ইমো অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে চলছে প্রতারণা, চক্রের পাঁচ সদস্য গ্রেপ্তার

ঋত্বিক নয়ন | সোমবার , ৩১ জুলাই, ২০২৩ at ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ

ইমো অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। কেউ হয়তো ভাগ্য বা বুদ্ধির জোরে বেঁচে গেলেও অনেকে সরলতার কারণে ফাঁদে পা দিচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন জেলায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ইমো একাউন্ট হ্যাকিং ও প্রতারক চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের সাইবার ইউনিট। এ সময় তাদের কাছ থেকে অপরাধ কার্যক্রমে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও সিম জব্দ করা হয়। সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার আসিফ মহিউদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

এ চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার আসিফ মহিউদ্দিন আজাদীকে জানান, অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি/ব্যক্তিরা ইমো একাউন্ট হ্যাক করে একাউন্টের কন্টাক্ট লিস্টে থাকা ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে বিকাশ এবং নগদ একাউন্ট ব্যবহার করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এক ভুক্তভোগী সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগে এ সংক্রান্ত অভিযোগ করেন। তাকে চকবাজার থানায় মামলা দায়ের করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

ভুক্তভোগী গত ২৩ জুলাই সিএমপির চকবাজার থানায় মামলা দায়ের করলে তার তদন্তভার সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের সাইবার ইউনিটের ওপর ন্যস্ত হয়। সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের সাইবার ইউনিটের একটি চৌকস টিম উক্ত মামলার রহস্য উদঘাটনে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অপরাধীদের গ্রেপ্তারে অভিযানে নামে। পাবনা জেলার ঈশ্বরদী থানা এলাকা থেকে প্রথমে মো. আরিফুল ইসলামকে (৩১) গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যমতে পাবনা জেলার ঈশ্বরদী থানা এলাকা থেকে মো. শিমুল হোসেনকে (২২) গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্য মতে নাটোর জেলার লালপুর থানা এলাকা হতে মো. সাহাবুল ইসলাম প্রকাশ শাহাবুল (৩৯), মো. ইব্রাহিম হোসেন প্রকাশ বাপ্পী (২১) এবং মো. হৃদয় হাসান প্রকাশ শাহীনকে (২৩) গ্রেপ্তার করা হয়।

চক্রের সদস্যরা ইমোর মাধ্যমে প্রবাসীদের নম্বর সংগ্রহ করে পরে একটি ওয়ানটাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) পাঠায়। নানা অজুহাত দেখিয়ে কৌশলে ওটিপি নিয়ে সেই ইমো অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে। তারপর ত্রুত সেই অ্যাকাউন্ট থেকে ঘনিষ্ঠজনদের কল বা মেসেজ দিয়ে বিপদের কথা বলে আর্থিক সহায়তা চেয়ে থাকে। এ ধরনের চক্রের ফাঁদে পড়ে দেশে থাকা অনেক নারীও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হয়েছেন। ইমোতে গোপন ছবি ও রেকর্ড করা কণ্ঠ ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে প্রতারকরা হাতিয়ে নিচ্ছে তাদের কাছে বিদেশ থেকে পাঠানো কষ্টার্জিত অর্থ। জিজ্ঞাসাবাদে চক্রের সদস্যরা জানায়, সরল প্রবাসীদের সঙ্গে প্রতারণা করতে ব্যবহার করা হয় নানা কৌশল। বাংলাদেশ দূতাবাসের নাম ব্যবহার সেগুলোর মধ্যে একটি। দূতাবাসের নামে ইমো আইডি ব্যবহার করে কিংবা দূতাবাসের কর্মকর্তা পরিচয়ে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা চালায় প্রতারক চক্র।

হ্যাকিং চক্রের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, এ পর্যন্ত তারা ইমো একাউন্ট হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে প্রতারণাপূর্বক বিকাশ, নগদ একাউন্ট ব্যবহার করে দেশ ও বিদেশের অনেক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।

এ ধরনের প্রতারণা থেকে রক্ষা পাওয়ার বিষয়ে সচেতনতার বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন সিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ। তারা স্মার্টফোনের পাসওয়ার্ড বা কোড নম্বর কারও সঙ্গে শেয়ার না করা, নিশ্চিত না হয়ে টাকা পাঠানোর ব্যাপারে নিজের পরিবার ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনদের সচেতন করার জন্য প্রবাসীদের প্রতি অনুরোধ জানান। তারা আরো বলেন, দেশের কোনো ইমোর মাধ্যমেও যদি এমন মেসেজ আসে তাহলেও অন্য কোনো উপায়ে প্রকৃত ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। তাহলেই সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে এবং প্রতারণা থেকেও রক্ষা পাওয়া যাবে।

এছাড়া কেউ কল দিলে বা মেসেজের মাধ্যমে কোনো লিংক পাঠালে লিংকে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইমো অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে কি না বা হ্যাক হলে হ্যাকারের তথ্য ‘অ্যাকাউন্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি’ অপশনে ঢুকে ম্যানেজ ডিভাইসে ক্লিক করলেই জানা সম্ভব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডেঙ্গুর টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত কখন
পরবর্তী নিবন্ধবেতন-ভাতা ও পেনশনে যাবে ৭৮ ভাগ