেত্র কমে যাওয়া ইত্যাদি বিষয়গুলি উল্লেখ করা হয়েছে। গত ১৫ জুলাই দৈনিক আজাদীতে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ইলিশের ভরা মৌসুম হওয়া সত্ত্বেও বাজারে পর্যাপ্ত ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না এবং দামও অনেক বেশি। এতে বলা হয়েছে, বৈশাখ থেকে আশ্বিনছয় মাস ইলিশের ভরা মৌসুম। কাগজকলমের হিসাব অনুযায়ী মৌসুমের অর্ধেকের বেশি শেষ হতে চলেছে। বিগত বছরগুলোর এ সময়টাতে রাজবাড়ির যমুনা ও পদ্মা নদীতে পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়লেও এবারের চিত্র ভিন্ন। নদীর মোহনায় জাল ফেলেও দেখা মিলছে না ইলিশের। এতে বিপাকে পড়েছেন মৎস্যজীবীরা। অনেকেই পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন। জেলেরা বলছেন, স্বাদ বিবেচনায় গোয়ালন্দের ইলিশের খ্যাতি রয়েছে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে বর্ষাকাল। এ সময় পদ্মা ও যমুনার মোহনায় ইলিশের অবাধ বিচরণের কথা। কিন্তু এ বছর পদ্মায় ইলিশের দেখা নেই বললেই চলে। দিনের পর দিন জাল ফেলেও হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে।

তাঁরা বলেন, ‘গত বছর বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই যে পরিমাণ ইলিশ মাছ ছিল, এবার তার কিছুই নেই। রাতভর নদীতে জাল ফেলেও নৌকার খরচ উঠছে না। অনেকেই আগে ইলিশ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু নদীতে তেমন মাছ না থাকায় তারা খেতখামারে কাজ করছেন।’

এদিকে পত্রিকার আরেক খবরে বলা হয়েছে, গত কয়েক বছর ধরে রেকর্ড পরিমাণ ইলিশ উৎপাদন হলেও ভারতের বাজারে এ মাছের রপ্তানি উদ্বেগজনক হারে কমছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, ২০২৪২৫ অর্থবছরে ভারতে ইলিশ রপ্তানির মূল্য মাত্র ৫৩ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার, যা ২০২০২১ অর্থবছরের ১ কোটি ৬৪ লাখ ৩০ হাজার ডলারের তুলনায় প্রায় ৬৭ শতাংশ কম। গত তিন অর্থবছর ধরেই রপ্তানির এই ধস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ২০২১২২ অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১ কোটি ২২ লাখ ৭০ হাজার ডলার, যা পরের বছর সামান্য বেড়ে হয় ১ কোটি ২৮ লাখ ৩০ হাজার ডলার। ২০২৩২৪ সালে তা নেমে আসে ৭৯ লাখ ডলারে এবং সর্বশেষে ৫৩ লাখ ৭০ হাজার ডলারে এসে ঠেকেছে। অন্যদিকে ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ অগ্রগতি অর্জন করেছে। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২১৩ অর্থবছরে ৩ লাখ ৫১ হাজার টন ইলিশ উৎপাদনের বিপরীতে ২০২২২৩ অর্থবছরে উৎপাদন দাঁড়ায় ৫ লাখ ৭১ হাজার টনে। সরকার ঘোষিত অভয়াশ্রম, প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা নিষিদ্ধ এবং জেলেদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রমের মাধ্যমে এই বৃদ্ধির কৃতিত্ব ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, উৎপাদন বাড়লেও রপ্তানিতে রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। একদিকে দেশে চাহিদা বাড়ছে অন্যদিকে রপ্তানির অনুমতির জটিলতা। এ ছাড়াও পরিবহন ও শীতলীকরণ ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে বিদ্যমান অস্থির বাণিজ্যনীতি। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, সরকারের উচিত ইলিশ রপ্তানির জন্য একটি পূর্বানুমেয় ও স্থায়ী কাঠামো তৈরি করা। এতে দীর্ঘমেয়াদি রপ্তানি পরিকল্পনা, শীতল শৃঙ্খল (কোল্ড চেইন) ব্যবস্থা, নির্ভরযোগ্য বাণিজ্য চুক্তি, মজুত পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে পারে। কারণ শুধু সংস্কৃতি নয়, অর্থনীতিতেও ইলিশের অবদান গুরুত্বপূর্ণ। এটি দেশের মোট মাছ উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশ এবং মোট জিডিপির ১ শতাংশের বেশি জোগান দেয়।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভরা মৌসুমেও ইলিশের দাম চড়া, এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণ এবং মানবসৃষ্ট কারণেও ইলিশের প্রজননে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। উৎপাদন বাড়াতে হলে ইলিশের উপযোগী পরিবেশ রক্ষায় বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষায় এবং নদীর পানির গুণগত মান ঠিক রেখে ইলিশের আবাস ও চলাচলের পথকে মসৃণ করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলাদেশে স্টারলিংক চালু, কার্যকর সহায়তা পাওয়ায় প্রশংসা করলেন স্পেসএক্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬