কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে বিরল প্রজাতির পাখি ইমুর ঘরে দ্বিতীয়বার তিনটি বাচ্চা ফুটেছে। পার্ক প্রতিষ্ঠার পর ইমু পাখির প্রজনন সফলতায় কর্তৃপক্ষ খুশি। সদ্য ফোটা বাচ্চা তিনটিকে বড় করে তুলতে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রয়েছে দুই কর্মচারী। বাচ্চাগুলোকে নিয়ে খুনসুটিতে মেতেছে বেষ্টনীতে থাকা স্ত্রী প্রজাতির দুটি এবং বিপরীত লিঙ্গের একটি ইমু। সরেজমিনে দেখা গেছে, বেস্টনীর চারপাশে বানরের বিচরণ থাকায় তাদের কাছ থেকে রক্ষায় এক মুহূর্তের জন্যও বাচ্চাগুলোকে চোখের আড়াল করছে না এসব ইমু পাখি। গতকাল রোববার থেকে মা-বাবার সঙ্গে বেষ্টনীতে বাচ্চাগুলোকে ঘুরতে দেখে দর্শনার্থীরাও উপভোগ করেছেন। বাচ্চা ইমুগুলো শিশুদেরও নজর কেড়েছে।
পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিষ্ঠার পর স্ত্রী প্রজাতির একটি ইমু পাখি পার্কে আনা হয়। পরবর্তীতে আনা হয় আরো দুটি। যৌথবাহিনীর অভিযানে সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর বাড়ি থেকে বিপরীত লিঙ্গের দুটি ইমু জব্দ করা হয়েছিল। সেই দুটিসহ পার্কে ইমুর সংখ্যা দাঁড়ায় তিনে। ইমুর প্রজনন বাড়াতে পার্ক কর্তৃপক্ষের চেষ্টার ফসল হিসেবে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ইমু পাখির একটি বাচ্চা ফোটে। এর দুই বছর এক মাস পর তিনটি ফুটফুটে বাচ্চা ফুটল। একে সাফারি পার্কের ইতিহাসে বড় সফলতা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রামের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) এবং সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক আবু নাছের মোহাম্মদ ইয়াছিন নেওয়াজ আজাদীকে বলেন, প্রতি বছর ইমু পাখি একসঙ্গে ৭-৮টি করে ডিম দেয়। কিন্তু বারবার সব ডিম নষ্ট হয়ে যায়। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে সাতটি ডিম দেয়। এর মধ্যে মাত্র একটি বাচ্চা ফোটাতে পেরেছিল। তবে আশার কথা, সপ্তাহখানেক আগে এবার একসঙ্গে তিনটি বাচ্চা ফোটাতে পেরেছে ইমু পাখি।
সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, ইমু পাখি সাধারণত সর্বভুক প্রজাতির পাখি। এরা কলমি শাক, কচি শাক, পাহাড়ি লতা-গুল্ম, কীট-পতঙ্গ, পোল্ট্রি ফিড, গম, ভুট্টা ও চাল ভাঙা খেতে অভ্যস্ত। এরা পাখির মধ্যে বেশ শক্তিশালী। পানির কাছাকাছি ঝোপঝাড়মুক্ত উন্মুক্ত ঘাসভূমি এদের আবাসস্থল। ইমুর উচ্চতা ৫ থেকে সাড়ে ৬ ফুট। একটি প্রাপ্তবয়স্ক ইমুর ওজন ৩৮ থেকে ৬০ কেজি। এদের আয়ুষ্কাল প্রকৃতিতে ৫-১০ বছর, আবদ্ধ অবস্থায় ১২-২০ বছর।
তিনি বলেন, ইমু ঘণ্টায় প্রায় ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত দৌড়াতে পারে। এদের লাথি খেলে অনেক সময় মানুষ মারাও যায়। তাই সতর্কতার সাথে এদের পরিচর্যা করতে হয়।