পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তেহরিক–ই–ইনসাফ (পিটিআই) দলের চেয়ারম্যান ইমরান খান গ্রেপ্তার হয়েছেন। তোষাখানা মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে আদালত শাস্তি ঘোষণার পরই গ্রেপ্তার করা হয় পাকিস্তানের প্রাক্তন এ প্রধানমন্ত্রীকে। গতকাল শনিবার ইসলামাবাদের একটি আদালত ইমরানকে তিন বছরের জেলের সাজা দিয়েছে। পাক আইন অনুযায়ী, আদালতের এই রায়ের ফলে আগামী পাঁচ বছর ভোটে লড়তে পারবেন না তিনি। পাশাপাশি তার এক লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে ইমরান খানের আইনজীবী ইনতাযার হুসেইন জানিয়েছেন, এ রায়ের কিছু পরই ইমরান খানকে লাহোরের জামান পার্ক এলাকার বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে পাঞ্জাব পুলিশ। তেহরিক–ই–ইনসাফ এক টুইট বার্তায় জানায়, তাকে কোট লাখপাত কারাগারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
রায় ঘোষণার সময় ইসলামাবাদের ট্রায়াল কোর্টে উপস্থিত ছিলেন না ইমরান। তার আইনজীবীরাও উপস্থিত ছিলেন না। ইমরানের অনুপস্থিতিতেই তোষাখানা মামলার রায়ে তাকে দণ্ড দেয় আদালত। রায়ে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (এডিএসজে) হুমায়ুন দিলওয়ার জানান, এ মামলায় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। ইমরান খান সচেতনভাবে তোষাখানার উপহার নিয়ে ইসিপির কাছে বিস্তারিত মিথ্যা তথ্য পেশ করেছেন এবং অসৎ চর্চার জন্য তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। ইমরানকে পাকিস্তানের নির্বাচনী আইনের ১৭৪ ধারার অধীনে এ দণ্ড দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানের ইংরেজি ভাষার দৈনিক ডন জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এই রায়ের শুনানি হওয়ার পর বিচারক ইমরানের আইনজীবীদের অনুপস্থিতির জন্য বারবার অসন্তোষ জানান। বিবাদীর কৌঁসুলিকে আদালতে উপস্থিত হওয়ার জন্য তিনি অনেকগুলো সুযোগ দেন। পরে দুপুর সাড়ে ১২টায় তিনি রায় ঘোষণা করেন। এর প্রায় ২৯ মিনিট পর ইমরানকে গ্রেপ্তার করার খবর পাওয়া যায়।
ইমরানের আইনজীবী পাঞ্জোথা জানিয়েছেন, ইসলামাবাদের জেলা আদালতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করছেন তারা। এক বিবৃতিতে পিটিআই জানিয়েছে, তারা এরইমধ্যে সুপ্রিম কোর্টে আরেকটি আপিল আবেদন করেছে।
চলতি বছরেই পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা। বিভিন্ন জনমত সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছিল, মুসলিম নওয়াজ–পাকিস্তান পিপলস পার্টির জোট সরকারের আমলে বেহাল আর্থিক পরিস্থিতির কারণে আবার জনপ্রিয়তা বাড়ছে ইমরানের। কিন্তু ভোটের আগে এই রায় নির্বাচনী ‘পিচে’ পাক ক্রিকেট টিমের প্রাক্তন অধিনায়কের ‘প্রত্যাবর্তন’কে অনিশ্চিত করে তুলল বলেই মনে করা হচ্ছে।
তোষাখানা বিতর্ক শুরু হয় ২০২১ সালে, ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন ইমরানকে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। কমিশনের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইমরান গত অক্টোবরে ইসলামাবাদ হাই কোর্টে আবেদন জানালেও আদালত তা খারিজ করে দিয়ে আদালতের বিচার প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হতে বলেছিল তাকে। এর পর গত মে মাসে ইসলামাবাদ পুলিশ লাইন্সের বিশেষ আদালত ইমরানকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল।