স্থল, নৌ ও সমুদ্র পথে সর্বত্র ইয়াবার চালান অব্যাহত রয়েছে। মিয়ানমারে উৎপাদিত মরণনেশা এ ট্যাবলেটের গন্তব্য একমাত্র বাংলাদেশ। বর্তমানে ইয়াবার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সোনা চোরাচালান চলছে দেদার। এর নেপথ্যেও রয়েছে ইয়াবার গডফাদাররা। ইয়াবার মতো সোনা চোরাচালানে ক্যারিয়ার হিসেবে জড়িত অধিকাংশই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্য।
সীমান্তের বাংলাদেশী অংশ সিল করা আছে বহু আগে থেকেই যাতে নতুন করে কোনো রোহিঙ্গা প্রবেশ করতে না পারে। সেটা অনেকাংশে রোধ হয়েছে। কিন্তু ইয়াবা চোরাচালান রোধ করা যাচ্ছে না। এখন নতুন রুট খোলা হয়েছে সোনা চোরাচালানের। বাংলাদেশে প্রতি ভরি সোনার মূল্য যখন যা–ই থাকুক না কেন, মিয়ানমারে এর মূল্য সব সময় এদেশের চেয়ে কম। ফলে ইয়াবা কারবারীরা এখন সোনা চোরাচালানের দিকেও ঝুঁকেছে। সোনার বার ছাড়াও অনেক সময় তৈরি করা অলঙ্কারও চোরাইপথে দেশে আনছে। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার টেকনাফ–কক্সবাজার সড়কে অভিযান চালিয়ে কোস্ট গার্ডের একটি বিশেষ টিম চারটি স্বর্ণের বারসহ মো. আরাফাত নামে এক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে গ্রেপ্তার করে।
কোস্ট গার্ড সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার খন্দকার মুনিফ তকি আজাদীকে জানান, মিয়ানমার থেকে স্বর্ণের একটি চালান অবৈধভাবে টেকনাফ স্থলবন্দরে প্রবেশ করেছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে কোস্ট গার্ডের একটি টিম টেকনাফ–কঙবাজার মহাসড়কে অভিযান চালিয়ে ৬৬৩.৯৬ গ্রাম ওজনের ৪টি স্বর্ণের বারসহ আরাফাতকে (৩৫) গ্রেপ্তার করে। সে জাদিমুড়া শরণার্থী ক্যাম্প–২৭ এর একজন রোহিঙ্গা শরণার্থী।
এর আগে কর্ণফুলী থানা এলাকা থেকে সাড়ে ৯ কেজি সোনার চালান জব্দ করে সিএমপির ডিবি (বন্দর ও পশ্চিম) বিভাগ। এ মামলার তদন্ত
নিয়ে উপ–কমিশনার আলী হোসেন জানান, মিয়ানমার থেকেই সোনার চালানটি এসেছে। এ চালানের পরবর্তী গন্তব্য ছিল চট্টগ্রামের রিয়াজ উদ্দিন বাজার। এ চালানের মূলহোতা কারা এবং শেষ গন্তব্য কোথায় ছিল তা জানার চেষ্টা চলছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, মিয়ানমারের একটি কালোবাজারি চক্রের সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলেই বাংলাদেশের চোরাকারবারী চক্র পাচার করছে স্বর্ণের বারের চালান। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশি লোকজন মিলে স্বর্ণ পাচারের
সিন্ডিকেটও গড়েছে। আবার মিয়ানমার থেকে পাচার হয়ে আসা ইয়াবা ও স্বর্ণের চালান লুটপাটেও সক্রিয় রয়েছে সীমান্তের বেশ কিছু সিন্ডিকেট।
অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, লুটপাটকারী এ সিন্ডিকেটের লোকজন প্রথমে পাচারকারীদের সাথে সখ্য গড়ে কমিশন দাবি করে। আশানুরূপ কমিশন না পেলে তারা সীমান্তের আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত সদস্যদের তথ্য দিয়ে চালান ধরিয়ে দেয়। নতুবা সুযোগ বুঝে সীমান্তের লুটপাটকারী সিন্ডিকেট ইয়াবা হোক অথবা স্বর্ণ হোক পুরো চালানটাই গায়েব করে ফেলে। এসব অভিযোগ সীমান্তবর্তী
এলাকার ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী লোকজনের। পুরো চক্রের সাথে রাজনৈতিক প্রভাবশালী ও স্থানীয় প্রশাসনের কিছু অসাধু ব্যক্তির সুসম্পর্ক রয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। যে কারণে সীমান্তবর্তী এলাকায় চোরাচালানসহ অপরাধ বাড়ছে। আবার অস্ত্র এবং ইয়াবার মতো মাদকের বিনিময় মূল্য হিসাবেও পাচারকৃত সোনা ব্যবহারের অভিযোগ ওঠায় নতুন করে অনুসন্ধানে নামছে পুলিশ।